‘করোনাকালে ঘরে বাইরে নারীরা সম্মুখযোদ্ধা হিসাবে করোনা মোকাবেলায় অবদান রাখলেও নারীর সে অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়নি। অধিকন্তু করোনায় লকডাউন চলাকালে নারীর প্রতি সহিংসতার প্রকোপ অনেক বেড়ে গিয়েছিলো। নারী ও শিশু ধর্ষণ থেমে ছিলো না। এছাড়াও করোনা পরবর্তী করোনার ক্ষয় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নানা প্রণোদনা ঘোষণা করলেও নারীরা সে প্রণোদনা পাননি। তাই শুধু প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেত্রী বা স্পিকার নারী হলেই নারীর অধিকার ও মর্যদা প্রতিষ্ঠা হয়ে যায় না।’
শনিবার (১৩ মার্চ, ২০২১) চট্টগ্রাম নগরীর হোটেল সৈকতের সাম্পান হলে চিটাগাং সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিএসডিএফ) ও ক্যাব চট্টগ্রামের উদ্যোগে বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বো নতুন সমতার বিশ্ব” শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তারা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
সিএসডিএফ’র সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ঠ নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারুর সভাপতিত্বে ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরির সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিএসডিএফ’র চেয়ারপারসন ও ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন।
বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় বক্তব্য রাখেন দৈনিক পূর্বকোনের সিনিয়র উপ-সম্পাদক ডেইজি মওদুদ, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার লিপি, পাঁচলাইশ থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিয়া আকতার। এতে আলোচক ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্যা রেহেনা চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটিকরপোরেশনের কাউন্সিলর আফরোজা কালাম, জেসমিন পারভীন জেসি, বেবী দোভাষ, শাহীন আকতার রোজী, কর্নফুলী উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারমান বানেজা বেগম ও চট্টগ্রাম ইউমেন চেম্বারের সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর রেখা আলম চৌধুরী।
এতে অতিথি ছিলেন আনসার-১৫ ব্যাটেলিয়ানের পরিচালক এস এম আজিম উদ্দীন।
এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, ক্যাব পাঁচলাইশের সাধারণ সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব জামাল খানের সুচিত্রা গুহ টুম্পা, নারী উদ্যোক্তা আফরোজা সুলতানা পুর্নিমা, নারী নেত্রী লায়লা ইব্রাহিম বানু, ক্যাব খুলসীর সভাপতি প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান, নারী নেত্রী শাহীন শিরিন, উন্নয়ন কর্মী নজরুল ইসলাম, জিনাত আরা প্রমুখ।
সভায় উপস্থিত নারীরা বলেন, ‘নারীর বিরুদ্ধে সহিংষতা, বঞ্চনা, অন্যায্যতার সংগ্রাম নতুন বিষয় নয়। যুগে যুগে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও সন্ত্রাস থেমে ছিলো না। আর ডিজিটাল বাংলাদেশের এ যুগেও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীরা ডিজিটাল সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নারীদের চরিত্র হননের উদাহারণও কম নয়। রাজনৈতিক সুষ্ঠু চর্চার অভাবে পরিবারতন্ত্র পুরো রাজনীতিকে গ্রাস করেছে। পরীক্ষিত অনেক রাজনৈতিক কর্মী সঠিকভাবে মূল্যায়িত না হয়ে অনেকেই রাজনৈতিক পদগুলি দখল করছেন। ফলে রাজনীতিতে পরীক্ষিত ও ত্যাগীরা মনোনয়ন পাচ্ছেন না। সেখানে শাহেদ, ডা. সাবরিনা, জিকে শামীমদের মতো মতবলবাজ ও হাইব্রিডরা দখল নিচ্ছেন।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘এক সময় নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সমাজের বিবেক জাগ্রত হত। ঘৃণা, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে উঠতো তৃণমূল পর্যায়ে থেকে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সামাজিক উদ্যোগগুলিকে বাণিজ্যিকীকরণ করার কারণে স্থানীয় ও স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে গড়ে উঠা উদ্যোগেগুলো নিয়েও মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। সে কারনে তৃণমূলে নারীরা নির্যাতিত হলে, ধর্ষনের শিকার হলে বা অন্যকোন সামাজিক অনাচারের শিকার হলে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আর সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে তৃণমূলে সামাজিক উদ্যোগগুলিকে রাষ্ট্রীয়, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।’
সংলাপে বক্তারা আরও বলেন, ‘স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার পাচ্ছেন না। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে জনগণের জন্য সেবা দিতে না পারলে পরবর্তীতে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে। তাই তৃণমূলে সকল স্তরের মানুষের ঐক্য ও নেটওয়ার্কিং ছাড়া সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগগুলির সফল কার্যকারিতার দাবি জানানো হয়।