১ হাজার এক টাকা কাবিনে বিয়ে— ‘কম কাবিনের বিয়েতে বরকত আছে’ বলে মাত্র ১ হাজার এক টাকা কাবিনে বিয়ে করে সে সামিনাকে (ছদ্মনাম)। নিজের পরিবারের কাউকে জানতে দেয়নি বিয়ের কথা। কিছুদিন পর সামিনার গর্ভে সন্তান আসলে তার চরিত্র পাল্টে যায়। অন্য মেয়ের সঙ্গে শুরু করে মেলামেশা। সামিনাকে না জানিয়ে আরেকটি বিয়েও করতে চায় সে। এসব নিয়ে বাধা দিলে সামিনার উপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। শুধু তাই নয়, সামিনার আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে দিয়েছে সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
পাঠক, আপনারা কি ভাবছেন বস্তিতে থাকা অশিক্ষিত কোনো রিকশাচালকের স্ত্রীকে নির্যাতনের গল্প এটি? অথবা কোনো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ কিংবা মাদকসেবী মাতাল হয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে? এমনটি ভাবলে ভুল হবে।
মানুষটির পরিচয় জানলে আপনার চোখ ঠেকতে পারে কপালেও! যে মানুষটি তার স্ত্রীর উপর এমন নির্যাতন করে বেড়াচ্ছেন তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক! ডা. কাজী মো. শরীফুল ইসলাম। তার বাড়ি কুমিল্লা। এমবিবিএস শেষে ৩৯তম বিসিএস পাশ করে বরিশালের পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জে কর্মরত আছেন। ঢাকায় এক নারীকে পটিয়ে বিয়ের পর এক ছেলে সন্তানের বাবা হন। এরপরও প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে প্রতারণা করে বিভিন্ন জায়গায় দ্বিতীয় বিয়ের চেষ্টা করছেন। বাধা দিলে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের পর সবশেষে চরিত্রহীন প্রমাণ করতে ফেসবুকে স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি ও তার বিষয়ে কুৎসা রটাচ্ছেন সুদর্শন এ তরুণ চিকিৎসক।
![চিকিৎসক তার স্ত্রীকে বলেছিলেন কম কাবিনে বিয়ে বরকতময়](https://womenvoicebd.com/wp-content/uploads/2020/06/DOCTOR-HUSBAND-ASSAULTS-WIFE-FOR-SECOND-MARRIAGE-women-voice-bd.jpg)
উইম্যান ভয়েসকে সামিনা বলেন চিকিৎসক স্বামীর নির্মমতার কথা
সামিনা উইম্যানভয়েসকে বলেন, ‘আমার যখন বাচ্চা পেটে, সে তখন প্রায় দুই মাস পর্যন্ত চেষ্টা করে যাতে আমি বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলি। আমাকে কখনো বুঝায়, কখনো ব্ল্যাকমেইল করে, কখনো হুমকি ধমকি দেয়। কিন্তু আমি রাজি হই না।’
তিনি বলেন, ‘এরপর আমার সাথে বিয়ের কথা গোপন করে অন্য মেয়েকে বিয়ে করার বারবার চেষ্টা করে। বাধা দিলেই অশ্রাব্য গালাগাল দিত। নির্যাতন করতো। বাসায় এসে ভাংচুর করত। একপর্যায়ে আর সহ্য করতে না পেরে কদমতলী থানায় জিডি করেছি। অভিযোগ লিখে পাঠিয়েছি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও। কয়েকবার ঢাকার কদমতলী থানায় মামলা করার চেষ্টা করেছি। থানা মামলা নেয়নি। পরে আমি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদেও অভিযোগ করেছি। সেখান থেকে তাকে তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়। সে একবার উপস্থিত হয়েছিল।’
![মেসেজ করেও স্ত্রীকে নোংরা গালি দেন চিকিৎসক শরীফ।](https://womenvoicebd.com/wp-content/uploads/2020/06/DOCTOR-HUSBAND-ASSAULTS-WIFE-FOR-SECOND-MARRIAGE-Womenvoice-bd-2.jpg)
দেখুন আমার বাচ্চা হয়েছে। তাই তাকে ছেড়ে দিতে চাইনি। তার বাচ্চার মা হওয়ার পরও এখন এসে সে আমার আপত্তিজনক ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে হেনস্থা করছে। আমার বিয়ের কাবিন ছিল এক হাজার এক টাকা। তার কথা ছিল এটা ধর্মের নিয়ম। কম কাবিনের বিয়েতে বরকত আছে। এখন সে বলে— এক হাজার টাকা কাবিন। তোকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দেব।’
ভুক্তভোগী সামিনা বলেন, ‘সে যখন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় আমি তাকে পারিবারিকভাবে এগুতে বলি। আমি গোপনে বিয়ে করতে চাইনি। সে আমাকে ও আমার পরিবারকে বুঝায় যে তার পরিবার রাজি হচ্ছে না। আবার সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। তার জোরাজোরিতে একসময় আমার পরিবার রাজিও হয়ে যায়। ২০১৯ এর ২৯ মার্চ আমাদের বিয়ে হয় এক হাজার এক টাকা কাবিনে।’
‘কম টাকায় কাবিন হলে বিয়ে বরকতময় হয়’—এ ধরনের কথা বলে সে আমার পরিবারকে রাজি করায়।
‘বিয়ের কিছুদিন যেতেই আমি অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়ি। ওই সময় সে আমাকে হঠাৎ করেই দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলে পরিবারের উসিলা দিয়ে। তার পরিবার ও সে চাইছে কোন অনার্স পড়া সাধারণ মেয়ে নয়, কোন সরকারি ডাক্তারকেই দ্বিতীয় বিয়ে করবে। সে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে বাচ্চা নষ্ট করার জন্যে। তবে আমি কিছুতেই রাজি হইনা। পরে আমি যখন দেড় মাসের প্রেগন্যান্ট তখন সে আমার বাসা থেকে চলে যায়। মাঝে মাঝে এসে থাকতো। এসে আমাকে মারধর করতো, ভাঙচুর করতো। সে সবসময় আমাকে টেক্সট করেও নোংরা গালি দেয়। আমাকে বলে— তুই যাই কর, আমার কাছে একটা বেশ্যাই থাকবি।’— যোগ করেন সামিনা।
সামিনা বলেন, সে বিয়ের পর কখনও ঠিকভাবে ভরণপোষণ দেয়নি। তার জেদ ছিল আমি কেন তার সাথে আমার বিয়ের কথা সবাইকে জানালাম। অন্তসত্ত্বা অবস্থায়ও একদিন আমাকে চালায়নি। কিন্তু আমার বাচ্চার ডেলিভারির আগে সে হঠাৎ ভালো হয়ে যায়। খুব সুন্দর করে কথা বলে। বাবুর জন্য কী লাগবে জিজ্ঞস করে। ওই সময় বাচ্চা ডেলিভারির খরচ বাবদ ১ লাখ টাকা পাঠায়। এটাও তার ট্র্যাপ ছিল আমি পরেই বুঝতে পারি। সে চেয়েছে তার অন্য বিয়েতে আমি বাধা না দিই। যখনই দেখলো আমি সেটা মানছি না। তখনই আবার আসল রূপে ফিরে আসল।
![ভুক্তভোগী স্ত্রী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন অভিযোগ লিখে পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও](https://womenvoicebd.com/wp-content/uploads/2020/06/DOCTOR-HUSBAND-ASSAULTS-WIFE-FOR-SECOND-MARRIAGE-Complain.jpg)
সামিনা বলেন, আমি সাধারণ ঘরের মেয়ে বলেই সে আমাকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেছে এটা আমাকে প্রায় বলত। কারণ আমাকে নির্যাতন করলে স্ত্রীর মর্যাদা না দিলে আমি কিছুই করতে পারব না। আমি যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি সব ঠিক রাখতে। আর পারছি না। ২ মাসের বাচ্চা আছে আমার বারবার মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ছি।
তিনি বলেন, ‘তার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এ বছরের জানুয়ারিতে ঢাকার কদমতলী থানায় জিডি করি। এগুলোকে সে তোয়াক্কাতো করেই না উল্টো আমার স্বামী শরীফ তার সরকারি চাকরির নিয়ে ক্ষমতার ভয় দেখায়। এরপর আমি গত ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করি। সে আমাকে অনলাইনে এমনভাবে হয়রানি করছে যে, আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার কোন পথ থাকবে না।’
সামিনা বলেন, ‘একদিকে সে আমার নামে নোংরা কথা লিখে ফেসবুকে ছড়াচ্ছে অন্যদিকে সে আমার ব্যক্তিগত নম্বরে জানাচ্ছে সে নাকী আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে। এখন করোনার সময় আমি তার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবো না।’
এদিকে ডা. কাজী শরীফুল ইসলামের সিলেট ওসমানি কলেজের এক ব্যচমেটের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শরীফের ঘটনাগুলো শুনেছি। তবে তার সাথে মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করার পর থেকে কোন যোগাযোগ নেই। তার মানসিক স্ট্যবিলিটি নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ সে যা করছে তা কোন স্বাভাবিক মানুষ তা করতে পারে না। নিজের স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে ছড়ানো ও সন্তান হওয়ার পরও অন্য বিয়ে করার চেষ্টা এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা।
নিজেকে অবিবাহিত জানিয়ে যেসব চিকিৎসক নারীদের তিনি বিয়ের প্রস্তাব দিতেন ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করতে চাইতেন তাদের মধ্যে একজন সামিনার বিষয়ে জানার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। ওই চিকিৎসককেও ডা. শরীফ মানহানি মামলার হুমকি দিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. কাজী মো. শরীফের বক্তব্য জানতে তার সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
https://www.youtube.com/watch?v=G_bwE_zMPw0