মাথায় কালো স্কার্ফ মুড়ে নিয়ে পুরুষ খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ। সুদানের পুরুষ ফুটবল দলের কোচ। সালমা আল মাজিদি। যাকে শুনতে হয়েছে ‘তোমার কী বাবা নাই, ভাই নাই? তোমাকে শাসন করার কেউ নেই পরিবারে?’ এসব টিপ্পনিতে আঘাত পেলেও দমে যাননি সালমা।
সুদানের ইসলামী ফিকহ কাউন্সিল নারীর ফুটবল খেলাকে “অনৈতিক কাজ ” বলে মনে করে একটি ফতোয়া জারি করেছিল। ৩০ বছর ধরে ধর্মীয় রক্ষণশীলতার নিষেধে আটকা পড়ে ছিল নারীর ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন।
যে সমাজ মনে করে নারী ঘরেই থাকবে, রান্না ও সন্তান জন্ম দেবে। বাকী সব কাজেই মানা। শৃংখলিত ও কড়া নিষেধের ওই সমাজের নারী হয়ে কী খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা যায়? নিষেধাজ্ঞার শেকলে আকুণ্ঠ আটকে পড়েও সালমার ভালবাসা ছিল ফুটবলের জন্য। যেন ফুটবলই তার একমাত্র গন্তব্য। সালমা আলমাজিদি বুঝে গিয়েছিলেন নারীর জাতীয় দল হওয়া আর সেখানে তিনি খেলবেন এমন চিন্তা যে ওই মুহূর্তে একেবারেই অসম্ভব।
তাই অসম্ভবের স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখতে ৩২ বছর বয়সী আরব নারী সালমা হলেন আরব বিশ্বের প্রথম নারী ফুটবল কোচ। শুধু তাই নয় তিনি সুদানের পুরুষ ফুটবল দলের প্রশিক্ষক। স্নেহ করে তাকে সিস্টার কোচ বলে ডাকে পুরুষ খেলোয়াড়রা।
ফুটবলের প্রতি দুর্নিবার প্রেম এমন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। সালমা বলেন ১৫ বছর আগে প্রেমে পড়েছিলাম ফুটবলের। তিনি বলেন ফুটবল তার প্রথম ও চূড়ান্ত ভালবাসা।
পুরুষশাসিত ভুখন্ডে পুরুষের কড়া নিয়মের মধ্যে থেকেও নারীর স্টেরিওটাইপ ও কম্ফোর্ট ক্যরিয়ারে না জড়িয়ে নিয়েছিলেন সবচেয়ে চ্যলেঞ্জিং সিদ্ধান্তটি।
বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, সালমা সুদানের আল নাসর টেকনিক্যাল কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টস এবং ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজে স্নাতক পাশ করেন।
তিনি সুদানের আল নাসর ওমদুরমান ফুটবল ক্লাবের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং কোচিংয়ে আফ্রিকান “বি” ব্যাজ পেয়েছেন, যা তাকে আফ্রিকা মহাদেশের যেকোনো প্রথম লীগ দলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার অনুমতি দেয়।
সালমা স্বপ্ন দেখেন একদিন তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্লাবের কোচ হবেন। পুরুষের নিয়মকানুন আইনের মধ্যে থেকেও নারীর জন্য লিঙ্গ সমতার লড়াই অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গেছেন সালমা আল মাজিদি।