আমার পরকীয়া সয়েছিল সে। সে একা ছিল। আমি আমার প্রেমিকার সাথে। আমি ভাবতাম আমি তাকে বললেই ফিরে পাব। হায় এ জীবন আমি কেন বুঝিনি ? আমি কবির। এটি আসল নাম নয়।
আমার এখনও মনে আছে কীভাবে সুমীকে আমি বিয়ে করে লন্ডনে নিয়ে এসেছিলাম। দুটি ফুটফুটে সন্তানের বাবা মা হয়েছিলাম আমরা। আমার স্ত্রী সুমি আগলে রেখেছিল পুরো সংসারটাকে। আমার এখনও মনে পড়ে সুমি কখনও আমাকে বেশি টাকার জন্য বিরক্ত করেনি। আমি অনলাইন ডেটিং, প্রেম বা স্ট্রেন্জার কেউ হলেও যৌনতায় জড়াতাম। এটিকে আমার খারাপ মনে হত না। কারণ আমি ভাবতাম সংসারের জন্য আমি আয় করি। নিজেকে সুখ দেওয়ার স্বাধীনতা আমার থাকা উচিত। যা কিছু আমার জীবন ছিল কিছুটা গোপন কিছুটা সবার জানা। দেশেও অনেক আত্মীয় জানতো আমার স্বভাব। আমার জীবন ছিল খোলা চিঠি তবে তা কখনও জানতে চায়নি সুমি। সুমি কখনও আমার গোপনীয়তায় উঁকি দেয়নি। এটা বোধ হয় তার ভুল ছিল!
আমাদের ৯ বছরের বিবাহবার্ষিকীর ঠিক দুমাস আগে থেকে আমি অন্য একটি সম্পর্কে জড়াই। সবাই যেটির নাম পরকীয়া দেয় আমার কাছে সেটি ভালোবাসা, মনে হচ্ছিল সত্যিকারের ভালোবাসা।
আমাদের ৯ বছরের বিবাহবার্ষিকীর ঠিক দুমাস আগে থেকে আমি অন্য একটি সম্পর্কে জড়াই। সবাই যেটির নাম পরকীয়া দেয় আমার কাছে সেটি ভালোবাসা, মনে হচ্ছিল সত্যিকারের ভালোবাসা। সপ্তাহের অন্তত দুটি রাত আমি ও আমার প্রেমিকা লিয়ানা শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা ঘুরতাম ও বিভিন্ন হোটেলে রাত কাটাতাম। আমি থাকা সত্বেও আমার স্ত্রী সুমি ছিল সিংগেল মাদার। ডিভোর্সের এখন ১৭ বছর পেরিয়েছে। আমার বাচ্চারা এখন কৈশোরে। আমি এখনও তাদের কেবল অকেশনালি দেখতে পাই।
পরকীয়া ও বিশ্বাসভঙ্গ
আমার সাথে যখন লিয়ানার দেখা হয়। আমরা একে অপরকে জানি। সেও ছিল বিবাহিত তারও সন্তান ছিল। আমরা যেন খুব মিল খুঁজে পাই পরস্পরের। আমরা ফেসবুকে বন্ধু হই। দিনরাত চ্যাট করতাম।খুব শিগগির আমরা প্রেমে পড়ি। আমি বরাবরেই নার্সিসিস্ট। আমার মনে হতো—লিয়ানা আমাকে পেয়েছে।
অথচ এই আমাকে খুশি করতে সুমি কত কিছুই না করেছিল। আমি খুশি ছিলাম না। আমি বাসায় ফিরতে চাইতাম না। বাসায় ফিরলে স্ত্রীর সাথে কদাচিৎ কথা বলতাম। সুমি তার শরীরে একগাদা মাংস চড়িয়েছে। আদার মতো এখানে সেখানে। তাকে দেখতে আমার ঘেন্না লাগতো। অথচ আমি কখনও বোঝার চেষ্টা করিনি সুমি হতাশ হয়ে পড়েছিল, ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।আমি তাকে কোন মনোযোগ দিলাম না। অনলাইন রোম্যান্স, হোটেলের শরীর খেলায় আমি আমার অবসরটুকু আনন্দে কাটাতাম।
