“আমি নারীবাদী, সবার নারীবাদী হওয়া উচিত” বললেন জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। জার্মানের সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলে জানায়, ডুসেলডর্ফে নাইজেরিয়ান লেখিকা চিমামান্দা এনগোজি আদিচের সাথে গতকাল বুধবার (৮সেপ্টেম্বর ২০২১) একটি ইভেন্টে অংশ নেন মার্কেল। সেই অনুষ্ঠানে নারীবাদী হিসেবে নিজেকে প্রথম স্পষ্ট প্রকাশ করেন অ্যাঙ্গেলা মার্কেল।
অ্যাঙ্গেলা মার্কেল বলেন, “সমাজে অংশগ্রহণ এবং সাধারণ জীবনবোধের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সমান। এই অবস্থান থেকে আমি একজন নারীবাদী, সবার নারীবাদী হওয়া উচিত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের অধিকার এবং মর্যাদার সাম্য থাকা প্রয়োজন। সেই দিক থেকে ভাবলে, হ্যাঁ, আমি নারীবাদী।”
কয়েকবছর আগেও এতটা সহজে নিজেকে নারীবাদী বলতে পারেননি মার্কেল। ২০১৭ সালে উইমেন ২০ সামিটে নারীবাদ সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে মার্কেল বলেন, ‘তখন নারীবাদ নিয়ে স্পষ্ট ধারণা ছিলনা তাই নিজেকে নারীবাদী বলতে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করত। এখন নিজেকে নারীবাদী বলতে পারি।’
সাংবাদিক মিরিয়াম মিকেল ও লিয়া স্টেইনাকারের সাথে দীর্ঘ আলোচনায় মার্কেল মানসিকভাবে অসুস্থ পরিবারের সদস্যদের সাথে তার ছোটবেলার সময়ের বর্ণনা দেন। নিজের কলেজ জীবনের কথা বলেন। তিনি পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়েছেন, তার ক্লাসে নারী কার্যত ছিলই না। গবেষণাগারে কাজ করার টেবিল পেতেন না তিনি। কারণ, তিনি নারী। তিনিই পরবর্তীকালে ইতিহাস রচনা করেন, জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর হয়ে।
মার্কেলের মতে, কয়েক দশকে জার্মানির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর পুরুষশাসিত সমাজ নেই। নারী তার অধিকার নিয়ে সচেতন। এখন কোনো অনুষ্ঠানে শুধু পুরুষ দেখলে তার অস্বস্তি হয়। ২০ বছর আগেও যা হতো না।
উল্লেখ্য, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানির পার্লামেন্ট নির্বাচনে নির্বাচিতরা দেশটির পরবর্তী চ্যান্সেলর ঠিক করবেন। অবশ্য কয়েক সপ্তাহ আগে সেই নির্বাচনের জন্য নিজের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে আরমিন ল্যাসেটের নাম ঘোষণা করেছেন বিদায়ের পথে থাকা মার্কেল।
আঙ্গেলা ডোরোটেয়া মার্কেল
আঙ্গেলা ডোরোটেয়া মার্কেল হলেন জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর। তিনিই প্রথম নারী চ্যান্সেলর জার্মানির। তিনি ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল জার্মানির মেকলেনবার্গ-ভোরপোমার্ন প্রদেশ থেকে জার্মান সংসদে চ্যান্সেলর নির্বাচিত হন। মার্কেল ক্রিসচিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ২০০২ হতে ২০০৫ পর্যন্ত ক্রিসচিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন এর সংসদীয় জোটের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জার্মানির দুই বড় রাজনৈতিক দল ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন এবং সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ জার্মানির সমন্বয়ে গঠিত জোটের নেতৃত্ব দেন। পরে ২০০৯ এর ২৭ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তার দল সর্বাধিক সংখ্যক ভোট পেয়ে জয়ী হয়ে জোট সরকার গঠন করে। ২০০৭ সালে আঙ্গেলা মার্কেল ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। স্বাস্থ্য সেবা সংস্কার এবং ভবিষ্যৎ জ্বালানী উন্নয়ন সংক্রান্ত সমস্যা তার মেয়াদকালের প্রধান চ্যলেঞ্জ।