বাড়ির উঠোনে এলে চকলেট খেতে টাকা দেবে বলে শিশুকে (ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী) ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় লাখ টাকা নিয়ে মামলার বদলে মীমাংসায় ঘটনার রফাদফা করে দিলেন সাতকানিয়ার ছদাহার ইউপি মেম্বার আহমদ কবির। সারাদেশে ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের এ সময়ে এমনই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটানো হল প্রায় শতাধিক লোক ডেকে। ফৌজদারি অপরাধ শালিস অযোগ্য জেনেও কেন এ ঘটনা রচনা করলেন জানতে চাইলে উত্তরে ইউপি সদস্য বলেন— ধর্ষককে জুতোপেটা করেছি তো। সমাজের কাছে লজ্জা দিয়ে তাকে সাবধান করা হয়েছে। ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১০ নভেম্বর বিকেলে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়ন এলাকায়।
বৃহস্পতিবার (১২ই নভেম্বর) সাতকানিয়ার ছদাহার দুই নম্বর ওয়ার্ডে ফজুর পাড়ায় আহমদ কবির মেম্বারের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক মানুষ নিয়ে এই ‘ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ মিমাংসা’ নামক একটি গ্রাম্য অনুষ্ঠান রচিত হয়।
ঘটনা সূত্রে জানা গেল, ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১০ ই নভেম্বর দুপুরআড়াইটার দিকে। এলাকার জকরিয়া নামের এক ব্যক্তির উঠোনে শিশুটি খেলতে গেলে টাকার লোভ দেখিয়ে রুমে ডাকে জকরিয়া নামের ওই ব্যক্তি। শিশুটি রুমে গেলে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় ওই জকরিয়া। শিশুটি ভয় পেয়ে চিৎকার করে বেরিয়ে আসলে ঘটনা জানাজানি হয়। ওই জকরিয়ার স্ত্রী জানতে পেরে প্রতিবাদ করলে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্ত জকরিয়া।
ওই ঘটনার জেরে সারভাইবার শিশুটির মা ও বাবা তাদের বাড়ির মালিক মোস্তাফিজুর রহমানকে বিচার দেয়। মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি ইউপি সদস্য আহমদ কবির মেম্বারকে জানায়। মেম্বার আহমদ কবির ধর্ষণের মামলার মান সম্মান ও ক্ষয়-ক্ষতির কথা উল্লেখ করে ভয় দেখিয়ে শিশুর পরিবারকে মামলা করতে নিরুৎসাহিত করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রতিবেশী বলেন, অভিযুক্ত জকরিয়ার কাছ থেকে লাখ টাকা নেয় ইউপি সদস্য আহমদ কবির। মামলাহবে না এমন আশ্বাসে গত বৃহস্পতিবার (১২ই নভেম্বর) রাত ৮টায় লোক দেখানো একটি শালিস ডেকে ঘটনার রফাদফা করে দেন।
সারভাইবার শিশুর মা বলেন, ‘এই জকরিয়া এলাকার মধ্যে শিশুদের বিশেষত কন্যা শিশুদের একলা পেলে খারাপ কাজে নিয়ে যেতে চায়। না জানি কত মানুষের বাচ্চার সাথে এ নোংরা কাজ করেছে বা করার চেষ্টা চালিয়েছে। সে তো লম্পট। এলাকার সবাই জানে। আমরা একে গরীব ও অসহায়। তার ওপর স্থানীয় না এখানের ভাড়াটে। তাই আর কিছু বলছি না। ওদের বিচার আল্লাহ করবে।
সারভাইবার শিশুর মা বলেন, ‘এই জকরিয়া এলাকার মধ্যে শিশুদের বিশেষত কন্যা শিশুদের একলা পেলে খারাপ কাজে নিয়ে যেতে চায়। না জানি কত মানুষের বাচ্চার সাথে এ নোংরা কাজ করেছে বা করার চেষ্টা চালিয়েছে। সে তো লম্পট। এলাকার সবাই জানে। আমরা একে গরীব ও অসহায়। তার ওপর স্থানীয় না এখানের ভাড়াটে। তাই আর কিছু বলছি না। ওদের বিচার আল্লাহ করবে।
ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা গ্রাম্য শালিসে শেষ করা যায় কী না জানতে চাওয়া হলে ছদাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ চৌধুরী বলেন, ‘ধর্ষণ করতে চেয়েছে বিষয়টি শুনেছি। কন্যা শিশুটি পালিয়েছে বলে রক্ষা পেয়েছে। এটির বিচার হবে আইনের মাধ্যমে। আমি ইউপি সদস্যকে এমন নির্দেশনাই দিয়েছি।
ধর্ষণ সংশ্লিষ্ট ঘটনার শালিস করা আইনত দণ্ডনীয় একথা জানিয়ে কেন শালিস করা হল জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মো. আহমদ কবির বিচার বসানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ধর্ষণের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচা কন্যা শিশুর পায়ের স্যান্ডেল দিয়ে ‘শালিসের রাতে’ সমাজের শত শত মানুষের সামনে জকরিয়ার গালে জুতোপেটা করেছি। তাকে শাস্তি দিয়েছি। তবে আমি কোন টাকা পয়সা নিইনি।’
‘ধর্ষণের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচা কন্যা শিশুর পায়ের স্যান্ডেল দিয়ে ‘শালিসের রাতে’ সমাজের শত শত মানুষের সামনে জকরিয়ার গালে জুতোপেটা করেছি। তাকে শাস্তি দিয়েছি। তবে আমি কোন টাকা পয়সা নিইনি।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নিশ্চিত করেছেন, ধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্ত জকরিয়ার কাছ থেকে ১লাখ টাকা নিয়ে ইউপি সদস্য আহমদ কবির অনেকটা ‘জোরপূর্বক’ গ্রাম্য শালিস বসিয়ে এ ঘটনা মীমাংসা করেন।
এ ঘটনাটি জানিয়ে সাতকানিয়া থানার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিষয়টা আমি সবে জানলাম। আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।