লিঙ্গীয় সমতায় বিশ্বাসী মানুষ মাত্রেই নারীবাদী। নারীবাদ পুরুষের তুলনায় নারীর বেশি অধিকার নয়,বরং নারী-পুরুষের সম অধিকারের কথা বলে।যে অধিকার আদায়ে নারীরা এখনো যোজন যোজন পিছিয়ে। এই পিছিয়ে থাকা গোষ্ঠীকে এগিয়ে আনতে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা মানে পুরুষের অধিকার হরণ নয়; বরং নারীর জন্য তার প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা। নারীবাদের অর্থ পুরুষের বিরুদ্ধে নারী নয়, কর্তৃত্ববাদী পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষ। নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারী-পুরুষ উভয়ের সহ অবস্থান নিশ্চিত করতে চায় নারীবাদ,কমাতে চায় পুরুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া বাড়তি দায়িত্ব।
নারী ক্ষমতায়ন তখনই স্বার্থক যখন পুরুষ ক্ষমতাবান নারীর সাথে বাঁচতে শিখবে। আর এই শেখাটা শুরু করতে হবে পরিবার থেকে, সন্তানের বেড়ে ওঠা থেকে। দু:খজনক হলো নারী পুরুষের সফলতায় খুশি হতে পারলেও পুরুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্র নারীর এগিয়ে যাওয়া মানতে পারে না। পরিবারে দীর্ঘ সময় কর্তায় ভূমিকায় থেকে অভ্যস্ত পুরুষ নারীকে কর্তৃত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ছোটবেলা থেকে মা,বোন, দাদীর ভূমিকায় থাকা নারীকে দাসী হিসেবে দেখে বেড়ে উঠা পুরুষ ভেবে নেয় এটাই নারীর যথার্থ ভূমিকা। মা’কে বাবার হাতে নির্যাতিত হতে দেখে ভেবে নেয় নারী নির্যাতনের লাইসেন্স আছে পুরুষের। এভাবে দশকের পর দশক ধরে পরিবার তথা সমাজে নারীদের প্রতি অন্যায়কেই স্বাভাবিক ভেবে বড় হয় এক একটা প্রজন্ম। তাই এই অসমতা দূর করতেও প্রয়োজন বাড়তি মনোযোগ; প্রয়োজন নারীবাদ।
নতুন প্রজন্মের মননে মানুষবাদ রোপন করতে হলে শেকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে পুরুষতান্ত্রিকতার বেড়াজাল। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে পিতা-মাতাকে ভূমিকা নিতে হবে। ছেলে সন্তানকে বোঝাতে হবে, নারীও মানুষ হিসেবে সেসব অধিকারের দাবিদার যা পুরুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করে আসছে। সন্তান যখন পরিবারে তাঁর বাবা মায়ের সমকক্ষতা দেখে বেড়ে উঠবে, সে নিজে বড় হয়েও নারী-পুরুষের সমতাকে স্বাভাবিকভাবে নিবে। তাই সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে,যদি প্যারেন্টিং সমতার হয়,তবে আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে মানুষবাদী করে গড়ে তুলতে পারবো যেখানে পিছিয়ে থাকা নারী বলে কোন টার্ম থাকবে না। তখন হয়তো নারীবাদেরও কোন প্রয়োজন থাকবে না।