‘তোমার তো বাবা নেই, বাবা ছাড়া মেয়ে যা করে তুমি তাই করেছ। তুমি যেসব কাপড় পর এগুলো খারাপ মেয়েরা পরে।’ রাজধানী ঢাকা নগরের বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত নারী ডাক্তার ফেসবুক ইনবক্সে নগ্ন ছবি পেয়ে হয়রানি হওয়ার পর অভিযোগ করতে গেলে তাকে এমন সব কথা শুনিয়ে দেন হাসপাতালটির চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয় অভিযোগ করতে গিয়ে থানায়ও বারবার হয়রানির শিকার হয়েছেন ওই নারী চিকিৎসক।
পরে ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি টিমের হস্তক্ষেপে বৃহস্পতিবার (৪ জুন) গ্রেপ্তার হয়েছে অভিযুক্ত মো. রিয়াদ হাসান।
করোনা পরিস্থিতিতে হাসপাতাল থেকে ফেসবুক লাইভে টেলিমেডিসিন সেবা দিতেন চিকিৎসক রুপা চৌধুরী (ছদ্মনাম)। গত মে মাসের ২০ তারিখ হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া শেষে ওয়াইফাই বিচ্ছিন্ন হওয়ায় নিজের ফেসবুক আইডি লগ আউট করতে পারেননি। বাসায় এসেও সেটি ভুলে যান। তার ঠিক সাত দিন পর মে মাসের ২৭ তারিখে তার কাছে ইভা আহমেদ নামের একটি আইডি থেকে কিছু নগ্ন ছবি পাঠানো হয় ডা.রুপার ফেসবুক ইনবক্সে। ছবি ভাইরাল করে দেওয়া হবে জানিয়ে বারংবার রুপাকে হুমকি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে অভিযোগ করতে ডা. রুপা রামপুরা থানার দারস্থ হন। ওই থানায় তিনি আশানরুপ সহায়তা পাননি। থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছেন কেন?—এই অপরাধে তাকে নানা হয়রানিমূলক কথা বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ভিকটিম নারী চিকিৎসক রুপা বলেন, ওই ঘটনার পর আমি রামপুরা থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে ডেকে নানাভাবে হয়রানি করে। অসম্মানজনক কথা বলে। রিয়াদের কথা জানালেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি তারা। উল্টো আমার পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে নোংরা ভাষায় কথা বলে। এ পরিস্থিতিতেও আমি নিয়মিত হাসপাতালে গিয়ে নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছি।
তিনি বলেন, গত ১ জুন হাসপাতালের কাজ শেষে সন্ধ্যায় আমি থানায় যাই। আমাকে এজাহার লিখতে বলা হয়। আমি অভিযোগ লিখে জমা দিলে সেটি কাটাছেঁড়া করে থানা কর্তৃপক্ষ। প্রায় চারবার আমাকে অভিযোগপত্র লিখতে হয়েছে। সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত প্রায় ১২টা অব্দি আমাকে থানায় অবস্থান করতে হয়। পরে তারা আমার অভিযোগ নেয় এবং মামলাও দায়ের হয়।
ডা. রুপা বলেন, ‘আমার এটুকুই অপরাধ আমি চিকিৎসক হিসেবে এই করোনা পরিস্থিতিতেও নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছি। মামলা দায়ের হওয়ার পর আমি কর্মস্থলে আরও হয়রানিমূলক আচরণের শিকার হচ্ছিলাম। অবশেষে ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি হস্তক্ষেপ করায় অপরাধী রিয়াদ গ্রেপ্তার হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি (ক্রাইম) ডিভিশনের অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার ধ্রুব জ্যেতির্ময় গোপ জানান, ‘দেশের অন্যতম একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে কর্মরত একজন নারী চিকিৎসক তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ফেসবুক লগ আউট করতে ভুলে গেলে তার প্রতিষ্ঠানের আইটি কর্মচারী একটি ফেক আইডি ব্যবহার করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছিল। ওই আইডটি উদ্ধার করা হয়েছে ও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ তে মামলা দায়ের হয়েছে।’
ভিকটিমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আয়শা সোনিয়া বলেন, ফেসবুকে নগ্ন ছবি পাঠিয়ে নারী চিকিৎসক রুপাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও ভয় দেখাচ্ছিল আসামি রিয়াদ। রিয়াদ ডা. রুপার ছবি ভাইরাল করে তাকে ‘দেহ-ব্যবসায়ী’ বলে দুর্নাম ছড়ানোর হুমকিও দিয়েছে। ৪ জুন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমরা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেব।’
ডব্লিউভি/এসএস