অথচ এই আমাকে খুশি করতে সুমি কত কিছুই না করেছিল। আমি খুশি ছিলাম না। আমি বাসায় ফিরতে চাইতাম না। বাসায় ফিরলে স্ত্রীর সাথে কদাচিৎ কথা বলতাম। সুমি তার শরীরে একগাদা মাংস চড়িয়েছে। আদার মতো এখানে সেখানে। তাকে দেখতে আমার ঘেন্না লাগতো। অথচ আমি কখনও বোঝার চেষ্টা করিনি সুমি হতাশ হয়ে পড়েছিল, ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।আমি তাকে কোন মনোযোগ দিলাম না। অনলাইন রোম্যান্স, হোটেলের শরীর খেলায় আমি আমার অবসরটুকু আনন্দে কাটাতাম।
সুমিকে আমার স্বামীর উপর বসে খাওয়া নারী মনে হত। অন্যদিকে লিয়ানা ছিল ছিপছিপে গড়নের খুব মেনটেন করা এক আত্মবিশ্বাসী নারী। আমি বিশ্বাস করতাম সুমি আমাকে ভালবাসে না। আমার টাকা চায়।এভাবেই আমি নিজেকে বোঝাতাম আমি যা করছি ঠিকই করছি।
সুমি ব্যস্ত থাকত আমাদের বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া, আমাদের খাবার তৈরি, কাপড় ধোয়া, হোমওয়ার্ক, প্রজেক্টস, বাচ্চাদের খেলাধুলায় শাটলিং করাতে। সপ্তাহ শেষে আমি তাকে কোন আনন্দ অফার করিনি, বিশ্রাম অফার করিনি।
হঠাৎ একদিন আমি লিয়ানাকে নিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। হঠাৎ করেই। এমন ঘটনা কেউ আঁচ করতে পারেনি। সুমি তো নয়ই আমার বাবা মাও না। ওই দিনটিতে আমি লিয়ানাকে নিয়ে অন্য একটি স্টেটে চলে যাই। বাচ্চাদের কাস্টডি আমার চাওয়াই ছিল না। আমার স্ত্রী সুমি তা বিনা বাধায় পেল। সপ্তাহ শেষে বাচ্চাদের সাথে দেখা করা ও খরচ দেওয়ার শর্তে আমরা বিচ্ছেদে গেলাম। সুমি হয়ে গেল আমার প্রাক্তন স্ত্রী।
আমার স্ত্রী সুমি তা বিনা বাধায় সন্তানদের কাস্টডি পেল। সপ্তাহ শেষে বাচ্চাদের সাথে দেখা করা ও খরচ দেওয়ার শর্তে আমরা বিচ্ছেদে গেলাম। সুমি হয়ে গেল আমার প্রাক্তন স্ত্রী।
লিয়ানার সাথে ১০ বছর
আমার কথাই গুরুত্ব রাখে। কারণ আমার টাকায় বাবা মা চলে আমার টাকায় আমার প্রাক্তন স্ত্রীকেও চলতে হয়। তাই আমার কথা এখানে শেষ কথা।
পরকীয়াকে আমি স্বীকৃত করে নিয়েছিলাম বন্ধু মহলে। অনেকটা পরিবারেও। না মানলেও সবাই নিমরাজি ছিল। কারণ আমার টাকায় বাবা মা চলে আমার টাকায় আমার প্রাক্তন স্ত্রীকেও চলতে হয়। তাই আমার কথা এখানে শেষ কথা। সুযোগটি আমি নিয়েছিলামও। আমার দুই ছেলে ও আমার বাবামাকে লিয়ানার সাথে কথা বলতে হত। ভদ্রভাবেই।
যাক সে কথা। লিয়ানার সাথে আমার তুমুল একটা যৌন জীবন ছিল। আমি অনেকের সাথেই শরীরী মিলনে গিয়েছি। কিন্তু আমি ও লিয়ানা মিলিত হলে মনে হত আমরা দুটো আত্মা সংযুক্ত করছি। আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু করছি। প্রতিদিন মনে হত এটার জন্যই আমি সারাজীবন কাতর ছিলাম। না আমরা কখনও বিয়ে করিনি। লিয়ানা ও আমার বিয়েতে বিশ্বাস ছিল না। অন্যদিকে আমার প্রাক্তন সুমি বিয়ে করেনি। আমাদের ছিল কমন ফ্রেন্ড সার্কেল। সুমি বিয়ে করেনি এটাতে আমার গর্ব হত। আমি ভাবতাম ওর মত স্থূল খিটমিটে মেজাজের মেয়েকে কে বিয়ে করবে।
সুমি লিয়ানাকে কখনও শুভেচ্ছা বার্তা দেয়নি। এমন কী একদিন দেখাও করেনি। আমি সেটি চেষ্টা করতাম। আমি চাইতাম সুমিকে দেখাই আমি কী ডিজার্ভ করি! সুমি আসেনি তাই তাকে আমি আরও বেশি ঘৃণা করতাম। খুব চাইল্ডিশ ও ঈর্ষাপরায়ন নারী মনে হয়েছিল সুমিকে।
সুমি লিয়ানাকে কখনও শুভেচ্ছা বার্তা দেয়নি। এমন কী একদিন দেখাও করেনি। আমি সেটি চেষ্টা করতাম। আমি চাইতাম সুমিকে দেখাই আমি কী ডিজার্ভ করি! সুমি আসেনি তাই তাকে আমি আরও বেশি ঘৃণা করতাম। খুব চাইল্ডিশ ও ঈর্ষাপরায়ন নারী মনে হয়েছিল সুমিকে। সুমি আসলে (বিট্রেড) প্রতারিত অনুভব করেছে। যা আমি বুঝতে চাইনি কখনোই। আমি লিয়ানার সাথে সময় কাটানোর ছবি ফেসবুক ইন্সটায় শেয়ার করতাম। আমার অদ্ভূত ভালো লাগত। ৬-৭ বছর এমনই দুর্দান্ত কেটে গিয়েছিল।
একসময় আমার ও লিয়ানার ‘হানিমুন’ ফুরাল। অকারণ তর্ক হত। ছোট ছোট অমিলে আমরা দূরে যেতে থাকি। না আমি লিয়ানাকে ছাড়িনি। আমি ভেবেছিলাম এটা সামান্য সমস্যা। তবুও আমি লিয়ানার শরীরে ঝাঁপিয়ে পড়তাম সে আমার শরীরে। সব বিবাদ আমাদের যৌনতায় এসে ফুরাত।
উপলব্ধি
একদিন হঠাৎ করে আমি উপলিব্ধি করি আমি আসলে আমার প্রাক্তন স্ত্রী সুমিকে মিস করছি। আমি তাকে ভালবাসিনি সময় দিইনি। যা কিছু আমি লিয়ানার জন্য করেছি তা কখনই সুমির জন্য করিনি। আমি ফিরে যেতে চাইলাম স্ত্রীর জীবনে। কারণ আমি জানতাম সুমি ডেট করেছে অনেকের সাথে কিন্তু কারও সাথে পূর্ণাঙ্গ জড়ায়নি। এ বিষয়টি আমাকে প্রশ্রয় দিয়েছিল সুমির কাছে যেতে।
কিন্তু আমি প্রচণ্ড ভুল ছিলাম। অনেকগুলো বছর কেটে গিয়েছে। আমার বাচ্চাদের বড় হওয়া আমি দেখতে পারিনি। বাচ্চাদের ছোট ছোট খুনসুঁটি আমি দেখতে পারিনি। তাদের সাথে আমি থাকিনি। আমি তাদের অকেশনাল বাবা। তাদের মাকে আমি জীবযুদ্ধে একা ছেড়ে গেছিলাম। হ্যা আমি টাকা দিয়েছিলাম। তবে পরিবারের বাইরে থাকা এই বাবা কখনও জানেনি একজন একা মায়ের খরচ কী? আমি যখন লিয়ানার সাথে ভাল রেস্ট্যুরেন্টে চেক ইন করছি তখন হয়ত আমার প্রাক্তন বাসি ডাল ভাজি খাচ্ছিল। সুমি আমাকে লিয়ানার সাথে যেতে আটকায়নি। কিন্তু সেদিন আসলে আমার পরিবার জীবনের কবর রচনা হয়ে গিয়েছিল।
অনুশোচনা
আমি সুমির কাছে ফিরতে চেয়েছিলাম। সে প্রত্যাখ্যান করেছিল। এরপর সুমি আরও দুই বছর সিংগেল থেকেছে। আমি ভাবতাম ওর অভিমান ভাংবে একদিন, আমিও পরিবারে ফিরব। কিন্তু সেটি ঘটেনি। এরপর যা ঘটেছে তা আমার সন্তান ও সুমির জন্য ভাল ছিল, চমৎকার ছিল। কিন্তু আমি আরও ভেতরে একা হয়ে পড়ি নিজের অনুশোচনা নিয়ে।
আমার প্রাক্তন স্ত্রী তার প্রেম ফিরে পায়। সেটি ছিল নতুন প্রেমের মতোই। সামি ছিল অনেকটাই যুবা। আমার স্ত্রী ৪৩ সে ছিল ৩৯। একদিন ফেসবুক পোস্টে সামির সাথে তার ছবি দেখে আমি খুব কষ্ট অনুভব করেছিলাম, মনে মনে রেগে গিয়েছিলাম হয়তো বিট্রেডও ফিল করেছি। আমি জানি না সেটি কেমন যেন আচমকা এক ধাক্কা। তখনও আমি ভেবেছি এটা কোন সিরিয়াস কিছু নয়। সুমি আমার। সে আমার কাছে ফিরবে।
অবশেষে আমি বুঝি যখন বেশ ধুমধাম করে ওদের বিয়ে হল। বাচ্চারা সে অনুষ্ঠান উপভোগ করল। আমি সেদিন মদ্যপ হয়েছিলাম। আমি ক্ষুব্ধ ছিলাম। এরপর থেকে আমি ওই ফেসবুকেই তাদের সুখী পরিবার দেখতে থাকি। সামির সাথে আমার বাচ্চারা দারুণ এনজয় করে। তারা ট্র্যাকিং-এ যায়। সার্ফিং করে। বাগোনে খেলে। যেন সামিই তাদের আসল বাবা। আমি কোথাও নেই। যেন কখনও ছিলাম না।
আমি বুঝি আমার দুটি ছেলে আমার জন্য স্রষ্টার অশেষ দান ছিল। সামির পরিবার আমার স্ত্রীর পরিবার সবাই আমার বাচ্চাদের ভীষণ ভালোবাসে। আমার প্রাক্তন স্ত্রীর ওজন ঝরেছে। সুখে তার চেহারা জ্বলজ্বল করে। আমার হৃদয় ছিড়ে যায়। আমি বুঝি এটাই আমার প্রাপ্য ছিল।
এখন আমি উপলব্ধি করি লিয়ানা আমার তুমুল যৌনতা ছিল। সে আমার যা কিছুই ছিল ভালবাসা ছিল না।
আজ আমি ৫০ পেরিয়েছি। একা থাকি। মাঝে মাঝে আমার বাচ্চাদের দেখতে যাই। তারা এখন বড়। আমি ভাবি তারা কী মনের ভেতর থেকে আমাকে ঘৃণা করে? একদিন তাদের মাকে আমি ছেড়ে গিয়েছিলাম। এখন আমি উপলব্ধি করি লিয়ানা আমার তুমুল যৌনতা ছিল। সে আমার যা কিছুই ছিল ভালবাসা ছিল না। লিয়ানা আমার বাচ্চাদের মা ছিল না। হায়! আমার সত্য ভালবাসা।
এখানে আমার আসল নামটি আমি স্কিপ করে গেছি। আমি না হয় অদৃশ্যেই থাকি!
রাইয়ান কবির- লেখকের ছদ্মনাম