মাত্র ৯ মাস হয়েছিল আফরোজার বিয়ের। আফরোজার বাবা মা ভেবেছিলেন শিক্ষিত ছেলে শিক্ষিত পরিবার। মেয়ের জন্য ভালোই হবে। সেই শশ্বশুরবাড়িতে নির্দয়ভাবে নির্যাতনের পর আফরোজাকে পুঁতে রেখে বাইরে জানানো হয় ‘সে পরকীয়া করে পালিয়ে গেছে’। ৬দিন পর মাটি খুঁড়ে লাশ তোলা হলেও এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এমন নির্মম ঘটনার পর আফরোজা খুনের বিচার চেয়ে ব্যানার হাতে সড়কে দাঁড়িয়েছেন মহেশখালীর নারীরা।
সোমবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় আফরোজার খুনিদের বিচার চেয়ে মানবন্ধন ও প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন গ্রামের শতাধিক সাধারণ গৃহবধূরাও। মহেশখালী উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরাম ও হোয়ানক ইউনিয়ন এলাকাবাসীদের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ওই মানববন্ধনে প্রায় শতাধিক নারী ব্যানার-ফেস্টুন হাতে উপস্থিত হন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নারীরা বলেছেন, ১৭ অক্টোবর আফরোজার মৃতদেহ উদ্ধারের আগ পর্যন্ত প্রচার করা হয়েছে হয়েছে আফরোজা পরকীয়া প্রেম করে পালিয়ে গেছে। আফরোজার বাবা-মা বা ভাইবোন কাউকে দুই মিনিটের বেশি সময় ঘটনাস্থলে থাকতে দেওয়া হয়নি। মাত্র নয় মাসের বিয়ের মধ্যেই মেয়েটিকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করেছে ওরা। এখন তারা দলীয় ক্ষমতা প্রভাব বিস্তার করছে।
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী আবুল বশর পারভেজের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মিনুয়ারা ছৈয়দ, সাধারণ সম্পাদক মিনুয়ারা মিনু, অর্থসম্পাদক মিনুয়ারা বেগম, নিহত আফরোজার মা মনোয়ারা বেগম, বোন শারমিন আকতার ও রুমি আকতার, ভাই মিজান ও এমরান, আওয়ামীলীগ নেতা আবদুচ্ছালাম বাঙ্গালী, উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মো. ইউনুছ, যুবলীগ নেতা মহিউদ্দীন, মহেশখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছালামত উল্লাহ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অপরাধীরা যেন দলীয় আশ্রয় না পায়। তাদের একমাত্র পরিচয় তারা অপরাধী। আফরোজাকে নৃসংশভাবে হত্যায় জড়িত শ্বশুরবাড়ির লোকদের দ্রুত সময়ের গ্রেপ্তার করতে হবে। নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ গুম করার মত জঘন্য ঘটনা ধামাচাপা দিতে যারা সিন্ডিকেট করে কাজ করেছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। আফরোজাকে গুম করে পরকিয়া করে পালিয়েছে বলে প্রচার করে উল্টো আফরোজার পরিবারকে ফাঁসানের নীল নকশা অংকন করেছিল খুনিরা। কিন্তু আফরোজার পরিবারের চাপের কারণে তা সম্ভব হয়নি। খুনিদের কাউকে বাদ দিলে বা গ্রেপ্তারে কালক্ষেপন করলে কঠোর কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে বলে তারা জানান।
এদিকে নিহত আফরোজার মা, ভাই ও বোনরা বলেন, বিয়ের নয় মাসের মাথায় তার স্বামী বাপ্পী, শ্বশুর হাসান বশির, শ্বাশুড়ি রোকেয়া হাসানম ভাসুর হাসান আরিফ ও হাসান রাসেলসহ সবাই মিলে পরিকল্পিতভাবে আফরোজাকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে খুনিরা লাশ খুঁজে না পেতে যাবতীয় পরিকল্পনাও করে। নিখোঁজের দিন থেকে লাশ পাওয়ার এই ৬ দিনের মধ্যে ঘাতক শ্বশুর বাড়ির লোকজন আফরোজার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে। আফরোজা খুনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় কন্যাহারা পরিবারটি।