বেহেশতা আরঘান্ড। তিনি আফগানিস্তানের প্রথম নারী সাংবাদিক কাজ করছিলেন টোলো নিউজ নেটওয়ার্কে। কাবুলের পতনের পর তালেবান নেতার সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী প্রথম নারী সাংবাদিক হিসেবে তিনি সারা বিশ্বে অন্যরকম শিরোনাম তৈরি করেছিলেন। তার সাক্ষাতকারটি মানুষকে অনেককেই ভাবতে বাধ্য করেছিল যে জঙ্গিরা সত্যিকার অর্থেই কী নারীর অধিকারের প্রতি কিছুটা সহনশীল ও নারীর প্রতি সম্মানজনক মনোভাব গ্রহণ করেছে কী না।
কিন্তু আফগান টেলিভিশন উপস্থাপক বেহেশতা আরঘান্ডেএ সেই ঐতিহাসিক সাক্ষাতকারের পরের দিনগুলোতে তালেবান শাসনের আসল রঙ বেরিয়ে এসেছিল। তার জীবন এবং স্বাধীনতার জন্য ভয় নিয়ে ২৪ বছর বয়সী মেয়েটি কাতারে পালিয়ে গিয়ে বর্ণনা করেছিল যে কীভাবে তালিবানরা ইতিমধ্যে নারী সাংবাদিকদের উপর অত্যাচার করছে।
কাতার থেকে রয়টার্সকে বেহেশতা বলেন, ‘নারীকে মানুষরুপে তালেবানরা মেনে নেয় না।’ ‘যখন একদল মানুষ আপনাকে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করে না, তখন তাদের মনে আপনার জন্য কিছু দৃষ্টিভঙ্গি থাকে আর এটা খুব কঠিন।’
![YouTube video](https://i.ytimg.com/vi/Nwc2FtrtaYw/hqdefault.jpg)
তালেবানের সরাসরি সম্প্রচারের জন্য একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আরঘন্ডের টেলিভিশন সাক্ষাৎকারটি ছিল তালিবান জঙ্গিদের জন্য একটি প্রচার অভ্যুত্থান যা সারা বিশ্বে তাদের অন্যভাবে শিরোনাম করে তুলেছিল।
রয়টার্স সূত্রে জানা গেছে, কাবুল পতনের দুই দিন পর ১৭ আগস্ট বিনা নিমন্ত্রণে টেলিভিশন স্টুডিওতে উপস্থিত তালেবান কর্মকর্তা এবং সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুরোধ জানান।
বেহেশতা আরঘন্ড বলেন, ‘আমি দেখেছি যে তারা টোলো নিউজ টেলিভিশন স্টেশনে চলে এসেছে। আমি হতবাক হয়ে গেলাম ও আমি আমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললাম। আমি মনে মনে ভাবলাম যে তারা হয়তো জিজ্ঞাসা করতে এসেছে যে আমি কেন স্টুডিওতে এসেছি?’
মানসিক একটা ধাক্কা খেলেন আরঘান্ড। তা সত্ত্বেও, তিনি নিকের মাথার স্কার্ফ ঠিক করেছিলেন, তার শরীরের কোন অংশ যেন দেখা যাচ্ছে না তা নিশ্চিত করার জন্য তার জামাকাপড়ও পরীক্ষা করেছিলেন এবং পরে তার প্রশ্নগুলি শুরু করেছিলেন।
সেই শান্ত অথচ সাবলীল কথোপকথন দিয়ে বেহেশতা প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু আরঘান্ড বলেছিলেন যে অফ ক্যামেরা, তালেবানদের চোখে পড়েন তিনি ও তার জীবন অচিরেই দুর্বিষহ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। সেদিনই তালিবানরা টোলো নিউজকে নির্দেশ দিয়েছিল যে সব নারীকে হিজাব পরতে হবে, মেয়েটি স্কার্ফ তাদের মাথায় রেখেছে কিন্তু মুখটাকে খোলা রেখেছে।
তিনি বলেন, ইসলামী গোষ্ঠী স্থানীয় গণমাধ্যমকে তাদের অধিগ্রহণে নিয়ে নেয় ও তাদের শাসন সম্পর্কে কথা বলা বন্ধ করতে বলেছে।
আরঘান্ড বলেন, ‘যখন আপনি কোন সহজ প্রশ্নও করতে পারেন না, তখন আপনি কীভাবে সাংবাদিক হতে পারেন?’
তিনি বলেন, তালেবানরা আশ্বাস দিলেও তার অনেক নারী সাংবাদিক সহকর্মী ইতোমধ্যেই দেশ ত্যাগ করেছেন।
নোবেলজয়ী মালালার সাহায্য নিয়ে তিনি, তার মা, বোন এবং ভাইদেরসহ কাতারে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন, মালালা ইউসুফ যিনি ২০১২ সালে একজন পাকিস্তানি তালেবান বন্দুকধারীর গুলিতে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। মালালার অপরাধ ছিল তিনি নারীশিক্ষার জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন।
তালেবানের কাছে আফগানিস্তানের পতনের পর, আরঘান্ড ইউসুফজাইয়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। কয়েক দিন পরেই তিনি দেশ থেকে পালাতে সাহায্য করতে আহ্বান করেন মালালাকে।
আরঘান্ড বলেন, “আমি মালালাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, সে আমার জন্য কিছু করতে পারবে কিনা?
২৪ আগস্ট তার পরিবারের সাথে দোহার নিরাপদভাবে পৌঁছানো সত্ত্বেও আরঘান্ড বলেন, আমিবাড়ি থেকে শুরু করে তার প্রিয় ক্যারিয়ারসহ সবকিছু ফেলে এসেছি। যখন আমি বিমানে বসেছিলাম, আমি নিজেকে বলেছিলাম, ‘এখন তোমার কাছে কিছুই নেই,’।’
সূত্র- রয়টার্স ও উইওন নিউজ