আপনাদের সুগারকোটেড আইডিয়া ‘শক্ত হাতে পরিবারের হাল ধরে রাখাই ফেমিনিজম’, রাস্তার পাশে সিগারেট খাওয়া না” এইখানেই আপনাদের আলাপ খারিজ করে দেওয়া যায়। আপনারা যে ডিসাইড করে দিচ্ছেন, কোনটা ফেমিনিজম, আর কোনটা না। অথচ ‘ফেমিনিজম’ নিজেই বলছে, সেই ডিসিশন ইনডিভিজুয়াল নারীর হাতে ছাইড়া দিতে।
একজন নারী কারো প্রেসারে পড়ে বা অন্য কোনো কারণে সে চায়না এমন কোনো কাজ করতে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেই সে আর ফেমিনিস্ট থাকে না। যেই প্র্যাক্টিসিং মুসলিম মেয়ে সবার মানা সত্ত্বেও ভিসার ভাইভায় হিজাব পরে, হিজাব পরা ছবি সহ ভাইভা দিতে গেছে, সে একজন ফেমিনিস্ট; কারণ সে যা করতে চাইছে স্বেচ্ছায়, সে সেটাই করছে। তেমনি ফালতু সোশ্যাল নর্মের জন্য স্লাট খ্যাতি পাওয়া মেয়েটাও যে বনিবনা না হবার কারণে, চৌদ্দতম বার চৌদ্দ নাম্বার প্রেমিকের সাথে ব্রেকাপে দ্বিধাবোধ করে নাই। কেননা সে ‘লোকে কী বলবে’ ভেবে সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাবে না। সেই স্লাট ও একজন ফেমিনিস্ট।
ফালতু সোশ্যাল নর্মের জন্য স্লাট খ্যাতি পাওয়া মেয়েটাও যে বনিবনা না হবার কারণে, চৌদ্দতম বার চৌদ্দ নাম্বার প্রেমিকের সাথে ব্রেকাপে দ্বিধাবোধ করে নাই। কেননা সে ‘লোকে কী বলবে’ ভেবে সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাবে না। সেই স্লাট ও একজন ফেমিনিস্ট।
রাস্তায় দাঁড়ায়ে সিগারেট খাওয়া মেয়েটার আশপাশে এমন কেউ যদি থাকত, যার ধোঁয়ায় প্রবলেম হচ্ছে, এরপরও মেয়েটি যদি সেখানেই বিড়ি টেনে যায়— কেবল মাত্র তখনই আমি তাকে উগ্র বলব।
যেই পরিবেশে একজন ছেলে সিগারেট খাইতে পারে এবং সেটাকে স্বাভাবিক ধরা হয়, সেই পরিবেশে মানুষের কটাক্ষ উপেক্ষা করে যেই মেয়ে সিগারেটে টান দিছে, কারণ সে এখন এটা করতে চায়, সে একজন ফেমিনিস্ট। দুধের বাচ্চা কোলে নিয়ে যেই নারী অফিস করতে গেছে, এবং মা হবার পরে সংসার এবং চাকরি একসাথে চালানো প্যারা লাগায় যে ফুল টাইম মা হয়ে গেছে, দুইজনই একই মাত্রায় ফেমিনিস্ট। কারণ, চাকরি না করার সিদ্ধান্তও তার, করার সিদ্ধান্ত ও তার।
আমি জানিনা— আপনারা কবে দুই দলে বিভক্ত হওয়া বন্ধ করবেন। কবে তসলিমা নাসরিনের মুরিদগণ বোরকা পরা নারীকে ছোট করা বন্ধ করবেন, গা বাঁচানো পপুলার নারীবাদের মুরিদগণ “অমুক স্লাট, তমুক নেশাখোর, এগুলা নারীবাদ না” বলে ফাল পাড়া বন্ধ করবেন!
মনে রাখবেন, যে মুহূর্তে আপনি একজন নারী থেকে দেবী দুর্গার মত চৌদ্দ হাজার দিক সামলানোর এক্সপেকটেশন রাখবেন এবং ডিসাইড করে দিবেন যে ওটাই ফেমিনিজম। ঠিক সেই মুহূর্তে আপনি একজন নারীর কেবল নারী হিসেবে, কোনো সাক্ষাত সুপার উইম্যান হিসেবে নয়, যেই অস্তিত্ব সেইটাকে ছোট করে দেখতেছেন। এটা কোনোভাবেই ফেমিনিজম হইতে পারে না।
ফেমিনিন সাইডকে একজন নারী খুশিমনে গ্রহণ করলে সে ন্যাকা, লুতুপুতু, অবলা হয়ে যায় কেন আপনাদের কাছে?
আর যারা নারীর ফেমিনিন সাইড কে দুর্বলতা ভেবে নিয়ে সেটাকে নাকচ করে দেয়াই সহীহ ফেমিনিজম ভেবে থাকেন, আপনারাই আবার হোমোসেক্সুয়্যাল, বাই সেক্সুয়্যাল, ট্রান্সজেন্ডারদের ফেমিনিন সাইডকে ভালোবাসেন। ফর এক্সাম্পল (গোলাপি শার্ট পরা, লিপস্টিক বা সাজগোজ করা) সেগুলোকে খুশি মনে সাপোর্ট করেন। আপনাদের চেয়ে দ্বিগুণ সাপোর্ট আমিও করি। প্রশ্নও করি, এতটা হিপোক্রেসি কেন? ফেমিনিন সাইডকে একজন নারী খুশিমনে গ্রহণ করলে সে ন্যাকা, লুতুপুতু, অবলা হয়ে যায় কেন আপনাদের কাছে? একজন পুরুষকে স্বেচ্ছায় নারীত্ব বরণ করতে দেখা যতটা সুন্দর, ততটাই সুন্দর নারীকে নারীত্ব বরণ করতে দেখাটা। কোনোটাই দুর্বলতা না৷ একদম না।
লেখক সানজিদা আলম রিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক পড়ছেন