পোশাকের কারণে তরুণীকে যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে প্রতীকী প্রতিবাদ করেছেন একদল নারীবাদী অ্যাকটিভিস্ট ও নাট্যকর্মীরা। আজ শুক্রবার (২৭ মে ২০২২) সকাল ৭.১৫ ট্রেনে ২০ জনের একটি দল ঢাকা থেকে নরসিংদী যান। ‘নজর সামলে রাখুন’ উক্তির টিশার্ট পরে নরসিংদী রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদে অংশ নেন।
এ সময় তারা নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টারের সাথে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা করেন। এতে অংশ নিয়েছেন শিল্পী, নাট্যকর্মী, সংগঠক, উন্নয়নকর্মী, গবেষক প্রকৌশলীসহ মোট ২০জন নারীবাদী অ্যাকটিভিস্ট।
নির্মাতা অপরাজিতা সংগীতা উইম্যান ভয়েসবিডিকে জানান, আমরা নরসিংদী এলাকা এবং সেখানকার মানুষদের সাথে মানবিক যোগাযোগ স্থাপন করতে গেছি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো শান্তিপূর্ণভাবে জনপরিসরে শরীর ও পোশাকের স্বাধীনতার জায়গা পুনঃদাবি করা। আমাদের বৈচিত্র্যময় শারীরিক উপস্থিতিটিই আমাদের প্রতিবাদের বক্তব্য।
তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশে হিজাব বোরখার আগ্রাসন একদিনে তৈরি হয়নি। হিজাব না পরলে নারীর পোশাক খুলে ফেলতে চাওয়া, বুলি করা বা আক্রমণ করার মত মোরাল পুলিশিং-এর প্লট তৈরি হয়েছে ধীরে ধীরে। আজ আমরা ২০জন একেকজন একেক পোশাকে গিয়েছি কেউ স্লিভলেস, কেউ টপ, কেউ ব্লেজার। আজ আমরা কোন স্লোগান দিইনি, মিছিল করিনি। স্টেশনের বুক উঁচিয়ে হেঁটেছি, উচ্চস্বরে হেসেছি, টিস্টলে চা খেয়েছি—কেবল আমাদের অবস্থান জানান দিতে। এভাবে নারীরা প্রতিবাদে এগিয়ে আসলে মৌলবাদী মোরাল পুলিশ একসময় পিছু হটবে পিছু হটতে বাধ্য হবে।’
এতে উপস্থিত ছিলেন তৃষিয়া, সুরভী রয়, এ্যানি, আনোয়ার, অর্ণব, নুভা, মম, নির্মাতা অপরাজিতা সংগীতা, সামিহা, নাট্যকর্মী মেহরান সানজানা, স্মিতা, লক্ষ্মী, অন্তরা, মিশু, প্রমি, জিসা, নিশা, বিজু, ইফফাত ও নীল।
উল্লেখ্য, গত ১৮ মে (বুধবার) সকাল সোয়া ৫টার দিকে স্টেশনে আসেন তরুণী ও দুই তরুণ। পৌনে ৬টা পর্যন্ত স্টেশনটির ১ নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। এসময় স্টেশনে মধ্যবয়সী এক নারী ওই তরুণীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এটা কি পোশাক পরেছো তুমি’। তরুণীও পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনার তাতে কী সমস্যা হচ্ছে?’ এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হলে এক পর্যায়ে তরুণীকে আক্রমণ করেন ওই মধ্যবয়সী নারী।
এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১০ ধারায় মামলা দায়ের হলে এতে আসামি করা হয় নরসিংদী সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের বুদিয়ামারা এলাকার মৃত বাদল মিয়ার ছেলে মো. ইসমাইল ও নরসিংদী শহরের উপজেলা মোড় এলাকার ফয়েজ আহমেদের স্ত্রী শিলা আক্তার। ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ ও মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও দেখে তাঁদের আসামি করা হয়।