প্রথম নারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হয়ে নাজমা বেগম আবারো ‘প্রথম’ হওয়ার ইতিহাস গড়লেন। নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী নাজমা বেগম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোর থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের জন্যও এটি মাইলফলক। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমা বেগম এর আগে ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্স শাখার ‘প্রথম নারী কমান্ডার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিই ‘প্রথম সেনা চিকিৎসা ব্যবস্থা’র ‘প্রথম সহকারী পরিচালক’ পদ পান। তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতিসংঘের নারী কন্টিনজেন্টকে ‘প্রথম নারী কন্টিনজেন্ট কমান্ডার’ হিসেবে। পৃথিবীর ইতিহাসে ‘নাজমা বেগমই প্রথম’ নারী যিনি লেভেল-২ পর্যায়ের সামরিক হাসপাতালের পরিচালক হয়েছিলেন দুই দুইবার। বাংলাদেশের হয়ে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অংশ নেওয়া জ্যেষ্ঠ নারী সামরিক কর্মকর্তা হিসেবেও নাজমা বেগম নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে চাকরিকালীন তিনি দুটি (বিমানঘাঁটি জহুর এবং বেস বাশার) বেসে মেডিক্যাল স্কোয়াড্রন কমান্ড করেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তিনি ফোর্স কমান্ডার, এসআরএসজি, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের সেনাপ্রধান এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রশংসাপত্র পান। ব্রিগেডিয়ার নাজমা বেগম ২০১৬ এবং ২০১৯ সালের জন্য ‘মিলিটারি জেন্ডার অ্যাডভোকেট’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমা বেগমের অবদানের কথা উল্লেখ করে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত (এসআরএসজি) বলেন, ‘ইতিহাস বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল কন্টিনজেন্টের অবদানটাই শুধু স্মরণ করবে না, বরং সর্বপ্রথম নারী কমান্ডার হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েশন (এমবিবিএস) শেষ করে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন নাজমা বেগম। এরপর তিনি গণস্বাস্থ্য (মাস্টার্স ইন পাবলিক হেলথ) বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এছাড়াও তিনি সেনাবাহিনী থেকে অ্যাডভান্স অফিসার কোর্স করেন। এছাড়াও মেডিকেল সোনোগ্রাফিতে ডিপ্লোমা ও একই বিষয়ে অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। মা ও শিশু স্বাস্থ্যে বিষয়ে পিএইচডি করেন নাজমা বেগম। সামরিক দায়িত্ব পালনকালে তিনি হাজার রোগীর চিকিৎসা করেন।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কমিশনের ওএনউসিআইয়ের একটি সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সের কমান্ডার ছিলাম যা নারী অফিসার হিসেবে প্রথম ছিল। একজন লেখক হিসাবে আমি ৫২টি বই লিখেছি। আমার লেখার বিষয়ে ছিল উপন্যাস, কবিতা, চিকিত্সা বিজ্ঞান, ভ্রমণ, শিশুতোষ বই।’
তিনি যোগ করেন, ‘আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করেছিলাম কারণ নিজেকে একজন ‘রোল মডেল’ হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরেছি। আমার বিশ্বাস এটি বিশ্বের নারীদের ক্ষমতায়িত করতে সাহায্য করবে। ঠিক যেমনটি নারী নিখুঁতভাবে সেনা কন্টিনজেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে আমি বিশ্বাস করি ঠিক সেভাবেই নারী চাইলে পুরো বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমি খুব গর্বিত কারণ আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী পাশাপাশি সংসদের স্পিকারও নারী।’
আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে কোনও পুরুষ প্রতিপক্ষের মতো আমি যে কোনও চ্যালেঞ্জকে কাটিয়ে উঠতে এবং একই কাজ একই পরিস্থিতিতে করতে পারি; শান্তির পাশাপাশি যুদ্ধের সময়ও। অধিকন্তু, আমি বিশ্বাস করি যে নারী শান্তিরক্ষীরা কমান্ড থেকে সামনের সারির ভূমিকা পর্যন্ত কেবল তাদের পুরুষ প্রতিযোগীদের মতো একই কাজ এবং সক্ষমতা অর্জন করতে সক্ষম নয়; তারা সামরিক অভিযানের একটি অতিরিক্ত মূল্যও নিয়ে আসে।
তিনি বলেছিলেন, ‘নারী হিসেবে আমি মোটেই কোনও অসুবিধা অনুভব করিনি, তবে আমি নিশ্চিত যে বিশ্বব্যাপী নারীর যথাযথ ও সঠিক অবস্থান অর্জন এখনও অসম্ভব। জাতিসংঘে মহিলা শান্তিরক্ষী মিলিটারিতে কেবল ৫ শতাংশ নারী এবং পুলিশে রয়েছে ১০ শতাংশ। এখনও অনেক স্থান রয়েছে যেখানে নারীর কোনও বক্তব্য নেই বা সম্মান দেওয়া হয় না। উপরন্তু তারা পারিবারিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ধর্মীয় বাধার সম্মুখীন হন।’