বারবার ‘আল্লার দোহাই’ ও ‘বাবা’ ডেকে পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েও তাকে নিস্তার দেয়নি ধর্ষকের দল। ধর্ষণের পর নারীকে বিবস্ত্র করে বীভৎস কায়দায় মধ্যযুগীয় নির্যাতন করেছে তারা। কোন অভিযোগ বা মামলা নয়, ঘটনার পরই এলাকা ছেড়েছেন ভিকটিমের পরিবার। গণধর্ষণের ৩২ দিন পর ওই ‘নির্যাতনের ভিডিও’ ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে সারাদেশে। রোববার (৪ অক্টোবর) দুপুরে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় পুলিশ। আবদুর রহীম নামে একজনকে আটক করা হলেও বাকিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। নির্মম এ ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জে। ফেসবুকে গণধর্ষণের অভিযোগ তুলে নোয়াখালীর আলোচিত দেলোয়ার বাহিনীর বিচার দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
রোববার সন্ধ্যায় বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ আব্দুর রহীম (২৭) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। আবদুর রহিম একলাশপুর ইউনিয়নের পূর্ব একলাশপুর গ্রামের হাড়িধন বাড়ির বাসিন্দা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। তবে পুলিশ বলছে ভিকটিমকে পাওয়া গেলেই জানা যাবে এটি গণধর্ষণ না নির্যাতনের ঘটনা।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, ধর্ষকদের মধ্যে একজন টেনে হিচড়ে ভিকটিমের গায়ের পোশাক খুলে ফেলে। ভিকটিম নারী খাটে থাকা তোষক ও বিছানার চাদর দিয়ে নিজেকে ঢাকতে চেষ্টা করেন। সেটিও টেনে খুলে নেয় ওরা। একজন ভিকটিমের যোনীতে বারবার আঙ্গুল প্রবেশ করাচ্ছিল অন্যএকজন তার গলা টিপে ধরেছিল ও কয়েকজন যুবক তার শরীরে কামড় বসাচ্ছিল। এক পর্যায়ে নারীর যোনীতে লাঠি প্রবেশ করিয়ে দেয় তারা। ওই সময় ভিকটিম নারী বারবার ধর্ষকদের বাবা ডেকে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইছিলেন ও আল্লাহর দোহাই দিয়ে চিৎকার করছিলেন।
জানা যায়,স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল ভিকটিম নারীর। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে একটি ভাড়া বাসায় তিনি একাই বাস করতেন। ঘটনার দিন নারীর বাসায় তার স্বামী এলে তাকে ‘অনৈতিক কাজের জন্য’ দায়ী করে তার ঘরে ঢোকে দেলোয়ার বাহিনীর দেলোয়ারসহ একদল যুবক। ভিকটিমকে অনৈতিক কাজ করেছে বলে জানিয়ে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ধর্ষকের দল। মধ্যযুগীয় কায়দায় স্বামীকে বেঁধে রেখে নারীকে তার নিজের ঘরে ধর্ষণের পর বিবস্ত্র করে শুরু করে মধ্যযুগীয় নির্যাতন। ভয়ে ভিকটিম নারী কোন অভিযোগ দায়ের করেননি বরং পরিবার সমেত এলাকা থেকে সরে যান। ৩২ দিন পেরিয়ে গেলে হঠাৎ ফাঁস হওয়া ১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভিকটিম নারীর উপর ঘটে যাওয়া বর্বরতম নির্যাতনের ঘটনাটি সবার সামনে চলে আসে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেছেন, ‘আনুমানিক গত ২ সেপ্টেম্বর উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছিল। ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ভয়ে নির্যাতনের শিকার ওই পরিবার এ নিয়ে কোন কথা বলতে অনীহা জানায়। তারা থানায় কোন অভিযোগও দায়ের করেনি।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেগমগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.হারুন উর রশীদ বলেন, ‘খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে টিম গিয়েছে। আবদুর রহিম নামের একজনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ চেলছে। আমরা ভিকটিমের পরিবারেরও খোঁজ নিচ্ছি। ভিকটিমের অভিযোগ পেলে বাকিদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন অভিযুক্তরা কোন ছাড় পাবে না। ঘটনা নজরে আসার পরই আমরা কাজ শুরু করেছি। জেলা পুলিশের ৫টি ইউনিট মাঠে কাজ করছে।’