নোয়াখালীতে স্বামী হত্যায় স্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড, শ্বশুর-শাশুড়ির যাবজ্জীবন
হতভাগ্য ওই ব্যক্তি খুনী স্ত্রীর সাথে বিয়েতে বাঁধা পড়েছিলেন ঠিক ১৩ বছর আগে। স্বামী ছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তাদের সংসারে ছিল ৩ সন্তানও। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্বামীর ভাইয়ের সম্পদের প্রতি ছিল তার লোলুপ দৃষ্টি। ইতালি প্রবাসী ওই ভাই নিজের ভাইয়ের ভরণপোষণের টাকা পাঠাতেন। স্বামীর ভাইয়ের ঢাকার বাড়ি লিখে না পেয়ে স্বামীকে গরম তেলে পুড়িয়ে মেরেছিলেন ওই স্ত্রী। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নির্মম এ খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৮ সালের ৩ মে। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই নারী ও যাবজ্জীবন পাওয়া মা এখনও পলাতক।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্বামীকে গরম তেলে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে স্ত্রীকে ফাঁসি ও শ্বশুর-শাশুড়িকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি,২০২১) দুপুরে নোয়াখালী বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ সালেহ উদ্দিন আহমদ এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নারীর নাম বিবি কুলসুম। তার বাবা আবুল হোসেন ও মা লিলি বেগমকে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি গুলজার আহাম্মদ জুয়েল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এজাহার থেকে জানা যায়, নোয়াখালী বেগমগঞ্জ উপজেলার নরোত্তমপুর গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শহীদ উল্যাহর সঙ্গে ১৩ বছর আগে একই গ্রামের আবুল হোসেনের মেয়ে বিবি কুলসুমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে ৩টি সন্তান জন্ম নেয়। শহীদ উল্যাহর বাবা-মার ঢাকায় ৫ তলা বাড়ি এবং নোয়াখালীতে জায়গা সম্পত্তি রয়েছে। শহীদ উল্যাহর ১ ভাই ইতালি প্রবাসী। তিনি শহীদ উল্যাহর ভরণপোষণ ও চিকিৎসার জন্য ২০১৮ সালে ১ লাখ টাকা পাঠান। ওই টাকা কুলসুমের বাবার কাছে রাখা ছিল। স্বামীর নামে থাকা ঢাকার বাড়ির একটি ফ্ল্যাট লিখে দেওয়ার জন্য শহীদ উল্যাহকে চাপ দিতে থাকেন কুলসুম। রাজি না হওয়ায় স্ত্রী কুলসুম স্বামীর ওপর ক্ষিপ্ত ও প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠেন। এরপর ২০১৮ সালের ৩ মে সকালে শহীদ উল্যাহ বাড়ির পাশে বাজারে যান। সেখান থেকে কুলসুম তাকে ডেকে এনে পুনরায় টাকার জন্য চাপ দেন। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। স্ত্রীর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গরম তেল শহীদ উল্যাহর শরীরে ঢেলে দিয়ে পালিয়ে যান। তাকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন প্রতিবেশীরা। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ১২ মে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিনই তিনি মারা যান।
সরকারি কৌঁসুলি গুলজার আহাম্মদ জুয়েল জানান, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবুল হোসেন ও তার স্ত্রী লিলি বেগমকে ৫০ হাজার টাকা করে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। কুলসুম বেগম ও তার মা লিলি পলাতক রয়েছেন।