ছেলের মাস্টার্স মেয়ের বিয়ে, করুণ অভিমানে পিতার আত্মহত্যা
করুণ অভিমানে মৃত্যুকে বেছে নিলেন ছেলে মেয়ে অন্তপ্রাণ এক পিতা। ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পড়াচ্ছিলেন আর মেয়েকে বিয়ে দিয়ে অনেকটাই নিঃস্ব হয়ে যান রংপুরের রাজু মিয়া ৫৪। এক সময় তৈরি হল দূরত্ব। পরিবারের মানুষগুলো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। স্ত্রী চলে গিয়েছিলেন বাবার বাড়ি, ছেলে মেয়ে কেউই খোঁজ নিচ্ছিল না পৌঢ় রাজু মিয়ার। শেষে এসে নিজের স্বেচ্ছামৃত্যু দিয়ে শেষ করলেন তার জীবনের গল্প। এক পিতার আত্মহত্যা।
আজ শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি, ২০২১) সকাল ৮ টায় রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করিনী ইউনিয়নের পালিচড়া বাজারের পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের পাশে আম গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ দেখতে পায় এলাকাবাসী। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করেন।
নিহতের নাম রাজু মিয়া (৫৪)। তিনি একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানের ভাড়াটিয়া ছিলেন। রাজু মিয়ার গ্রামের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নে।
নিহত রাজুর এক আত্মীয় বলেন, এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বেশ সুখের সংসার ছিল রাজু মিয়ার। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়াশোনা করছে। ছেলের লেখাপড়া ও মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়লেও তিনি মানসিকভাবে তৃপ্ত ছিলেন। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। স্ত্রী তার বাবার বাড়ি পীরগাছা উপজেলার কদমতলীতে চলে যান। এদিকে সন্তানরাও তার কোন খোঁজ খবর নিচ্ছিল না।
নিহত রাজুর ওই আত্মীয় আরও বলেন, এ অবস্থায় চার মাস আগে রংপুর সদরের সদ্যপুস্করিনি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানের কাছে একটি রুম ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন রাজু। তার কাছেই খাবার খেতেন এবং রুম ভাড়ার টাকা রাজুর বোনরা পাঠাতেন।
ওই ভাড়া বাসার মালিক মতিয়ার রহমান জানান, চার মাস আগে তিনি একটি রুম ভাড়া নেন । প্রতি মাসে সাতশো টাকা করে ভাড়া দিতেন। মানুষ হিসেবে সহজ সরল ছিলেন রাজু। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। শুক্রবার ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদেও গিয়েছিলেন। সকালে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারি। খুব ব্যথিত হয়েছি।
রংপুরের সদর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে ঝুলন্ত অবস্থায় রাজু মিয়ার মরদেহ পাওয়া গেছে। এখনই বলা যাচ্ছে না এটি আত্মহত্যা। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে পাঠানো হচ্ছে। মৃত্যুর কারণ বলা যাবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর।