মেক্সিকোর সুপ্রিম কোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে গতকাল মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১) রায় দেয় যে গর্ভপাতের শাস্তি অসাংবিধানিক। এটি ছিল সেদেশের সবুজ আন্দোলনকারী নারী ও মানবাধিকারের সমর্থকদের জন্য একটি বড় বিজয়।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রোমান ক্যাথলিকদের ওই দেশে এমন একটা সিদ্ধান্তের মানে হল যে আদালত আর গর্ভপাতের মামলার বিচার করতে পারবে না এবং সেটি আর্জেন্টিনায় স্বীকৃত হওয়া ঐতিহাসিক গর্ভপাতের বৈধতাকে অনুসরণ করছে। আর্জেন্টিনায় সেটি এ বছরের শুরুতে কার্যকর করা হয়েছিল।
যদিও মেক্সিকোর আইনি ব্যবস্থা অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের আইনি ব্যবস্থার প্রতিরূপ। সে দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো রাজ্যে এখনও গর্ভপাত একটি ফৌজদারি অপরাধ। যদিও সিডো সনদের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করতে আইনে গর্ভপাত শব্দটি ব্যবহারের পরিবর্তে তারা ‘ছ সপ্তাহ বা বারো সপ্তাহের প্র্যাগনেন্সি টার্মিনেট করা’ জাতীয় শব্দবন্ধগুলো ব্যবহার করে।
মেক্সিকোর সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট আর্তুরো জালদিভার এই সিদ্ধান্তকে সকল নারীদের বিশেষ করে সবচেয়ে দুর্বলদের জন্য এটিকে জলময় ক্ষণ বলে অভিহিত করে প্রশংসাও করেছেন।
২০১৮ সালের একটি মামলা থেকে উদ্ভূত একটি প্রশ্ন যা মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য কোয়াহুইলায় গর্ভপাত সম্পর্কিত ফৌজদারি আইনকে চ্যালেঞ্জ করে। এমন আইন যেটি টেক্সাসের সীমান্তে এখনও কার্যকর রয়েছে এবং টেক্সাস সম্প্রতি তাদের গর্ভপাত বিরোধী আইনকে আরও কঠোর করেছে।
আরও পড়ুন
১০ জন বিচারকের রায়ে বলা হয়েছে গর্ভপাতের জন্য নারীকে শাস্তি দেওয়া যাবে না।
এ সিদ্ধান্তটি আসে যখন ক্রমবর্ধমান নারীবাদী আন্দোলন মেক্সিকোর রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা এমন মধ্যযুগীয় ও নারীর উপর বর্বরতার আইন পরিবর্তনের জন্য চাপ দেয়। ওই আন্দোলনে নারীরা যার মধ্যে গর্ভপাত বিরোধী আইন অকার্যকর করতে চাপ দেন।
কোয়াহুইলা রাজ্যের রাজধানী সাল্টিল্লোতে একটি বিক্ষোভে নারীরা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে সবুজ স্কার্ফ পরে পরস্পর আলিঙ্গন করে চিৎকার করে বলেছিলেন এখন থেকে “গর্ভপাত আর অপরাধ নয়!”
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সালটিলোর নারীবাদী সংগঠন ফ্রেন্টে ফেমিনিস্টারের সদস্য ২৬ বছর বয়সী কারলা সিহুয়াটল বলেন, “আমরা খুব খুশি যে গর্ভপাতকে অপরাধ নয় হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, এবং এখন আমরা এটিকে আইনি করতে চাই,”
তিনি যোগ করেন, “এই পদক্ষেপটি নারীর উপর আরোপিত কলঙ্ক কিছুটা ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের এখনও সামাজিক দিক পরিবর্তন করতে হবে।”
প্রায় ১ কোটি ক্যাথলিকদের সমন্বয়ে মেক্সিকো ব্রাজিলের পরে প্রধানত একটি ক্যাথলিক দেশ হিসেবে পরিচিত। আর ক্যাথলিক চার্চ সব ধরনের গর্ভপাত পদ্ধতির বিরোধিতা করে।
সেখানে বেশিরভাগ দরিদ্র মেক্সিকান নারীদের বিরুদ্ধে গর্ভপাতের জন্য মামলা দায়ের হয়েছে, এবং এখন কমপক্ষে কয়েক ডজন নারী জেল খাটছেন।
বিচারক জালদিভার বলেন, মঙ্গলবারের ভোট দেশের সকল বিচারকদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করে। ফলে আদালত এবং গর্ভপাতে সংবিধানের মানদণ্ড লঙ্ঘন হয়েছে বলে তাদের বিচার করা আর সম্ভব হয় না।
কোহুইলার রাজ্য সরকার একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে যে এই বিচারিক সিদ্ধান্তটি পূর্ব প্রতিক্রিয়া ( রেট্রস্পেক্টিভ ইফেক্ট) হবে এবং গর্ভপাতের জন্য কারাবন্দী যে কোনও নারীকে “অবিলম্বে” মুক্তি দেওয়া হবে।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্য গর্ভপাতের নারীর প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করতে চলেছে। বিশেষ করে টেক্সাস যা গত সপ্তাহে একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করে যে গর্ভাবস্থার প্রথম ছয় সপ্তাহের পরে গর্ভপাত করা হলে সেটি হবে ফৌজদারি অপরাধ।
মেক্সিকায় থাকা মার্কিন সবুজ আন্দোলনকারীরা এবার টেক্সাসে গর্ভপাতের অধিকারের জন্য নতুন করে আন্দোলনে নামতে পারে।
গত জুলাই মাসে ভেরাক্রুজ রাজ্য গর্ভপাতকে অপরাধ নয় ঘোষণা করতে করার জন্য মেক্সিকোর ৩২টি অঞ্চলে র চারটিতে ব্যপক বিক্ষোভ করে।
মেক্সিকোর বামপন্থী রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর সাবধানতার সাথে এ বিষয়ে কোন অবস্থান না নিয়ে বরং এড়িয়ে গেছেন। যেমনটি তিনি মঙ্গলবার সকালে আবারও করেছিলেন রুলিং-এর দৌঁড়ে।
গর্ভপাত সম্পর্কে তার মতামতের জন্য একটি সংবাদ সম্মেলনে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান, বলেন, ‘এটি আদালতের ব্যাপার’।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি পদের মর্যাদা রাখতে হলে বিতর্কিত বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারি না।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময়, তিনি গর্ভপাতের তীব্র বিরোধিতার খ্যাত খ্রিস্টান রক্ষণশীলদের একটি ছোট রাজনৈতিক দলের সাথে একটি জোট করেছিলেন।