তরী খুঁজে পায়না গল্প আর বাস্তব জীবনের মাঝে কী ফারাক আছে! খুুুঁজে পায় না কোথায় সেই বিচ্যুতি। কেন ঠিকঠাক সব মিলে যায় না?
হয়ত বা বৈরী পরিবেশে জীবনের সাথে লড়াই করতে করতে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করেনি বলে এতদিন সে জানতে পারেনি তারও জীবনের গল্পটা অসমাপ্ত থাকবে। একটা ভুল সংসার একটা ভুল প্রেমকে ভুলতে ভুলতে সে চিনে নিয়েছে জীবনের বাঁকগুলো।
শুধু মনে হয় তার জীবনের না বলা কথাগুলো না জেনে সবাই কেন তাকে বলে— সংসার করতে গেলে অনেক কিছু সইতে হয়। কিন্ত যার বিবেকবোধ আছে সে কি করে মেনে নেবে তার এ অপমান? সে তো বলতে পারে না আজ তোমরা যে যৌন সন্ত্রাস বা নির্যাতন নিয়ে প্রতিবাদ করছ, তোমরা কি জানো কত নারী নিরবে এমন নির্যাতনে শিকার হয়? শুধু ওই হাসি হাসি সংসার জীবনটা টিকিয়ে রাখতে?
তরী পারেনি কারণ সে একজন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষ। তার অভিমানী মনটা বড় বেশি আবেগী। তাই ভালোবাসা শব্দটা জীবনের প্রথম প্রহরেই কাল বৈশাখী ঝড়ের মতো হৃদয়ের সবটুকু উচ্ছাসকে বান জলে ভাসিয়ে দিয়ে তাকে শূন্য করেছে। সেই থেকে মনের দুয়ারে কড়া নাড়ার শব্দটাকে আর শুনতে চায়নি আর। জীবনের পথটাকে নিজের সংগ্রাম দিয়ে একটু একটু করে তৈরি করতে গিয়ে নিজেই যেন একটা যন্ত্র হয়ে গেছে!
কিন্তু মানুষ বলে বোধ হয় মনের দুয়ারে চৈতালী হাওয়া এসে দোলা দিলে তা আর যুক্তি মানে না—তরী ভাবে। তরীর জীবনের এ মধ্য প্রহরে নতুন করে ভালোবাসার ডালি নিয়ে এলো পলাশ। যে মানুষটা বরষার জলে নীল শাড়ি পরতে ভুলে গেছে সেই মানুষটিকে পলাশ কেমন করে জানি একটু একটু করে আবার জাগিয়ে দিলো।
পলাশ বলত ‘ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না , বন্ধ দুয়ার ভেঙ্গে সে আসবেই, তরী তুমি মানো আর নাই মানো।’
পলাশের কথাতে তরী কেমন জানি দুর্বল হয়ে যায়। টলে যায় তার মনের দৃঢ়তা। যে ভালোবাসা তার জীবকে তছনছ করে দিলো সে ভালোবাসা কি আবার তাকে বাচাঁর জন্য অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরছে? তবে কি এ কারণে আজকাল তার একাকীত্বটা বেশি মনে হয়। এমনি করে নিজের অজান্তে পলাশ আর তরী আবার স্বপ্ন দেখে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আর একে অপরের সাথী হয়ে জীবনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দেওয়ার।
কিন্তু জীবনের সুর -তাল- লয়- ছন্দটা আবার ও ঠিক করে বাধাঁ হলো না তরী-পলাশের। তরীর স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়। পলাশ যে ভালোবাসার কথা বলত সেটি বাস্তব জীবনে অন্য কিছু কিন্তু ভালবাসা না। তরী তার কাছে হয়ে ওঠে একটি পণ্য। তার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে শুরু করে তরীকে।
কীটদের কাছে ধর্ষিত হতে চায় না তরী। এবার এটা তার অস্তিত্বের লড়াই। তার আর্দশ নৈতিকতা সবকিছুই তাকে ধিক্কার দেয়। এ কোন জীবন তার। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একবার আত্মহননের কথা ভেবেই নিজেকে ঠিক করে নেয় সে— ‘না তরী হেরে যেতে জন্মেনি।’
এবার সে একটা বন্ধনমুক্ত জীবনের দিকে হাঁটবে। তরী ভাবে—এ সমাজে কত নারী কতভাবে যে যৌন সন্ত্রাসের শিকার তার খবর কে রাখে? দামি শাড়ি আর বিলাসী জীবনের আড়ালে কত নারীর রাত কাটে মনের দহনে।
অণুগল্প