নিহত নারীর নিথর দেহটি পড়ে ছিল বাথরুমে ও গলাকাটা অবস্থায় শিশু ছেলেটির লাশটি ছিল বাথরুমের মেঝেতে। চট্টগ্রামে ৯ বছরের ছেলেসহ নিজের ঘরেই বীভৎসভাবে খুনের এমন নৃশংস ঘটনাটি ঘটল চট্টগ্রাম নগরের পুরাতন চান্দগাঁওয়ের রমজান আলী সেরেস্তাদারের বাড়ি এলাকায়। সোমবার (২৪ আগস্ট) ঘটে যাওয়া এ নৃশংস খুনে গুলনাহার বেগম (৩৩) ও তার ছেলে রিফাত (৯) নিহত হয়েছে।
নিহত গুলনাহারের কিশোরী মেয়ে ময়ূরী এ খুনের জন্য ফারুক নামের এক ব্যক্তিকে দায়ী করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ময়ূরী বলেন, ‘আপনারা যাবেন না। আপনারা সৎ মানুষ হলে এটার বিচার করেন। আমার মাকে মেরে ফেলছে। আমি ওকে (ফারুক) কোপাই ফেলব।’
ময়ূরী বলেন, ‘বহদ্দারহাটের সিরাজের ছেলে ফারুকের সাথে তাদের পারিবারিক সু-সম্পর্ক ছিল। মায়ের (গুলনাহার বেগম) পাতানো ভাই ছিল সে। মা আগে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। পরে ঘরে বানানো নাশতা ও বিরিয়ানি দোকানে বিক্রি করাতেন ওই ফারুককে দিয়ে। টাকা নিয়ে মাঝেমাঝে সমস্যা হলেই মাকে হত্যার হুমকি দিত সে। ফারুক পেশায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রী হলেও অবসরে গুলনাহারের বানানো নাশতা বিক্রি করতেন দোকানে। লকডাউনের সময়ে ভ্যানে করে বিরিয়ানি বিক্রি করেছিল ফারুক
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজন স্থানীয় বলেছেন,স্বামী অনেক বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে গুলনাহারকে ছেড়ে যান। দ্বিতীয় বিয়ের পর গুলনাহারের সাথে তিনি কোন যোগাযোগও রাখেননি। দুই সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকতে তিনি বাসাবাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। পরে সেটা ছেড়ে তিনি নাশতা বানিয়ে বিক্রি শুরু করেছিলেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘ফারুক এখন ভ্যানে খাবার বিক্রির কাজ করলেও সে পেশায় একজন কষাই।’
সুরতহালে মা-ছেলে দুজনকেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন করার আলামত পেলেও কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে ময়ূরীর দাবি ফারুক নামের এক ব্যক্তিই এ খুনের জন্য দায়ী।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার ঘটনার সত্যতা জানিয়ে উইম্যানভয়েসবিডিকে বলেন, ‘পুরাতন চান্দগাঁও রমজান আলী সেরেস্তাদারের বাড়ি এলাকায় ৯ বছরের ছেলেসহ এক নারী খুন হয়েছে। ঘটনাস্থলে এসেছি। নিহত নারী গুলনাহারের শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও তার ছেলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছি। তাদের ঘরের দরজাও খোলা অবস্থায় ছিল। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।’
তবে তদন্তের আগেই কে এই নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি তিনি। এ নিয়ে ওসি আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, ‘আমরা ঘটনা তদন্ত করেই বিস্তারিত জানাবো। প্রাথমিক যতটুকু তথ্য আমরা পেয়েছি সেগুলো বিবেচনায় রাখছি। তবে তদন্তের স্বার্থে তা এখনই প্রকাশ করা যাবে না।’
এসএস