দাম্পত্য কলহের জের ধরে প্রায় ছয় মাস আগে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে যায় স্ত্রী। স্ত্রী-সন্তানকে ফিরে পেতে স্বামী মামলা ঠুকেন আদালতে। তবে মামলায় হেরে গিয়ে আদালত প্রাঙ্গনেই ছুরিকাঘাতে আত্মহনন করেন তিনি।
ঘটনাটি সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে হবিগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণের নিমতলার।
নিহত হাফিজুর রহমান হবিগঞ্জ শহরতলীর কামড়াপুর এলাকার নূর মিয়ার ছেলে। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুলতান মাহমুদপুর এলাকায় বসবাস করতেন।
খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, বেলা আনুমানিক একটার দিকে নিজের শরীরে ছুরি দিয়ে আঘাত করে আত্মহত্যা করেন ওই যুবক। মারা যাওয়ার পর তার দেহ স্থানীয় হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
ময়না তদন্তের পর তার দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে স্ত্রী-সন্তান তার সাথে যেতে রাজি হয়নি বলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে এ ধরণের পদক্ষেপ নিয়ে থাকতে পারেন।
স্থানীয় সাংবাদিক এবং আইনজীবী শাহ ফখরুজ্জামান বলেন, নিহত ওই যুবক পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন।
প্রায় দুই বছর আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তাদের দশ মাসের একটি সন্তানও রয়েছে।
তবে দাম্পত্য কলহের জের ধরে প্রায় ছয় মাস আগে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে পিতার বাড়িতে চলে যায় তার স্ত্রী।
পরে ঐ যুবক তার স্ত্রী এবং সন্তানকে ফিরে পাওয়ার জন্য জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলা করেন। সেই মামলার শুনানির দিন ছিল আজ।
শুনানিতে যুবকের হয়ে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী শাহ আলম সারোয়ার। তিনি বলেন, আদালতে তার হয়ে শুনানি করেছেন তিনি।
“তার স্ত্রী-সন্তানও আদালতে উপস্থিত ছিল। সে আমাদের মাধ্যমে তার স্ত্রী সন্তানকে পাওয়ার চেষ্টা করছিল।”
তিনি বলেন, “আদালতে বলেছি যে, সে তার স্ত্রী-সন্তানকে চায়, তাদের ঠিক মতো ভরন-পোষণ করবে, সে তাদেরকে ফেরত চায়।”
আদালত তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছে যে, তার স্ত্রী পিতামাতা নাকি স্বামীর সাথে যেতে চায়?
এমন প্রশ্নের উত্তরে তার স্ত্রী জানায় যে, সে পিতামাতার সাথে যেতে চায়।
আইনজীবী শাহ আলম সারোয়ার বলেন, স্ত্রীর জবাব শুনে আদালত তার রায়ে পিতামাতার সাথে তাদের থাকার আদেশ দেন। যার কারণে স্ত্রী-সন্তানকে ফেরত পাননি ঐ যুবক।
“তোমার স্ত্রী তার পিতা-মাতার সাথেই যাবে, তোমার স্ত্রী আর তোমাকে চায় না,” আদালত তার রায়ে বলে।
শাহ আলম সারোয়ার বলেন, রায় হওয়ার পর তিনি আদালত প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে যান এবং পরে তিনি শুনতে পান যে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিক শাহ ফখরুজ্জামান বলেন, রায়ের পর ঐ যুবক তার সাথে করে নিয়ে আসা ছুরি দিয়ে নিজের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে শুরু করে। পরে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।