শর্মিষ্ঠার কণ্ঠে ভেসে গল্পও হয়ে ওঠে জীবন্ত কবিতা
কবিতা নয়, গল্পও তার গলায় কবিতা হয়ে যায়। ফেসবুকে ভিন্ন ভিন্ন লেখকদের পোস্ট করা ছোটগল্পগুলোকে নিজস্ব কায়দায় কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন। আর এমনি করেই তার কণ্ঠে ভেসে ভেসে লেখকের অনুভূতিগুলো যেন আরও সত্য আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে।
‘কেননা আমরা মানুষ আর ওরা কুকুর’, “তোদের মত মেয়েরা জন্মেছেই পথেঘাটে নিগৃহিত হবে বলেই” অবলার জবানবন্দি, নিয়মফের, ‘নারীরা কি সত্যিই সুরক্ষিত’?—এমন শিরোনামের সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কের টানাপোড়েন, প্রকৃতি জীবনের জন্য ভালোবাসা কী নেই তার পাঠে?

শর্মিষ্ঠা প্রামাণিক তার নাম। বছরখানেক আগে নিতান্তই আবেগের বশে ফেসবুকে ‘ইচ্ছপূরণ’ নামে আবৃত্তি নিয়ে পেজ খুলেছিলেন। এখন তিনি এপার ওপার দুই বাংলার মানুষের ভালোবাসায় ভাসছেন। মানুষের আবেগ ভালোবাসা প্রকৃতিপ্রেম সামাজিক নানা সমস্যা নিয়ে লেখা ছোটগল্প ও কবিতা পাঠ করে জনপ্রিয় হয়েছেন এপার ওপার দুই বাংলায়। শর্মিষ্ঠা পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের কন্যা।
ছোটবেলা থেকেই আবৃত্তি করতেন শর্মিষ্ঠা প্রামাণিক। বন্ধু ও বরের প্রেরণায় ফেসবুকে নিজের আবৃত্তির ভিডিও শেয়ার করেন নিতান্তই আবেগের বশে। এরপরই তিনি তুমুলভাবে নন্দিত হলেন। লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে তার কবিতা। যাদের লেখা তিনি পাঠ করেছেন তারাও এখন সমানভাবে নন্দিত।
শর্মিষ্ঠা জানান, পদ্মাবতী মন্ডল নামের একজন ফেসবুক কবির লেখা পড়েই তিনি প্রথম পাঠকের সামনে আসেন। এরপর থেকে দোলনা বড়ুয়া তৃষা, তানভিয়া আকতার কেয়াসহ বিভিন্ন লেখকের লেখা তিনি পড়ে নিজের পেজে শেয়ার করেছেন।
পদ্মাবতীর লেখা ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করেছিলেন শর্মিষ্ঠা। শর্মিষ্ঠার সাথে সাথে লেখকখ্যাতি পেয়েছেন পদ্মাবতীও। তার সাম্প্রতিক লেখা গল্পের বই ‘সময়ের ঝরা পালক’ প্রকাশিত হওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়।

শর্মিষ্ঠার বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর এলাকায়, হলি ফ্যামিলি স্কুল থেকে তার প্রাথমিক শিক্ষা তারপর ২০১২ সালে মৃনালিনী গার্লস হাই স্কুল থেকে পাশ করে অনার্স পড়েছেন ডিএল কলেজে। এরপর তিনি মাস্টার্স করেছেন কৃষ্ণনগরের এম এ কল্যানী ইউনিভার্সিটি থেকে।
কবিতার সাথে কিভাবে তিনি আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেলেন সেসব বিষয়ে শর্মিষ্ঠা প্রামাণিক কথা বলেছেন উইম্যান ভয়েস বিডির সাথে। তিনি বলেন, ‘যখন আমি মেসে থাকতাম তখন থেকেই আবৃত্তি করতাম, আগে নাচের প্রতি একটা প্যাশন ছিল ,পারিবারিক কারণে নাচ ছেড়ে দিতে হয়েছে, এম এ পড়ার সময় কবিতার চর্চাটা শুরু করি। আসলে তখন কোথাও কেন যেন মন বসতনা, বন্ধুরা বলত আবৃত্তি করতে। আমার বরের সাথে ওই সময়ে আমি সম্পর্কে ছিলাম। সেও আমায় আবৃত্তি করতে বলত। অনুপ্রেরণা সেখান থেকেই।
শর্মিষ্ঠা প্রামাণিক বলেন, করোনা এল যখন তখন আমার পেজের বয়স মাত্র এক সপ্তাহ। আনারস মুখে নিয়ে হাতির নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলাম পদ্মাবতীর লেখায়। সেটির ৩মিলিয়ন ভিউ হয়েছিল। প্রথমে আমি প্রায় কেঁদে ফেলেছিলাম। মানুষের আগ্রহ দেখে সত্যি খুব আনন্দ হচ্ছিল। সে সময় আমাকে বা লেখক পদ্মাবতীকে কেউ চিনতনা। সময়ের সাথে আমি ও পদ্মাবতী দুজনেই মানুষের ভালবাসা পেয়েছি।
তিনি বলেন, ‘মানুষ আসলে নিজের জীবনের সাথে মিলে যাওয়া খুব সাধারণ লেখাগুলোই পছন্দ করে। পদ্মাবতী মণ্ডলসহ ফেসবুকের পোস্টগুলো আমি পড়ি। সম্প্রতি পদ্মাবতীর লেখা বই সময়ের ঝরাপালক প্রকাশ হয়েছে। তার বই ৩ ঘন্টার মধ্যেই আউট অফ স্টক হয়ে যায়। এটি অভূতপূর্ব একটি বিষয়।
কবিতা পাঠে নিজস্ব কায়দার বিষয়ে প্রশ্ন করলে শর্মিষ্ঠা প্রামাণিক বলেন, প্রথমে আমি ছন্দলয়ে পড়তাম। সত্যি বলতে কী এগুলো সাধারণ মানুষের মন ছুয়ে যায় না। শ্রোতার সাথে সংযোগ কোথাও যেন আলগা হয়ে থাকে। চেষ্টা করতাম গলা আর অনুভূতিতে একটা নিজস্ব ভঙ্গি আনতে। সেটিই মানুষ ভালবেসেছে।
‘আমি মিরর সানডে সাসপেন্স দেখতাম। মানুষ কি চায়? জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো শ্রোতারা শুনতে পছন্দ করেন। ‘ভাইরাল মেয়ে’ নামরে একটি কবিতা পাঠের পর এক মা ফোন করে কেঁদেছিলেন।’ যোগ করেন শর্মিষ্ঠা।
বাংলাদেশে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে জানিয়ে প্রশ্ন করলে শর্মিষ্ঠা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমি অনেক ভালবাসা পেয়েছি। এটি আমার জন্য আনন্দের। আমাদের ভাষা একই। তাই মনের যোগাযোগটা একেবারেই কাছের।’
শর্মিষ্ঠার মতে, ফেসবুক এখন নিজের মেধা বিকাশের জন্য ভাল প্লাটফর্ম। অনেকের জন্যই একটা সুযোগ। সুযোগ পাওয়া হল প্রতিভা প্রকাশের জন্য একটা মাধ্যম।