‘ছোটলোকের মেয়ে’ তোকে মেরে ফেললেও কী করতে পারবি? এটা ছিল তাদের নিয়মিত কথা।
‘গরীব বলেই আমার মেয়েটাকে খুন করে ঝুলিয়ে দিল সিলিংয়ে। গরীব বলেই পারল। এক বছর আগে রুপসীর বিয়ে দিয়েছিলাম । যৌতুক হিসেবে পাঁচ ভরি স্বর্ণ ও ফুল সেট ফার্নিচার দেওয়ার কথা ছিল। ৩ ভরি স্বর্ণ আর অল্প ফার্নিচার দিয়েছি। এর চেয়ে বেশি সাধ্য যে ছিল না। এ কারণেই বারবার খোঁটা ও মারধর খেতে হত রুপসীকে। শুধু শাশুড়ি-স্বামী নয় শ্বশুর বাড়ি থেকে এসে রুপসীর দুই ননদও তাকে নির্যাতন করত। ‘ছোটলোকের মেয়ে’ তোকে মেরে ফেললেও কী করতে পারবি? এটা ছিল তাদের নিয়মিত কথা। আমাকে কয়েকবার বললে আমিও তাকে একটু মানিয়ে চলতে বলতাম। আমি তো কল্পনাই করিনি আমার মেয়েটিকে মেরে ঝুলিয়ে রাখবে। শুধু শাশুড়ি-স্বামী নয় শ্বশুর বাড়ি থেকে এসে রুপসীর দুই ননদও তাকে নির্যাতন করতব।’ অশ্রুসজল ও হতাশ কণ্ঠে উইম্যানভয়েস প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন নিহত রুপসীর মা সবিতা রানী দে।
শুধু শাশুড়ি-স্বামী নয় শ্বশুর বাড়ি থেকে এসে রুপসীর দুই ননদও তাকে নির্যাতন করত।
সোমবার (৯ নভেম্বর) রুপসীকে হত্যার পর সিলিংয়ে ঝুলিয়ে রাখে স্বামী সজীব কান্তি দে। খবর পেয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনায় রুপসীর মা মামলা দায়ের কতরলেও পুরো পরিবারটি পলাতক রয়েছে। কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
প্রধান অভিযুক্ত রুপসীর স্বামী সজিব কান্তি দে কক্সবাজারের খুরুশকুল ইউনিয়নের হিন্দু পাড়ার ভরত চন্দ্র দে ও ঝর্ণা বালা দের ছেলে। এ খুনের ঘটনায় রুপসীর শাশুড়ি ঝর্ণা বালা তার দুই মেয়ে শেফালী দে ও বেবি দে ও অপর ছেলে রাজীব দেও জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন নিহত রুপসীর মা সবিতা।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রুপসীর মা সবিতা রানী বলেন, ‘গত কয়েকমাস ধরে খুব বেশি মারধর করা হত আমার মেয়েকে। সহ্য করে সংসার টিকাতে চেয়েছে সে। তাকে বলত ‘তুই ছোটলোকের মেয়ে তোকে মারলেও কী করতে পারবি।’ উঠতে বসতে তাকে এসব কথা শোনানো হত। তার দুই ননদ শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে আমার মেয়েকে নির্যাতন করত। কারণ পাঁচ ভরি স্বর্ণের দুই ভরি আমি দিতে পারিনি বলে। মেয়ের সুখের জন্য যোগাড় করে তিনভরি তো দিয়েছিলাম। তবুও আমার মেয়েটিকে মারত।
শ্বশুরবাড়ি নরকের চেয়ে কম ছিল না তার জন্য।’
এভাবে পরিকল্পিতভাবে খুন করে ফেলতে পারে ধারণা করতে পেরেছিলেন কী না প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে সবিতা রানী বলেন, এমন ধারণা করতে পারলে কী মেয়েকে ওখানে রাখতাম। ওর স্বামী প্রায় মদ খেয়ে এসে মারত আমার মেয়েকে।
সোমবারের ঘটনার কথা উল্লেখ করে সবিতা বলেন, সোমবার আমার মেয়েকে শায়েস্তা করতে দুই ননদ ও তাদের স্বামীও এসছিল। ওইদিন ঘরে বেঁধে রেখে তাকে দিনভর নির্যাতন করা হয়। ওই মারটা আর সহ্য করতে পারেনাই আমার মেয়েটা। মৃত্যুর কোলে চলে যায়। ওই সময় তাকে সবাই মিলে সিলিংয়ের বাঁশে ঝুলিয়ে দিয়ে আমাদের খবর দেয় ও আত্মহত্যা করেছে।
তিনি বলেন, আমরা পৌঁছানোর আগেই ওরা পালিয়ে যায়। ঘরে এসে দেখি রুপসী বাঁশে ঝুলে আছে। গলায় প্লাস্টিকের দড়ি। আমরা ভেবেছিলাম বাঁচানো যাবে। প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে রুপসীকে নামিয়ে নিই। কিছুক্ষণ পর পুলিশ এলে নিশ্চিত হই রূপসী আর নেই। আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
দারিদ্র্য ও নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে উইম্যান ভয়েস প্রতিবেদককে সবিতা বলেন, ‘আমরা গরীব। বিচার চাইতে এরপর কী করতে হবে জানি না। মামলা করেছি। আমার মেয়ের খুনীরা গ্রেপ্তার হয়নি। আপনাদের মাধ্যমে আমি আইনি সহযোগীতা চাই। আমার মেয়ের খুনীদের বিচার চাই।’