ঘটনাটি বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার চরফ্যাশন থানা এলাকার। নয় বছরের প্রেমের পরিণতিতে বিয়ে হয়েছিল চৈতি রানীর। পালিয়ে নয়, দুই পরিবারের বোঝাপড়া ও আলাপের পরই ১৩ মাস আগে বিয়ে হয় চৈতি রানীর। বরিশাল বিএম কলেজে পড়া চৈতির সাথে বিয়ে হয়ে যায় কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মানস মজুমদার শাওনের। বিয়ের কথায় যৌতুকের কোন দাবি না তুললেও বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ির পুরো পরিবার ও বর মানসের নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতেন চৈতি। মেয়ের পরিবার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে চাইলে হঠাৎ করেই ভালো ব্যবহার শুরু করেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। এরপর কিছুদিন পরে শুক্রবার (৪ মাচং, ২০২২) মেয়ের পরিবারকে খবর দিলেন সিলিং ফ্যানে ঝুলছে তাদের প্রিয় কন্যার লাশ।
চৈতির ছোট বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অর্পা রয় উইম্যানভয়েসবিডিকে জানান, বিয়ের কথায় কোন যৌতুকের প্রসংগ আনেনি তারা। কিন্তু আমার বোনকে বিয়ের পর থেকে যৌতুকের অজুহাতে নির্যাতন করত। শুধু মানসিক নয় শারীরিকভাবেও। মাত্র ১৩ মাস হয়েছে আমার দিদির বিয়ের। এসব ঘটনা জানার পর এরমধ্যেই আমরা তাকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা হঠাৎ করে খুব ভাল ব্যবহার করা শুরু করে। দিদি তখন ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলcw।
অর্পা রয় আরও বলেন, ‘দিদি যদি আত্মহত্যাই করবেন তবে তিনি শাশুড়ির শাড়ি ব্যবহার করে ফ্যানে ঝুললেন কেন? তার নিজের শাড়ি ছিলো না। চাপে পড়েই আমরা আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা দায়ের করি। এটি আত্মহত্যা নয় হত্যা। আমার দিদিকে ওরা হত্যা করেছে।’
চর ফ্যাশন থানায় মামলা
আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে নিহত নারী চৈতির পিতা সুভাষ চন্দ্র রায় মামলা দায়ের করেছেন। চৈতির স্বামী মানস শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে শনিবার মামলা দায়েরের পর রোববার স্বামী ও শ্বশুরকে পুলিশ হেফাজতে নিলেও শাশুড়ি এখনও পলাতক রয়েছেন।
আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চৈতির স্বামী মানস মজুমদার শাওন ও শ্বশুর কৃষি উপ-সহকারী সমির মজুমদারকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে ও নিহত চৈতির মরদেহ ভোলার মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় চরফ্যাশন থানা পুলিশ।
চৈতির বাবা স্কুল শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেন, মেয়ে তার স্বামীসহ তার পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন করে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে শয়ন কক্ষের ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে ঘাতক জামাতা শাওন ও তার পরিবারের সদস্যরা।
পুলিশ হেফাজতে থাকা গৃহবধূর স্বামী মানস মজুমদার শাওন জানান, ‘স্ত্রী চৈতিকে বিয়ে বাড়িতে নিয়ে না যাওয়ার ক্ষোভে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছেন।’
চরফ্যাসন থানার ওসি মো. মনির হোসেন মিয়া বলেন, ‘গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা নেয়া হয়েছে। দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আলাদতে সোপর্দ করা হয়েছে।’