‘গ্রুপ স্টাডি’র ছুঁতোয় বাসায় ডেকে ধর্ষণ, রক্তক্ষরণে ছাত্রীর মৃত্যু
রাজধানীতে গ্রুপ স্টাডির কথা বলে ইংরেজি মাধ্যমের এক শিক্ষার্থীকে বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে ফারদিন ইফতেখার দিহান নামের অন্য একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র। ওই ধর্ষণের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিনের (১৭)। ধর্ষক ফারদিন দিহানের ফোন পেয়ে আনুশকার পরিবার হাসপাতালে এসে দেখেন তাদের মেয়ে আর বেঁচে নেই। প্রথমে প্রেমের সম্পর্কের দাবি করলেও পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ফারদিন ফয়সাল জানিয়েছে, ধর্ষণের পূর্ব পরিকল্পনা থেকেই বাসায় সে ওই ছাত্রীকে বাসায় ডেকেছিল। গতরাতে (৭ জানুয়ারি, ২০২১) এ ঘটনার পরে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন ভিকটিমের পরিবার। ভিকটিমের বাবা বাদি হয়ে কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী) ২০০৩এর ৯(২) ধারায় মামলা দায়ের করেছেন।
ভিকটিমের বাবা বাদি হয়ে কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী) ২০০৩এর ৯(২) ধারায় মামলা দায়ের করেছেন।
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) সকালে এ খবর নিশ্চিত করেছেন রাজধানী ঢাকার কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ফারদিন ইফতেখার দিহান ওই ছাত্রীকে গ্রুপ স্টাডির কথা বলে পরিকল্পিতভাবে বাসায় ডাকে। গ্রুপ স্টাডির কথা বললেও তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্ষণ। মৃত্যু ধর্ষণের ফলে হয়েছে না ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে সেসব তথ্য জানা যাবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর।’
এদিকে হাসপাতালে নেওয়ার আগে থেকেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণে অভিযুক্ত ফারদিন দিহান জানায়, ধর্ষণের পরিকল্পনা আগেই করা ছিল। তারা দুজন বন্ধু হলেও দুজনের প্রেম শুরু হয়েছিল খুব বেশিদিন নয়। মাত্র তিন মাস হল উভয়ের মধ্যে প্রেমের। গতকাল (৭ জানুয়ারি) গ্রুপ স্টাডির কথা জানিয়ে আনুশকাকে ফোন করে কলাবাগান লেক সার্কাসের একটি বাসায় ডেকে নেয় দিহান। দুপুর ১২ টা থেকে একটার মধ্যেই তাকে ধর্ষণ করে দিহান। আনুশকার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। একপর্যায়ে সে অচেতন হয়ে যায়।
ধর্ষক একজন না তারও বেশি এ বিষয়ে ফারদিন দিহান পুলিশকে জানায়, সে একাই ধর্ষণ করেছে। মেয়েটির স্বাস্থ্যের অবস্থা বেগতিক খবর পেয়ে অন্য বন্ধুরা এসেছিল। নিহত আনুশকার পরিবারের দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ ফারদিন দিহান নামের ওই একজনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে। বাকি তিনজনকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
পুলিশকে ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত ফারদিন দিহান পুলিশকে জানিয়েছে, ধর্ষণের আগে আনুশকাকে কোক জাতীয় পানীয়ের সঙ্গে অচেতন করার ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল।
মামলার এজাহারে নিহত আনুশকার বাবা আল আমিন আহাম্মেদ ও মা শাহানুরী উল্লেখ করেছেন, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল নয়টার দিকে মেয়েকে বাসায় রেখে বাবা মা দুজনেই বের হয়ে যান। সকাল ১১ টার দিকে মেয়ে আনুশকা তার মাকে ফোন করে জানায়, ক্লাসের নোট নেওয়ার জন্য বাইরে বের হচ্ছে। এরপর দুপুর একটার দিকে দিহান পরিচয় দিয়ে আনুশকার মাকে ফোন করে জানানো হয়, ‘আনুশকা তার বাড়িতে গিয়েছিল। এরপর সেখানে অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর আনুশকার মা হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে পায়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
ফারদিন দিহানকে আজ শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত মেয়েটির বাবা বাদি হয়ে নারী নির্যাতন আইন ২০০৩ এর অধীনে মামলা দায়ের করেছেন। বর্তমানে আনুশকার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।