নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য, গণমাধ্যমে নারীর উপর গ্লাস-সিলিং, যৌন হয়রানি, নারী সাংবাদিক ছাঁটাইসহ বিভিন্ন বিষয়ে চট্টগ্রামে নারী সাংবাদিকদের মধ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দৃক পিকচার লাইব্রেরির আয়োজনে আজ মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর, ২০২১) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকার নাভা ইন হোটেলের কনফারেন্স হলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত নারী সাংবাদিকরা অংশ নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে দৃক পিকচার লাইব্রেরির গবেষণা ও পাবলিক ক্যাম্পেইন বিভাগের প্রধান সাদিয়া গুলরুখ বলেন, করোনা মহামারীর কারণে উদ্ভুত অর্থনৈতিক সংকটের অজুহাতে দেশের বৃহৎ মিডিয়া হাউজ থেকে শুরু করে ছোট স্থানীয় পত্রিকায় বিনা নোটিশে নারী সাংবাদিকদের ছাঁটাই ও একই অজুহাতে বেতন সংকুচিত করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি নারী সাংবাদিকদের উপর যৌন হয়রানি ও বিভিন্ন সমস্যার তুলে ধরেন। তিনি নারী সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য ও পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির উপর জোর দেন।
চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিক ডেইজি মওদুদ বলেন, ‘আমি ২৫ বছর ধরে সাংবাদিকতা করছি। আমাদের সময়ে সংবাদে নারীর সংখ্যা ছিল একেবারেরই অপ্রতুল। ওই সময়েও নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য ছিল। স্বামী ও পরিবারের অভাবনীয় সহায়তা ও প্রেরণা ছিল বলে অনেক সমস্যাকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। টিকে থাকতে নিজের যোগ্যতাকে বারবার প্রমাণ করতে হয়েছে। নারী সাংবাদিকদের অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এগুলো নিরসন জরুরি।’
দীপ্ত টিভির ব্যুরো প্রধান লতিফা আনসারি রুনা বলেন, নারীকে অনেক বেশি যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। নারীর সাফল্যকে স্বাভাবিক চোখে দেখা হয়না। এছাড়াও আছে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা, পুরুষ সহকর্মীদের অসহযোগীতাপূর্ণ আচরণ, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন সমস্যা। আমার ২০ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি এসব সমস্যার কারণেই নারী সাংবাদিকরা পেশায় টিকে থাকতে পারেনা। আমি নারীদের বলি নিজের কাজ দিয়েই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।
উইমেন ভয়েস বিডির সম্পাদক সৈয়দা সাজিয়া আফরিন বলেন, সাংবাদিকতাসহ সব পেশায় নারীদের ৫০ শতাংশ নিয়োগ দিতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারীদের কোটার কথা উল্লেখ আছে। প্রয়োজনে কোটা সংরক্ষণের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর দাবি জানাতে হবে। পেশায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লে অনেক সমস্যা নিরসন সম্ভব।
দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের স্টাফ রিপোর্টার শাহীনুর আক্তার উর্মি বলেন, সংবাদের তথ্য নিতে গিয়েও বিভিন্নরকম হয়রানির শিকার হতে হয় নারী সাংবাদিকদের। অনেকক্ষেত্রে উটকো ঝামেলা পোহাতে হয় বলে সাংবাদিকতা করাকে পরিবারও সমর্থন করেনা। এ কারণে শুরুতে অনেক নারীকে দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে দুএকজন।
সিভয়েস ২৪ ডট কম এর স্টাফ রিপোর্টার শারমিন রিমা বলেন, নারীর জন্য সাংবাদিকতা পেশা যতটা না ঝক্কির তারচেয়ে কঠিন করে তোলে চারপাশের পরিবেশ। বিভিন্ন অজুহাতে নারীদের ছাঁটাই ছাড়াও কম বেতন ও অনিয়মিত বেতন পরিশোধ, প্রমোশন না দেওয়া ঘটছে অহরহ।
বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের স্টাফ রিপোর্টার শারমিন সুমি বলেন, বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি, অফিসে ডে কেয়ারের ব্যাবস্থা নেই সরকারি টিভিতেও, নেই যৌন হয়রানি রোধে কমিটি। এভাবেই নারীদের ভুগতে হয় নানা সমস্যায়। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ জরুরি।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন দৃক পিকচার লাইব্রেরির গবেষণা ও পাবলিক ক্যাম্পেইন বিভাগের প্রধান সাদিয়া গুলরুখ ও একই প্রতিষ্ঠানের ইকুয়ালিটি ডাইভারসিটি অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার আমিনা নেয়ামত। মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক ডেইজি মওদুদ, দীপ্ত টিভির ব্যুরো প্রধান লতিফা আনসারি রুনা, উইমেন ভয়েস বিডির সম্পাদক সৈয়দা সাজিয়া আফরিন, সিভয়েস ২৪ ডট কম এর স্টাফ রিপোর্টার শারমিন রিমা, ইংরেজি দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের স্টাফ রিপোর্টার শাহীনুর আক্তার উর্মি, উইমেন ভয়েস বিডির স্টাফ রিপোর্টার ফাতেমা তুজ জোহরা, দৈনিক পূর্বকোণের স্টাফ রিপোর্টার মরিয়ম জাহান মুন্নি, বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের স্টাফ রিপোর্টার শারমিন সুমি এবং উইমেন ভয়েস বিডির স্টাফ রিপোর্টার কাকলী লামা।