দাগহীন ফর্সা ও হালকা গড়নকে নারীর সৌন্দর্য বলে ধরে নেওয়া হত একসময়। শারীরিক সৌন্দর্যের জন্য রয়েছে শরীরের আদর্শ মাপ আর গায়ের আদর্শ রঙ হবে শাদা শুভ্র আর চুল? চুল হবে দীঘল কালো!
সৌন্দর্য আর ফ্যাশন চর্চার এমন সব স্টেরিওটাইপ সংজ্ঞাগুলো এখন বদলে যাচ্ছে। আত্মবিশ্বাসী নারীরা সৌন্দর্যের ধরাবাঁধা এমন ধারণাকে মধ্যাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের শারীরিক তথাকথিত ওই খুঁতকেই “সৌন্দর্যের প্রতীক” হিসেবে স্থাপন করে নিয়েছেন। লোকমুখের খুঁতকেই নিজের সৌন্দর্য বৈশিষ্ট্যে পরিণত করেছেন এমন সব সুপারমডেলের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়।
২০২০ সালে দাঁড়িয়ে সৌন্দর্যের এমন ধরাবাঁধা সংজ্ঞা খুব বেমানান হয়ে পড়েছে। আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্বই হলো আসল সৌন্দর্য। সেটি দেখিয়ে দিয়েছেন অনেক আত্মবিশ্বাসী নারীরা। তারা যেন সৌন্দর্যের সংজ্ঞাকে নতুন করে গড়েছেন। আত্মবিশ্বাসী নারীদের খুঁতগুলোই যেন আজকের দুনিয়ার সৌন্দর্যের সংজ্ঞা।
ফ্রিকলস
যাদের মুখে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ আছে। তারা এটিকে আর খুঁত ভেবে নেবেন না। কারণ ফ্রিকলস এখন ‘নো মেক আপ মেকাপ লুক’ এর অন্যতম অনুসঙ্গ। বরং ফ্ললেস মুখটি যেন আর গ্রহণযোগ্যই থাকছে না। ফ্রিকলসযুক্ত মুখের নারীরা এবার নিজেদের ভাবুন আপনার অদ্ভুত এবং অসাধারণ সৌন্দর্য বৈশিষ্ট্য আছে। কারণ মুখের এই ফ্রিকলস হয়ে উঠেছে সৌন্দর্যের প্রতীক।
প্লাস সাইজ
প্লাস সাইজের নারীরা নিজেদের অসুন্দর ভাবা এবার বন্ধ করুন। আজকের দুনিয়ায় সৌন্দর্য মানে শুধু জিরো ফিগারে আটকে থাকা নয়। যারা স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড পেজগুলো দেখেন তারা নিশ্চই অ্যাশলে গ্রাহামকে দেখেছেন? অথবা মার্কিন মডেল টেসহলিডেকে? পরিষ্কারভাবে দেখুন প্লাস সাইজ এখন ‘খুব সুন্দর’ হিসেবেই গ্রহণযোগ্য। রোগা-পাতলা মডেলদের মত হতে চেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টার বদলে, মানুষ এখন মরিয়া হয়ে সে বাঁকগুলো পেতে চায় যা সমাজ কখনও ঝেড়ে ফেলেছিল।
জন্মদাগ
ভিটিলিগো বা মুখের জন্মদাগ এতদিন ধরে ত্বকের একটি সমস্যা হিসেবেই বিবেচিত হত। এ দাগ ঢাকতে মানুষ সার্জারি করতেও দ্বিধা করেনি। এমন একটি জন্মদাগ ছিল অ্যমেরিকান নেক্সট টপ মডেল (এএনটিএম) নামের একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজের সাবেক প্রতিযোগী উইনি হারলোর। তিনি এটিকে একেবারেই লুকোতে চাননি। উইনি হারলো যেন প্রজাপতির মতো চমৎকার মানুষের যথাযথ প্রমাণ। তার জন্মদাগকে তিনি প্রাকৃতিক মেকাপ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনিও আজ সৌন্দর্যের দুনিয়ায় দারুণ সফল মডেল।
ঘন কোঁকড়া চুল
একসময় কোঁকড়া চুলকে একধরনের অসুন্দর হিসেবে ধরে নেওয়া হত। হালকা ব্লো আউট করা কোঁকড়া চুলের গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও ঘন কোঁকড়া চুলগুলোকে ক্ষতিকারক উপাদান এবং স্ট্রেটনার দ্বারা সোজা করে নেওয়া হত। এতে চুলের আসল উজ্জলতা যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল। এখন জানুন তবে কঙ্গনা রনৌত তার কোঁকড়া চুলকে নিজের শারীরিক সৌন্দর্যের অনন্যতা হিসেবে দেখিয়েছেন। ভাবুনতো একবার এখন কত মানুষ ঘন ও উজ্জ্বল কোঁকড়া চুলের জন্য কিনছেন উইগও। তাই চুল সোজা করার সাজ সরঞ্জাম ছাড়ুন এবার আপনি নিজের চুলের প্রশংসায় আশ্চর্য হবেন।
ফাঁকা দাঁত
ফাঁকা দাত শুনতে কেমন অদ্ভূত না? একগ্লাস দুধে যেন একফোটা লেবু। তবে জেনে রাখুন এই সময়ে বিশ্বখ্যাত মডেলদের অনেকেই এ ফাঁকা দাঁতের বিষয়টিকে “সুন্দর” হিসেবে আখ্যা পেয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে জর্জিয়া মে জেগার এবং সাবেক সুপারমডেল লরেন হাটনকে দেখুন। নামিদামি ব্রান্ডগুলো যখন লরেনের ফাঁকা দাত ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করে, ভক্তরা সে ব্যাপারটি মোটেও পছন্দ করেনি। এটি যেন লরেনের চেহারায় একটি সুন্দর নিষ্পাপ ভাব ফুঁটিয়ে তোলে।
পেশীবহুল পা
মোটা পা বা পেশিবহুল পা কেমন ছেলেমি ছেলেমি বলেই আখ্যা পেত এতদিন। যদি আপনার পেশীবহুল দুটো পা থেকে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই মোটা বা ছেলের মত পা এমন নামে ডেকেছে আপনাকে। তবে জানুন পেশিবহুল পা এখন আবেদনময়ী শরীরের একটি অংশ বলেই বিবেচিত হচ্ছে। আরেকটি তথ্য জানুন পেশীবহুল পা ও লম্বা হিল পরস্পরের পরিপূরক। হিল জুতোয় চিকন পা মানায় না বরং পেশিবহুল পাই বেশি আবেদন কাড়ে।