নির্ধারিত দিনের আগেই নিজেকে বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করলেন ভারতের গুজরাটের মেয়ে ক্ষমা বিন্দু। ইন্সটাগ্রামে হলুদ ও বিয়ের ছবি পোস্ট করেছেন তিনি। শুধু বিয়েতেই শেষ নয় নিজের সাথে হানিমুনেও যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ২৪ বছরের এ তরুণী। কথা ছিল ১১ জুন বিয়ে করবেন এই ইন্সটাগ্রাম সেলিব্রেটি। তবে ঘোষিত দিনের তিনদিন আগেই মন্ডপে বসে নিজের কপালজুড়ে সিঁদুর রাঙিয়ে নিজেকেই দিলেন হিন্দুরীতির বিয়ের সাতটি অঙ্গীকার। ক্ষমা বলেছেন, বিয়ের পরে নারীর জীবনের অনেককিছু পাল্টে গেলেও আমার জীবনের কিছুই বদলাবে না। আমি নিজের কোন বিষয় নিয়ে আপস করতে হচ্ছে না কারও সাথে।
গুজরাতের এ তরুণীর নিজেকে বিয়ের ঘোষণার পর নতুন করে আলোচনা উঠেছে নিজগামিতা নিয়ে। নিজগামিতা কী তবে নতুন কোন যৌন আকর্ষণের ধরণ?
সোলোগামি অটোগামি বা নিজগামিতা ব্যাপারটা আসলে কী?
কিছু মানুষ সম্পর্ক বা পারিবারিক প্যাটার্নে নিজেকে একক ও স্বাধীন সত্তা হিসেবেই পরিচিত করতে পছন্দ করেন। অন্যদিকে তারা বিয়ের সামাজিক রীতিগুলোকে ভালোবাসেন। একা থাকা যাবে আবার বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতাও করা যাবে এমন বিয়ের নামই নিজগামি বিয়ে। এ ধরনের বিয়েতে সামাজিক ও ধর্মীয় সব আচারই অনুসরণ করা হয় তবে এক্ষেত্রে ওই ব্যাক্তি নিজেই নিজের সাথে এসব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। এটি একটি ট্রেন্ড।
তবে সমালোচকেরা বলেছেন নিজগামিতা হল নার্সিসিস্ট ব্যাক্তিত্ব ও নিজেকে নিয়ে অবসেসড হওয়া।
নিজগামিতার এ ব্যাপারটি এলো কীভাবে?
নিজগামীতার ইতিহাস খুব দূরের নয়। ১৯৯৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ডেন্টাল হাইজিনিস্ট লিন্ডা বেকার নিজেকে বিয়ে করে নিজগামীতার এ তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন। লিন্ডা বেকারের স্ব-বিবাহের এ আয়োজনে তার প্রায় ৭৫জন বন্ধু উপস্থিত ছিলেন। ওই বিবাহে খ্রিস্টান রীতি অনুসরণ করে শুভ্র গাউনে সজ্জিত হয়ে লিন্ডা বলেছিলেন, ‘আই ডু’।
২০১৬ সালে একজন ব্রাজিলিয়ান মডেল ক্রিস গ্যালেরা নিজেকে বিয়ে করার পর মাত্র ৯০ দিনের মাথায় নিজ ব্যতীত অন্য একজনের প্রেমে পড়েছিলেন। তবে নিজগামীতায় বিয়ের বিষয়টি থাকলেও নিজেকে ডিভোর্স দেওয়ার কোন রীতি নেই।
নিউইয়র্কে লেখক অ্যানা ডিন ২০১৬ সালে নিজেকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন নিজগামীতা র্যাডিক্যাল ফেমিনিজমকে পোট্রে করে। তার কথায়, ’নিজগামী বিয়েতে আমরা শুধু একটি পিতৃতান্ত্রিক চক্রান্ত ব্যবহার করছি। বিয়ের এমন কিছু বিষয় যা পিতৃতান্ত্রিক। নিজগামী বিয়ে দিয়ে বিষয়টিতে সম্মত হয়ে ও গ্রহণ করে সেটা নিজেদের উপরই প্রয়োগ করেছি।
২০০৩ সালে ধারবাহিক সিরিজ ‘সেক্স ইন দ্য সিটি’র একটি পর্বে নিজগামী ধারণাটিকে প্রচার করে। ওই শোয়ের প্রধান চরিত্র নারীটি নিজেকে বিয়ে করার বিষয়ে চিন্তা করেছিল।

নিজগামী বিয়ের এমন ট্রেন্ডে পুরুষের চেয়ে নারীরাই বেশি আগ্রহী হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়া তাইওয়ানের পরে প্রথম ভারতীয় নারী ক্ষমা বিন্দু নিজগামীতার এ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন?
নিজগামিতা কী একগামি বহুগামিতার মত কোন যৌন পরিচয়?
অযৌন হওয়া বা উভগামী হওয়া বা একগামিতা বহুগামিতার মত নিজগামিতা কোন যৌন পরিচয় নয়। নিজগামী নারীরা প্রেমে পড়তে পারেন এমনকী স্বাভাবিক নিয়মে বিয়েও করতে পারেন। কারণ নিজগামিতা শরীরবৃত্তীয় কোন ব্যপার নয়। অন্তত এ পর্যন্ত এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রেমের সম্পর্ক বা বিয়ের ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই নিজগামিদের। এটি একটি সামাজিক ট্রেন্ড এবং অনেকে এটি নিজেকে ভালোবাসার উদযাপন হিসেবে দেখেছেন। তারা প্রেমের সম্পর্কে থেকেও নিজেকে বিয়ের উৎসব করতে পারেন।
নিজগামী বিয়ের আইনি অবস্থান কী?
বিয়ে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি। ওই চুক্তি বলবৎ করার জন্য আইন প্রয়োজন। নিজগামিতার ক্ষেত্রে পুরো চুক্তিটাই নিজের সাথে। অথবা এটিকে বলা যায় কেবলই উদযাপন। তাই পৃথিবীর কোন দেশে নিজগামি বিয়ের বৈধতা বা অবৈধতা নিয়ে কিছু বলা নেই। এটি একটি সামাজিক উদযাপন। এর কোন আইনি ভিত্তি নেই। আবার বিয়ে বা প্রেমে পড়তে গেলে নিজগামি নারীকে নিজেকে ডিভোর্স দেওয়ার কোন আইনি জটিলতাও নেই।
নিজগামী বিয়ে কী নারীবাদের সাথে সম্পর্কিত?
এ বিষয়ে ২০১৬ সালে নিজেকে বিয়ে করা লেখক অ্যানা বলেছেন, নিজগামি বিয়ে পুরুষতন্ত্রের নিয়মকে ব্যঙ্গ করে। সব থেকে বড় কথা হল নিজেকে ‘আই ডু’ বা ‘হ্যা’ বলার মধ্যে একটি স্বাধীন সত্তা রয়েছে। তার মতে এটি মোটেও নার্সিসিস্ট আচরণ নয়। এটি নিজের সাথে নিজের অংশীদারিত্বের উদযাপন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করে আমি মূলত পুরুষতান্ত্রিক চক্রান্তকে নিজের পক্ষে এনে ব্যবহার করেছি। তিনি বলেন নিজেকে ভালোবাসা এই সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।