অন্তঃসত্ত্বা নারীর ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার চট্টগ্রামের আইনজীবী
চট্টগ্রামে পারিবারিক জমিজমার বিবাদ নিয়ে পরামর্শ করতে আইনজীবীর দারস্থ হয়েছিলেন তিথি ( ছদ্মনাম)। ওই পরিচয়ের সূত্রে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। পরিচয়ের কিছুদিন পরই বেড়াতে যাওয়ার নাম করে নিজের গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায় নিয়ে গিয়ে জোর করে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের পর প্রেম ও বিয়ের কথা বলে তিথিকে আশ্বস্ত করে ওই যুবক আইনজীবী। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম নগরের ভিন্ন ভিন্ন হোটেলে তিথির সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন তিনি। এক পর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিথি। বিয়ের কথা বলতেই সম্পর্কটাই অস্বীকার করে বসেন আইনজীবী। পারিবারিক শালিস বৈঠক করলে তাকে উল্টো অপমান করা হয়। পুরো ঘটনা জানিয়ে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতিতেও লিখিত অভিযোগ করেছিলেন ভুক্তভোগী নারী । আট মাসের গর্ভাবস্থায় সম্পর্কের স্বীকৃতি খুঁজতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে অবশেষে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিথি।

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত আইনজীবীর নাম অ্যাডভোকেট পল্টন দাশ (৩২)। তিনি রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটার অ্যাডভোকেট বঙ্কিমচন্দ্র দাশের ছেলে। তার পৈত্রিক পরিবার বর্তমানে রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালীর বৌদ্ধ মন্দির সংলগ্ন এলাকায় বাসা নিয়ে বসবাস করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘২০১৭ সালে অ্যাডভোকেট পল্টন দাশের কাছে জমিজমার বিবাদ নিয়ে আইনি পরামর্শ নিতে গিয়েছিলেন তিথি। সেখান থেকেই তাদের পরিচয়ের শুরু। মাঝেমধ্যে কথা হত। এর মাঝে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তিথির সাথে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে অভিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট পল্টন দাশ। এমনকী আইনজীবী সমিতির দোয়েল ভবনে তার আইন প্র্যাকটিসের চেম্বারে ডেকে এনেও তিথির সাথে শরীরী খেলায় মাতেন অভিযুক্ত ওই আইনজীবী। বিয়ের কথা বললে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করেন তিনি। এক পর্যায়ে শুধু সম্পর্ক অস্বীকারই নয় বিভিন্ন মাধ্যমে তিথিকে গর্ভপাত করতে চাপ দেন তিনি। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর ছবি ছড়ানোর হুমকিও দেওয়া হয় তিথিকে। ’
এদিকে উইম্যানভয়েসবিডিকে তিথি বলেন, আট মাসের গর্ভাবস্থায় সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আনন্দ নয় বরং সামাজিক অসম্মানসহ নানা হুমকিতে দিন কাটাচ্ছি আমি। শুরুতেই আমি এমন সম্পর্ক করতে অস্বীকৃতি জানালেও বিয়ের কথা বলে এক বছর ধরে আমাকে শারীরিক শোষন করে পল্টন। গর্ভধারণের সাত মাস হয়ে গেলে আমি তার পরিবারেও জানাই। কেউ আমাকে আশ্বস্ত করেনি বরং অসম্মান ও বিভিন্ন হুমকি দিয়েছে। এরপর আমি আইনজীবী সমিতিতেও লিখিত অভিযোগ দিই। সেখানেও মীমাংসার পথে হাঁটেনি পল্টন। সে বারবারই আমাকে আইনজীবী হওয়ার দাপট দেখিয়েছে। সবসময় বলত, ‘যাও মামলা কর আমি মামলাকে ভয় পাইনা। অ্যাডভোকেটের বিরুদ্ধে অন্য কোন অ্যডভোকেট মামলা নেবে না।’

তিথি বলেন, ‘পল্টন আমাকে ও আমার পরিবারকে অনেকটা উন্মুক্তভাবেই হুমকি দিয়েছে। চট্টগ্রাম আদালতের তারিন নামের শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী আমাকে ফোন করে হুমকি দেয়। আমার ব্যাক্তিগত তথ্য পোস্টার করে পাঠানো হবে বলে জানিয়ে আমাকে কয়েক দফা হুমকি দেয় তারিন নামের ওহ নারী ‘
তিথি বলেন, ‘আমাকে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে হুমকি দিয়েছে পল্টন। অভিযোগ নিয়ে রাঙ্গুনিয়া থানায় গেলে তারা আমার অভিযোগ নেয়নি। ওই এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে মৌখিক অভিযোগ দিলে তিনি ব্যাক্তিগত পর্যায়ে সুরাহা করার চেষ্টা করে আমাকে আইনি আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেন।’
‘পল্টন তার কাজিনের মাধ্যমে আমাকে টাকা অফার করে। পল্টন বোঝায় আইনজীবী মানে আইনের উর্ধ্বে। আমি মামলা দায়ের করলেও কোন আইনজীবী আমাকে সহায়তা দেবেন না।’— যোগ করেন তিথি।
ভুক্তভোগী তিথি আরও বলেন, ‘দেখেন, আমার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সময় আসন্ন। অবিবাহিতা অবস্থায় এটি আমার ও পরিবারের জন্য খুবই অসম্মানের। এই শারীরিক অবস্থায়ও আমি তার কাছে সম্পর্কের স্বীকৃতি ভিক্ষা চাওয়ার মতই চেয়েছি অন্যদিকে পল্টন আমাকে সামাজিকভাবে আরও অপদস্থ করার ভয় দেখায়। সবশেষে বাধ্য হয়েই আমি থানায় গিয়ে অভিযোগ করি।’