কান্দিল বালোচের কথা মনে আছে? ২০১৬-য় পাকিস্তানের সবচেয়ে সাড়া জাগানো হত্যাকাণ্ড। পরিবারের সুনাম নষ্ট করার অভিযোগে (অনার কিলিং) সোশ্যাল মিডিয়া তারকা ২৬ বছরের কান্দিল বালোচকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করেন তাঁরই আপন ভাই মহম্মদ ওয়াসিম। কান্দিলের ‘দোষ’ ছিল, নেটমাধ্যমে তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠ এবং যে কোনও বিষয়ে স্পষ্ট মত দেওয়ার অভ্যাস। ওয়াসিমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়েছিল। যদিও সোমবার ৬ বছর জেল খেটেই খালাস পেলেন তিনি।

কান্দিলের ভাই মহম্মদ ওয়াসিমকে গ্রেফতার করার পর তাঁকে যাবজ্জীবনের সাজা শোনায় আদালত। বস্তুত, এই ঘটনা আরও তোলপাড় ফেলেছিল, ওয়াসিমের গ্রেফতারির পর। সেই সময় ওয়াসিম স্পষ্ট জানিয়েছিল, বোনকে খুন করেও সে অনুতপ্ত নয় মোটেই। তাঁর বক্তব্য ছিল, পরিবারের সুনাম যে নষ্ট করবে, তাঁকে এ ভাবেই শাস্তি পেতে হবে। প্রয়োজনে, আবার সে অস্ত্র ধরবে। বোনকে খুন করার কারণ, বোনের ব্যবহার দিনকে দিন তাঁর কাছে অসহ্য হয়ে উঠছিল।
সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে ওয়াসিমের আইনজীবী জানিয়েছেন, মুলতানের একটি আদালত তাঁর মক্কেলকে বেকসুর খালাস করার রায় দিয়েছে। যদিও আদালতের রায় এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।

২০১৬-য় কান্দিলের খুনের ঘটনায় গোটা দুনিয়ায় সাড়া পড়ে গিয়েছিল। পারিবারিক সম্মানরক্ষার অজুহাতে এ ভাবে প্রাণবন্ত এক তরুণীকে খুনের দায়ে ধৃত ভাই ওয়াসিমের শাস্তির পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসা করানোর দাবি উঠেছিল। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এই নৃশংস দৃষ্টিভঙ্গির নিন্দা হয়েছিল। আদালত ওয়াসিমের যাবজ্জীবনের রায় দিয়েছিল। কিন্তু ৬ বছর জেল খেটেই মুক্তি পেলেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে ওয়াসিমের মানসিক চিকিৎসা হয়েছিল কি? জেল থেকে বেরিয়ে তাঁর মানসিকতার কোনও বদল দেখা যাবে কি?
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ছেলেকে ক্ষমা করে দেওয়ার আর্জি নিয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন খুন হওয়া কান্দিল ওয়াসিমের বাবা মাই। তাতেই কি যাবজ্জীবন বদলে গেল মুক্তিতে? জানা যায়নি তা। এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ জেল থেকে মুক্ত পাবেন ওয়াসিম।
কান্দিল বেলুচ হত্যা মামলা ফাঁস হল কীভাবে?
২৬ বছর বয়সী পাকিস্তানি মডেল কান্দিল বালোচ নিজ দেশের গভীর পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে লিখতেন ছবি পোস্ট করতেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। তিনি ঘন ঘনমৃত্যুর হুমকির সম্মুখীন হতেন তবুও তিনি ছবি ও ভিডিও পোস্ট করা অব্যাহত রেখেছিলেন। কান্দিল বালোচ যদিও তার ওই সোশ্যাল মিডিয়া খ্যাতি দিয়ে নিজের মডেলিং ক্যারিয়ার তৈরি করেছিলেন কিন্তু অনেক পাকিস্তানিদের কাছে ঘৃণাবার্তা পেতেন।
মুসলিমদের ধর্মগুরু মুফতি আব্দুল কাউইয়েকে নিয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করার পর তার ভাই তাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছিলেন। কান্দিল বালোচের হত্যাকাণ্ড পাকিস্তান জুড়ে প্রতিবাদের সূত্রপাত ঘটায়। ওই হত্যার ৩ মাস পর, পাকিস্তান পার্লামেন্ট অনার কিলিং এর জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বাধ্যতামূলক করে নতুন আইন পাস করে।
কেন ও কীভাবে খালাস পেল খুনী ভাই?
ইসলামিক শরীয়া আইন মতে নিহতের পরিবার চাইলে খুনীকে ক্ষমা করতে পারে। শরীয়ার ওই ধারা অনুমতি দেয় ক্ষমার। কান্দিল বালোচ হত্যায় নিহতের পরিবারই হল খুনীর পরিবার। যদিও কান্দিল বালোচের বাবা-মা প্রাথমিকভাবে জোর দিয়েছিলেন যে তারা ছেলেকে রেহাই দিতে চান না। কিন্তু পরে তারা তাদের মত পরিবর্তন করেন।
মুহাম্মদ ওয়াসিমের মায়ের একজন আইনজীবী বলেছেন যে তিনি তাকে ক্ষমা করার জন্য ‘তার সম্মতি’ দিয়েছেন। তবে পাকিস্তানের আইনে সাম্প্রতিক পরিবর্তনের ফলে অপরাধীরা আর ভিকটিমদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইতে পারবে না।
বর্তমান আইনে হত্যা ‘সম্মানের অপরাধ’ না ‘অপরাধ’ তা শুধুমাত্র বিচারকই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মানে খুনিরা ক্ষমা পাওয়ার জন্য ভিকটিমের পরিবারের দ্বারস্থ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। খুনী ভাইয়ের আইনজীবীরা বলছেন, প্রধান সাক্ষীরা তাদের সাক্ষ্য প্রত্যাহার করায় বালোচের ভাইকে খালাস দেওয়া হয়েছে।