কেন বারবার গৃহবন্দী হচ্ছেন কাশ্মীরের মেহবুবা মুফতি ?
আবারও ‘গৃহবন্দী’ করা হলো জম্মু কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে। গতকাল মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর ২০২১) নিজের টুইটে এ বার্তা জানিয়ে তিনি লেখেন ‘ভারত সরকার আফগান জনগণের অধিকারের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছে অথচ কাশ্মীরের জনগণের অধিকারের কথা ইচ্ছা করে অস্বীকার করে যাচ্ছে। আর আজ আমাকে গৃহবন্দী করে রাখা হলো।’
মেহবুবা মুফতি টুইট বার্তায় কাশ্মীরের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রশাসন দাবি করছে কাশ্মীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক যা সত্য নয় বরং চরম মিথ্যে। পরিস্থিত যদি স্বাভাবিক হতো তবে তাকে গৃহবন্দী করা হতোনা।’
টুইটে দেওয়া দুটি ছবিতে দেখা যায়, বাড়ির প্রধান গেইটে তালা ঝুলছে, অন্যছবিতে গেইটের বাইরে বাড়ির সামনের রাস্তায় সশস্ত্র বাহিনির গাড়ি দাঁড় করানো।
কাশ্মীরের রাজ্য পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছে, মেহবুবা মুফতির গত মঙ্গলবারে কুলগ্রাম সফরে যাওয়ার কথা ছিল। নিরাপত্তার খাতিরে প্রশাসন তাঁকে সেখানে যেতে নিষেধ করে। মেহবুবা মুফতিকে নতুন করে গৃহবন্দী করা হয়নি। স্বাধীনতাকামী গিলানির মৃত্যুর পর যাতে কাশ্মীর অশান্ত না হয় একারণে সাবধানতামূলক ব্যাবস্থা নেওয়া হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় কাশ্মীর এখন স্বাভাবিক রয়েছে।
এই নিয়ে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য করা হয়নি। ২০১৯ সালে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে কাশ্মিরে বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা কেড়ে নিয়ে কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ওই সময়েও গৃহবন্দী করা হয়েছিল মেহবুবা মুফতিকে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মেহবুবা মুফতিকে প্রথম আটক করে ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট। আটকের ৪৬ দিন পরে তার মেয়ে ইলতিজা মুফতি তার মায়ের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বিষয়টি জানান। নভেম্বরে ইলতিজা মুফতি শ্রীনগর জেলা প্রশাসককে একটি চিঠি লিখে আবেদন করেছিলেন যাতে তার মাকে একটা ভাল স্থানে স্থানান্তর করতে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে জম্মু ও কাশ্মীরের জননিরাপত্তা আইনের অধীনে পুনরায় আটক করা হয়। এরপর ১৩ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মুক্তি পান তিনি।
এরপরে একই বছরের (২৫ নভেম্বর ২০২০) জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান মেহবুবা মুফতিকে জম্মু -কাশ্মীর পুলিশ আটক করে এবং দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। সেখানে তিনি যাচ্ছিলেন সিনিয়র পিডিপি নেতা ওয়াহিদ পারার পরিবারের সাথে দেখা করতে। অই সময় পিডিবি নেতা ওয়াহিদ গ্রেপ্তার ছিলেন।
মেহবুবা মুফতি কে?
তিনি জম্মু- কাশ্মীর নেতা মুফতি মোহাম্মদ সায়েদ এর মেয়ে। তিনি ১৯৫৯ সালে ভারতের আখরান নওপোরা, ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকের পরে আইন নিয়েও পড়াশোনা করেন।
১৯৯৬ সালে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে মেহবুবা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের টিকিটে বিজবেহার থেকে নির্বাচিত হন। তিনি ওই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সদস্যদের একজন ছিলেন।
পরে তিনি তার বিধানসভা আসন থেকে পদত্যাগ করেন এবং শ্রীনগর থেকে ১৯৯৯ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ও ওমর আবদুল্লাহর কাছে হেরে যান। ২০০২ সালে আবার বিধানসভা নির্বাচনে রাফি আহমেদ মীরকে পরাজিত করে তিনি দক্ষিণ কাশ্মীর থেকে রাজ্য বিধানসভায় পাহলগাম আসনে জয়ী হন। ২০০৪ ও ২০১৪ সালে অনন্তনাগ আসন থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হন মেহবুবা।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তার বাবার মৃত্যুর পর তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে জোট সরকারের হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। পরে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাথে জোটে থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে সরকার গঠন করেছিলন। এরপর ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল তিনি শপথ গ্রহণ করেন এবং জম্মু ও কাশ্মীরের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হন।
এফএ