আমাদের নাটক লেখকেরা স্বামী-স্ত্রীর অভিনয় দৃশ্যে পুরুষের সহিংসতা ও নির্যাতনকে প্রশ্রয় দিয়ে তুলে ধরেন। যেন এটি একেবারেই ন্যায্য পুরুষ রেগে গেলে চিৎকার করবে, ঘরে ভাংচুর করবে ও নারীর গায়ে হাত তুলবে। এটি সাধারণত নাটকটির ইতিবাচক পুরুষ চরিত্রটির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যরুপে দেখানো হয়। এতে হিংস্রতা ও শারীরিক নির্যাতনকে নৈতিক বৈধতা দেওয়া হয়। পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ শর্মিলা ফারুকি নাটকে এমন দৃশ্য চিত্রায়ন পুরুষের এমন মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
শর্মিলা ফারুকী পাকিস্তানি টিভি নাটক খোদা অওর মুহাব্বতের একটি চড় মারার দৃশ্য নিজের ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডলে তুলে ধরে প্রশ্ন করেন – পুরুষের এই ধরনের আচরণকে আদৌ কেন চিত্রিত করা প্রয়োজন?
পাকিস্তানি রাজনীতিক শর্মিলা ফারুকী বলেন, ‘আমি দর্শক হিসাবে সময়ে সময়ে জিজ্ঞেস করেছি – আমাদের নাটকগুলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক নির্যাতন ছাড়া সুস্থ কথোপকথন তুলে ধরতে পারে না কেন?
ফারুকি নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে পাকিস্তানি নাটক খোদা অওর মুহাব্বতে নাটকের একটি দৃশ্যের সমালোচনা করেন যেখানে পাকিস্তানি টিভি অভিনেতা ইকরা আজিজ, ফিরোজ খান অভিনয় করেছেন। শর্মিলা ফারুকী নাটকের একটি ছবি পোস্ট করেছেন যেখানে অভিনেতা সোহেল সমীরের চরিত্রে নাজিম শাহকে তার স্ত্রী সাহিবাকে চড় মারতে দেখা গেছে, স্ত্রী হিসেবে সুনীতা মার্শাল অভিনয় করেছেন। তিনি বলেন শর্মিলা ফারুকী বলেন, ‘আমাদের নাটকগুলোতে কেন একজন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে এমন দেখাতে পারেনা।
‘আমাদের মেয়েদের কেন হিংস্রতা এবং শারীরিক নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়? আপনারা নাটকে যা দেখান তা আমাদের অধিকাংশ মানুষই অনুকরণ করবে। খোদা অওর মুহাব্বতের শেষ পর্বে স্ত্রী সাহিবাকে স্বামী নাজিম শাহ মাজারে মাজারে গেছে কিনা জিজ্ঞেস করে এবং এক পর্যায়ে স্ত্রীকে চড় মারেন।
ওই দৃশ্যের কথা উল্লেখ করে শর্মিলা ফারুকী লিখেছেন, এ দম্পতির মধ্যে একটি খুব স্বাভাবিক কথোপকথন হতে পারত কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের লেখকরা এরকম দৃশ্যই উপভোগ করেন যে একবার একজন পুরুষ রাগ করলে সে তার জীবনে থাকা নারীদের প্রতি সহিংসতা দেখাতে পারবে। আমরা কি এমন একজন শালীন পুরুষকে দেখাতে পারিনা যারা একজন নারীকে সম্মান করতে ও বিশ্বাস করে?
শর্মিলা ফারুকী বিনোদন শিল্পে নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে এর আগেও সমালোচনা করেছেন। অভিনেতা মির্জা গোহর রাশেদ যিনি নারীদের প্রতি সহিংসতাকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখতেন ও এটিকে পুরুষের পছন্দ বলে উল্লেখ করেন। অভিনেতা মির্জা গোহর রাশেদ বলেছিলেন নারীরা নিপীড়নের মুখোমুখি হয়না বরং তারা নিপীড়ন বেছে নেয়। শর্মিলা ফারুকি তাকে ডেকে বুঝিয়েছিলেন নিপীড়ন নারীর পছন্দ নয় বরং নারীরা নিপীড়নের মুখোমুখি হয় কারণ তাদের ‘ফিরতি আঘাত করা’ ও ‘ফিরে যাওয়ার পথ থাকেনা’।
শর্মিলা ফারুকী এর আগেও অভিনেতা মির্জা গোহর রাশেদের নাটক লাপাতায়ের একটি পর্বের ভাইরাল দৃশ্যে নিয়ে এমন মতামত দিয়েছিলেন।
শর্মিলা ফারুকী একজন পাকিস্তানী রাজনীতিবিদ। তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শর্মিলা ফারুকী পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টার দায়িত্ব ছিলেন চারবছর। তিনি পাকিস্তানের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এন এম উকাইলির নাতনী এবং উসমান ফারুকীর মেয়ে। রাজনীতিতে আসার আগে শর্মিলা ফারুকী অভিনেত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন। শর্মিলা ফারুকী পাকিস্তানি টিভি নাটক ‘পাঁচওয়া মৌসুমে’ অভিনয় করেন।