ইরানে রাষ্ট্রীয়ভাবে ১২ জুলাইকে সতীত্ব ও হিজাব দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। না, এটি বেছে নেওয়া বা পছন্দে পরা হিজাব নয় দেশটিতে হিজাব না পরার কারণে অথবা চুল উন্মুক্ত রেখে হিজাব পরলেও নারীকে বছরের পর বছর জেলে বন্দি থাকতে হয়। সেখানে পছন্দের কোন সুযোগ নেই হিজাব মাত্রই শালীনতা ও ভদ্রতা। হিজাববিহীন নারী মাত্রই আইন অমান্যকারী। তবে চাপিয়ে দেওয়া শালীনতার কঠোর আইন মানতে নারাজ ওই দেশের নারীরা। তাই তারা প্রকাশ্যে হিজাব খুলে ফেলে প্রতিবাদ করছেন।
ইরানে নারীরা এখন নিজেদের মাথার ছোট্ট বস্ত্রখণ্ডটি ছুড়ে ফেলে বিক্ষোভ করছেন ও পুরুষরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১২ জুলাই) ‘হিজাব এবং সতীত্ব দিবস’ ঘোষণা করার সিদ্ধান্তটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে বাস করা নারীদের হিজাব পরতে বাধ্য করার জন্য একটি অভিযানের প্রেক্ষাপটেই এসেছে। ওই দেশে মন্দ নারীর লেবেলভুক্ত করা হয় যারা অনেকেই তরুণী, যারা নিয়ম লঙ্ঘন করেন বা যারা হিজাব না পরার দোষে দুষ্ট।.
দেশটিতে আক্ষরিক অর্থেই নারীর জন্যে সড়কে তথাকথিত ‘নৈতিকতা পুলিশ’ অবস্থান করে। নারীরা তাদের মাথা ঢেকে রাখছে কী না তা নিশ্চিত করার জন্য ইরানের বেশ কিছু শহরের সড়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নৈতিক পুলিশ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অ্যালান হোগার্থ দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে বলেছেন, “ইরানের নারীদের নিপীড়নের রেকর্ড দীর্ঘ। নারীরা সেখানে কেবল নিজের পোশাক বেছে নেওয়ার অধিকার প্রয়োগ করলেই শাস্তি পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যে সাহসী নারীরা বর্তমানে এই যৌনতাবাদী আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন, তারাও জানেন যে তারা কী ঝুঁকি নিচ্ছেন। তিন তরুণী ইরানি নারী মনিরেহ, ইয়াসামান এবং মোজগান বর্তমানে তেহরানের জেলে বন্দি যাপন করছেন কেবল প্রকাশ্যে হিজাব আইন অমান্য করার কারণে। হিজাব আইন অমান্যে করার ভিডিয়ো অনলাইনে ‘ভাইরাল’ হওয়ার কয়েকদিন পরে, ওই নারীদের ‘বোরখা না পরার জন্য’ ‘পতিতাবৃত্তিতে প্ররোচিত করা’ অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে”।
অ্যালান হোগার্থ বলেন, ‘এই ধরণের নিপীড়ন যা নারীর মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এবং নৈতিক পুলিশ কর্তৃত্ববাদী ইরানের মুখচ্ছবিকে স্পষ্ট করে। চুল খোলা রেখে জনসমক্ষে আসাকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ বলে গণ্য হয়।
অ্যালান হোগার্থর মতে, ‘এটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন – মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিশ্বাস এবং সমতার অধিকারের বিপক্ষে এবং এটি লিঙ্গ বৈষম্যের চরম রূপ।’
এ বিষয়ে তেহরানের ইমাম আয়াতুল্লাহ আহমাদ খাতামি বলেছেন, ‘নারী যিনি সরকারের বাধ্যতামূলক হিজাব আইনকে অমান্য করেন তিনি কোন পাপ করছেন যা চুরি বা আত্মসাৎ করার সাথে তুলনীয় এমনটা মোটেও নয়। বরং এটা সম্পূর্ণ অসত্য, এটা আল্লাহর বাণী নয় এমনকী কোরান বা ধর্মগ্রন্হে কোথাও এমন কথা বলা নেই।’
একজন ইরানি-আমেরিকান সাংবাদিক এবং নারী অধিকার কর্মী মাসিহ অ্যালিনজেদ টুইট করেছেন: “ইরানী নারীরা তাদের হিজাব সরিয়ে পুরো ইরানে রাস্তায় নামবে। হ্যাশট্যাগ নো টু হিজাব বলতে এম পৌরহিত্য শাসনকে কাঁপিয়ে দেবে। একে বলা হবে নারী বিপ্লব।’
গত মাসের শেষের দিকে, দেশটির রাষ্ট্রীয় মিডিয়া প্রকাশ করেছে যে কর্তৃপক্ষ ইরানের দক্ষিণের শহর শিরাজে একটি স্কেটবোর্ডিং ইভেন্টের পরিকল্পনা করার অবিযোগে পাঁচজনকে আটক করেছে। কিশোরী নারী এবং ছেলে স্কেটাররা গত ২৩ জুন ওই ইভেন্টের জন্য জন্য জড়ো হয়েছিলেন। একই দিনে ইরানি পুলিশ তাদের মাথায় স্কার্ফ না পরার দোষে বেশ কয়েকজন তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছিল।