‘বিয়ের পর থেকেই প্রতিমাসে টাকা দিত আখির বাবা। আসামি আনিসের চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী আনিস যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রীর উপর শারীরিক নির্যাতন করতেন। সম্প্রতি জুতো পায়ে স্ত্রীকে লাথি দিয়ে বেধড়ক পেটানোর পর স্ত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ঘরে বন্দি করে রাখে আনিস। আনিস ও তার পরিবারের নির্যাতনে নিহত আঁখির অবস্থা সংকটাপন্ন হলে হাসপাতালে নেয় তারা। গত ১৯ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইনের ছাত্রী আঁখির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ‘নির্যাতনকারী স্বামী’ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।’
সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির আইনের শিক্ষার্থী গৃহবধূ মাহমুদা খানম আঁখি হত্যার প্রতিবাদে স্ত্রী হন্তা স্বামীর সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে অনুৃষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলছিলেন। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা ১২ টায় প্রধানসড়ক সংলগ্ন বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের সামনে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে নিহতের পরিবার, সহপাঠী শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মিশকাতুল কবির বলেন, ‘সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদা খানম আঁখির মৃত্যুতে সুষ্ঠু ময়নাতদন্ত ও নিরপেক্ষ প্রতিবেদন দাখিলের দাবি জানাই।’
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন নারী শিশু ও নির্যাতন ট্রাইবুনাল ৭ এর পিপি অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিহতের মামা মো. আশরাফ আলী, মো. আব্দুল গফুর, নিহত আঁখির মামা নগর ছাত্রলীগ নেতা ফাহাদ আনিস, পিয়ারু, অ্যাডভোকেট মিশকাতুল কবির, যুগ্ম আহ্বায়ক প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, মোঃ তৌফিক চৌধুরী, সভাপতি, ছাত্রলীগ, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম। থানা ছাত্রলীগ নেতা মশিউর রহমান চৌধুরী, মো. আনোয়ার পলাশ, সরকারী হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ছাত্রলীগ নেতা চট্টগ্রাম,হাসানত শিহাব, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা সৈকত দেবনাথ। এছাড়াও সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ুয়া আঁখির সহপাঠীরাও বক্তব্য রাখেন।
গত রোববার (১৯ ডিসেম্বর, ২০২১) সন্ধ্যার দিকে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ুয়া গৃহবধূ আঁখির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য আনিসুল ইসলামকে তৎক্ষণাৎ আটক করে পুলিশ।
হাসপাতালে শেষ কথায় কী বলেছিল আঁখি?
নিহত আঁখির ভাই মিজানুর রহমান উইম্যানভয়েসবিডিকে বলেন, ‘ হাসপাতালের বেডে শুয়ে আঁখির শেষ কথা ছিল— আম্মু আমি সব বলব আমাকে শেষ করে ফেলছে, আমাকে পেটে লাথি মেরে ৬দিন বাসায় তালা দিয়ে রাখছে, আম্মু আমাকে মেরে ফেলেছে। এ কথাগুলো আমার বোন আমার মাকে বলেছিল চট্টগ্রাম মেডিক্যালের অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার আগে। এরপর আমার বোন আর কথা বলেনি।
আইনজীবী আনিস ও আঁখির প্রেমের বিয়ে না যৌতুকের ফাঁদ?
নিহত আঁখির ভাই মিজানুর রহমানের ভাষ্যে, ‘ পরিবারের অমতে আনিস ফুঁসলে পালিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আমার ছোটবোন আঁখিকে। বিয়েতে পরিবারের কারও মত ছিল না। আঁখির জেদাজেদিতে আমার আব্বু তার এক বন্ধুর মাধ্যমেআঁখিকে ৯ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে দিয়েছিল আনিসের সঙ্গে। বিয়ের পর আনিস আঁখিকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিত না। কেবল প্রবাসী আব্বুর সাথে যোগাযোগ করত। আমার বোনের পড়াশোনার খরচ ও আনিসের ব্যক্তিগত খরচের জন্য আমার আব্বু প্রতিমাসে টাকা দিত আনিসকে। আইনজীবী চেম্বার করতেও আমার বাবার কাছে ১ লাখ টাকা নিয়েছিল আনিস।’
যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন
নিহত আঁখির ভাই মিজানুর রহমান বলেন, আব্বু নিয়মিত টাকা দিত। যৌতুকের সরাসরি দাবি ও সেই সূত্রে নির্যাতনের সূত্রপাত হয় গত তিন মাস আগে। আসামি আনিস আব্বুর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা এনে দেওযার জন্য আমার বোনকে চাপ দেয় ও মারধর করতে শুরু করে। এরমেধ্যেই একদিন আনিস একটি মেয়ের সাথে ভিডিয়ো কলে কথা বলছিল। ওই দিন আমার বোন আঁখি তাকে প্রশ্ন করেছিল মেয়েটি কে? সেদিন আমার বোনকে প্রচণ্ড মারধর করে মূলত ওইদিন থেকে আমার আব্বুর সাথেও আখির যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ আঁখির মোবাইল কেড়ে নিয়েছিল আনিস।
আসামি যখন আইনজীবী
আখির পরিবার বলছে, ‘আসামি আইনজীবী হওয়ায় হত্যা করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। আমরা ভালো আইনজীবীও পাচ্ছি না। আসামির পরিবার আমাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেখে নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, ‘স্বামীর নির্যাতনে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার পর বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামীসহ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।’