হৃদি-আরিয়ানের সম্পর্ক ৩ বছর শেষ হয়ে ৪ বছরে পড়লো। এ হৃদ্যতার খবর গোপন থাকেনি। কলেজে প্রেমিক জুটি হিসেবে তাদের পারচিত খুব অন্যরকম। ওদের এভারগ্রিন কাপল বলে সবাই। আজকাল এ জনপ্রিয়তাকে খুব এনজয় করে ওরা।
আরিয়ান, ‘তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি।’
‘আজ আমি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম’—তড়িঘড়ি করে বিচলিত কন্ঠে বলল হৃদি।
‘কী হয়েছে আমার সোনাপাখিটার? জ্বর এসেছে? আমাকে আগে বলো নি কেন?’ অপরপাশ থেকে আদুরে কন্ঠে জবাব দিল আরিয়ান।
হৃদি – না,আরিয়ান জ্বর আসেনি
আরিয়ান – তাহলে কি হয়েছে, সবটা খুলে না বললে বুঝব কি করে?
হৃদি -তুমি তো জানোই গত ২ মাস আমার পিরিয়ড হচ্ছে না সময়মত, শরীরও ভালো লাগছে না
আরিয়ান – হ্যা, তো?
হৃদি- আসলে আরিয়ান ডাক্তার বলেছে আমি আর কখনো মা হতে পারবো না। আমার শারিরীক অনেক সমস্যা ধরা পড়েছে। আমি আর…হ্যালো …. আরিয়ান শুনতে পাচ্ছো… ? হ্যালো….
অপরপাশ থেকে ফোনটা কেটে দিয়েছে আরিয়ান। এরপর হৃদি অনেকবার ফোন দিয়েও আরিয়ানকে পেল না। মেসেজও দিল তবু আরিয়ানের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রায় ৩দিন পর আরিয়ান হৃদির কাছে ফোন করলো। হৃদি কিছু বলার আগেই তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলা শুরু করল।
আরিয়ান -দেখ হৃদি, এই সম্পর্কটা কন্টিনিউ করা আমার পক্ষে আর সম্ভব না। আমি অনেক ভেবে দেখেছি। আমার বাবা-মা এরকম একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক মেনে নেবেন না।
হৃদি – প্লিজ জান প্লিজ আরিয়ান,একটু বোঝ। গিভ মি সাম টাইম টু এক্সপ্লেইন আরিয়ান…..
আরিয়ান – নো,আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হিয়ার এনিথিং ফ্রম ইউ, স্যরি।
আরিয়ান- এভাবে চাপ দিও না। বাস্তবতাকে মানতে হয়। জীবনের কাছে আমরা বন্দি। শোন….. একটা মুরগিও ডিম না দিলে সেটিকে জবাই করা হয়। ঠিক তেমন বন্ধ্যাদের দিয়ে ভালোবাসার ঘর হয় না। আর তোমার তো রূপ ছাড়া তো কিছুই নেই। ফ্যামিলি স্ট্যাটাস ও ভালো না। মেধাবীও না যে চাকরি করে খাবে। শুধু তোমার রূপ ধুয়ে ধুয়ে কি আমরা পানি খাবো? আমার সাথে যোগাযোগ করার কোনো চেষ্টাও করবা না। ভাল থেক।
আরিয়ান ফোন কেটে দেয়। আর সেই ফোনের নম্বরটিও বন্ধ করে দেয়। সে ভাবে—ফোন খোলা রাখলে কেঁদেকেটে ন্যাকামো করবে হৃদি। আই হেট দিস লোয়ার মিডল ক্লাস গার্ল। সো ইডিয়ট। সো ফানি।
তারপর একটু কেঁদে তারপর মুচকি হাসে হৃদি।
তারপর কেটে গেছে প্রায় ৫ বছর
এরপর হঠাৎ একদিন
গাইনি ডাক্তার ঝুমুর সুলতানার চেম্বারে বসে আছে আরিয়ান,সাথে তার স্ত্রী। বিয়ের ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আরিয়ানের ঘরে কোনো শিশু আসেনি। এজন্যই তো বিয়ে। সন্তান না পেলে আবারও বিয়ের কথা মনে মনে ভাবে আরিয়ান।
নো ওয়ে মি.আরিয়ান। ইউর ওয়াইফ ইজ কমপ্লিটলি ফাইন। সমস্যাটি আপনার। দিস ইজ ইউর টেস্ট রিপোর্ট, স্যরি টু সে ইউ ক্যান্ট বি অ্যা ফাদার—কথাগুলো একনাগাড়ে বলে গেলেন ডাক্তার ঝুমুর।
প্রচণ্ড মন খারাপ করে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হলো আরিয়ান। খুব মন ছোট লাগছে তার। ঘেন্না হচ্ছে স্ত্রীকে। বীভৎস একটি অভিব্যক্তি বের হচ্ছে তার মুখ থেকে। একবার ভাবল সবাইকে বলে দেবে স্ত্রীর সমস্যা। পরে কী ভেবে স্ত্রীর মুখের উপর সব রিপোর্ট ছুড়ে মেরে আরিয়ান বলল— দুয়েকদিনে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবো, সাইন করে দিবে। তোমার পাওনাও আমি মিটিয়ে দেব। কিন্তু আমার সমস্যার কথা কাউকে বলবে না।
স্ত্রীর সাথে এভাবে গজগজ করতে করতে হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছিল আরিয়ান। এমন সময়ে তার মুখোমুখি হল এক নারী। তার সাথে ৫ বছরের ছোট্ট ছেলে। মার হাত ধরে খেলছিল শিশুটি। বাচ্চাটির মাকে বড্ড চেনা লাগছে আরিয়ানের। আরে! এ তো হৃদি। কী সুন্দর কী পরিপাটি হয়েছে!
‘এ কি? এ যে হৃদি…এই বাচ্চা কি হৃদির?— মনে মনে ভাবল আরিয়ান
এদিক সেদিক ভেবে স্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে হৃদির পথ আগলে দাঁড়ায় আরিয়ান। ঘটনার আকস্মিকতায় হঠাৎ থমকে যায় হৃদিও
আরিয়ান- হৃদি, তাহলে মিথ্যা বলেছিলে তুমি? এটি তোমার ছেলে?
মৃদু হেসে হৃদি বলল, ‘আমার ছেলে নূর’
আরিয়ান- ‘মিথ্যে বলে আমাকে ঠকালে? আমার ভালোবাসাকেও?’
হৃদি- ডোন্ট অ্যাক্ট লাইক অ্যা চাইল্ড। গ্রো আপ আরিয়ান। দ্যাটস ওভার। ওদিনের কোন কথা এখন আর হয় না।
আরিয়ান- হৃদি, একটু শোন। আমার মনটা ভালো নেই। আরেকটু দাঁড়াও।
হৃদি- আই অ্যাম প্র্যাগনেন্ট এগেইন। এছাড়াও ব্যস্ততা আছে।
আরিয়ান- শুধু বলো কেন ? কেন? কেন?
হৃদি- ‘আারিয়ান এটা খেলা ছিল। ট্রুথ অর ডেয়ার, আই চুজ ডেয়ার। বন্ধুরা বলেছিল বলে করেছি।
সাহস দেখিয়ে তোমার সত্যটুকু জানলাম । জানার পরে এই মিথ্যে সম্পর্কে থাকতে আর রুচি হয়নি। পেয়েছ উত্তর?
আবারও মুচকি হেসে আরিয়ানের দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে গেল হৃদি।