রানী রত্নাবতী বালিকা বিদ্যালয় ও মহিলা সমবায়। ভারতের রাজস্থানের জয়সালমারে মিশেল ডাউব তৈরি করলেন শিশুকন্যাদের জন্য একটি অলৌকিক সুন্দর স্কুল। তিনি বলেছেন ভারতের প্রান্তিক এ মরুর বুকে নারীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা একটি অসম্ভব কাজ। এখানে নারেীদের মৌলিক কাজ হল কোন কাজ না করা। এর আগেও বেশ কবার ব্যর্থ হয়েছিল চেষ্টা। তবে এবার চারটি বিষয়কে সংযুক্ত করে মেয়েদের জন্য স্কুল তৈরি করতে সফল হলাম। রাজস্থানের সোনালী বালুর উপর ঐতিহ্যবাহী দূর্গ এখন একটি অলৌকিক সুন্দর স্কুল। মহামারির বন্ধ ফুরালেই খুলে যাবে ৪০০ ছাত্রীদের স্কুল রানী রত্নাবতী বালিকা বিদ্যালয় ও মহিলা সমবায়।
বলা যায় অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মিশেল ডাউব বিশ্বব্যাপী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিকাশে কাজ করেন। এবার তিনি ৪০০ মেয়ের জন্য একটি অনন্য স্কুল চালু করলেন ভারতের রাজস্থানে। এর আগে তিনি ১৯৯৮ সালে ভারতে মাদার তেরেসার সাথে কাজ করেছিলেন। ডাউব লক্ষ্য করেছেন রাজস্থান অঞ্চলটিতে স্বাক্ষরতার হার সর্বনিম্ন। সেখানে স্বাক্ষরতার হার হল ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ। সেখানে অর্ধেকের চেয়ে বেশি মানুষ অশিক্ষিত এবং এতটাই অসচেতন যে সরকারের নানা উৎসাহ ও প্রণোদনায়ও তারা মেয়েদের স্কুলে পাঠায় না। তাই রাজস্থানের বেশিরভাগ মেয়ে শিশুরা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পায়নি।
রানী রত্নাবতী বালিকা বিদ্যালয় তৈরির পেছনের গল্প
এমনকি চেষ্টাও করবেন না — বন্ধুরা বলেছিলেন মিশেল ডাউবকে। যখন জয়সালমারের নারীদের তিনি উপার্জন করার জন্য ইয়োগা ব্যাগে নকশার কাজ করতে বলেছিলেন।
স্প্যানিশ কবির নাটকের ব্লাড ওয়েডিং-এর একটি চরিত্র বিয়েকে ব্যাখ্যা করেছে একটি পুরু দেওয়াল হিসেবে। রাজস্থান তেমনই এক রক্ষণশীল রাজ্য যেখানে প্রাচীন রীতিনীতিকে সংরক্ষণ করা হয়।
জয়সালমারের প্রত্যন্ত মরুভূমি অঞ্চলে গ্রামবাসীদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে মিশেল ডাউবের।
তিনি বলেন,‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম মেয়েদের স্কুলগামী করতে হলে একটি অর্থনৈতিক উপায় খুঁজতে হবে। তখনই আমি উপায় খুঁজে পেলাম। মেয়েদের স্কুল, হস্তশিল্প সংরক্ষণ, প্রাচীন দূর্গ সংরক্ষণ ও পর্যটনকে একত্রিত করে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করলাম। আমি বুঝতে পেরেছিলাম এটিকে স্কুলের থেকেও বেশিকিছু করতে হবে। এই স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের মা, বড় বোন এবং চাচিরাও আসতে পারবেন। বিদ্যালয়টিতে বুনন মুদ্রণ এবং কারুশিল্প বিক্রয় ও প্রদর্শনের জন্য মার্কেটপ্লেস থাকবে। সেটি বিক্রয় করা হবে মরুভূমিতে সূর্যাস্ত দেখতে আসা পর্যটকদের কাছে।
মিশেল ডাউব বলেছেন, জয়সালমারের নারী শিক্ষার পরিস্থিতি খুবই শোচনীয়। সেখানে মেয়েরা স্কুলে এলেও তাদের বাড়ির কাজ করতে হত। গৃহস্থালীর কাজ, ছোট ভাই বোনদের দেখাশোনা করা স্কুলে যাওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামগুলো প্রত্যন্ত হওয়ায় স্কুলে আসা যাওয়াও কষ্টকর।
স্কুল ভবনটি আকর্ষণীয় করতে কাজ করেছেন কেলোগ। মেয়েদের স্কুল ইউনিফর্মের ডিজাইন করেছেন কলকাতার বিখ্যাত পোশাক ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জি। স্থানীয় বেলেপাথর ব্যবহার করে এবং রাজস্থানের বিখ্যাত দুর্গটির আঁকাবাঁকা দেয়ালগুলোকে পুনরায় আঁকতে কেলোগ একটি মূল এবং সমসাময়িক নকশা তৈরি করেছেন। এটি ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে।
বিদ্যালয়টির প্রোগ্রাম ম্যানেজার চাহাত জৈন বলেছেন, কেন্দ্র পরিদর্শন করা ছোট অবিশ্বাসের চোখে বলেছিল —আমি এখানে স্বাধীন বোধ করি। মেয়েদের পড়াশুনার সময় মা-বাবারাও সেখানে থাকতে পারবেন তা জেনে তারা সুরক্ষিত অনুভব করেন।
বিদ্যালয়টি ২৪ মার্চ খোলার কথা থাকলেও মহামারির কারণে সেটি স্থগিত করা হয়।