কন্যাস্নেহের আদলে যৌন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা লিখে ‘হ্যাশ ট্যাগ মি টু’র আঙ্গিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অভিযোগ করেছেন ভারতের কলকাতায় এমফিল অধ্যায়নরত এক ছাত্রী। অভিযোগটি উঠেছে ভারতের কলকাতার লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সুপরিচিত বেলুড়ের এক কলেজের অধ্যাপক শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিকটিমকে সামাজিক হয়রানি ও চরিত্রে কলংকলেপন (স্লাট শেমিং) হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন দেশটির নারী অধিকার কর্মীরা।
এ ঘটনায় কলকাতার নেতাজিনগর থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভিকটিম নারী কল্পনা (ছদ্মনাম)। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে সিপিআইএমএল লিবারেশন নামীয় রাজনৈতিক সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে শামীম আহমেদকে। এদিকে অভিযোগটির বিষয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে, বিভিন্ন নামী ওয়েবজিনে লেখা ছাপিয়ে দেওয়ার কথা বলে আরও নারীকে তিনি যৌন নিপীড়ন করেছেন বলে উইম্যানেভয়েসবিডিকে নিশ্চিত করেছে পশ্চিমবঙ্গ সূত্র।
ভিকটিম নারী কল্পনা উইম্যানভয়েসবিডিকে বলেন, আমার পরিচিত এক দাদা সঞ্জয় তিওয়ারি ও লেখক শামিমের আমন্ত্রণে আমি আমার বন্ধু রুদ্র প্রভাকর দাসের সাথে শামিম আহমদের ভাড়া বাড়ি যাই গত ১৭ এপ্রিল। সেই দিনই প্রথমবারের জন্য তার সাথে আমি পরিচিত হই। তিনি আমাকে পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চান ও সাহায্য করার প্রয়োজনে আমার নম্বর চান। আমি আমার বন্ধু রুদ্রর থেকে পরে ওনার নম্বর নেওয়ার কথা বললেও , তিনি তৎক্ষণাৎ তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারটি আমার ফোনে সেভ করার জন্য জোর করেন এবং তখনই আমার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার থেকে টেক্সট পাঠাতে বলেন যাতে তিনি বুঝতে পারেন যে নাম্বারটি আমার।
ভিকটিম ছাত্রী কল্পনা বলেন, ‘ওইদিন তার বাড়িতে তিনি আমাকে বলতে থাকেন যে আমি খুব মিষ্টি এবং আমাকে দেখে ওনার চটকাতে ইচ্ছে করছে এবং আমার গাল ধরে তার টিপে দিতে ইচ্ছে করছে। তিনি আরো বলেন আমাকে দেখে তার নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ছে এবং যদি আমি তার মেয়ে হতাম তাহলে তিনি আমায় চটকে দিতেন আদর করে’।
‘একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী হিসেবে কথাগুলো ঠিক মনে না হলেও যেহেতু তিনি পিতার বয়সী আমি খারাপ কিছু ভাবা থেকে বিরত থাকি। তার ঠিক পরে তিনি হোয়াটস অ্যাপ মেসেজে লিখেন “চুমু বেটি”। আমি মেসেজটা দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যাই। তিনি সবার সামনে আমাকে বলতে থাকেন যে আমায় দেখে তার মেয়ের কথা মনে পড়ছে এবং আমাদের সকলকেই সেখানে বোঝান যে তিনি আমাকে তার সন্তানের মতোই দেখছেন।’
তিনি লেখেন তার “চুমুর জন্য একটু গোলমাল হয়ে যায়”। আমি মানে জানতে চাওয়ায় তিনি লেখেন “চুমু আমার যন্ত্রণা তুই এত সুন্দর, থাকতে ইচ্ছে করে”। তিনি আমাকে বলেন তার মেসেজ উত্তর না দিলে আমার একাডেমিক ক্যারিয়ারে প্রভাব পড়বে।
তিনি আবার লেখেন, “এই সুন্দরী”, আমি বিরক্ত হই, তিনি আবার, লিখে পাঠান, “তুই আর আমি বসবো আর কাউকে নেবো না।” বিরক্ত হয়ে ওনাকে কিছু না লিখে শুধু স্টিকার পাঠিয়ে এড়াতে চাই। তিনি আমায় লেখেন যে “স্টিকার পাঠাস না, কথা বল”। তিনি আবার লেখেন আমাকে একা একা তার বাড়িতে আসার জন্য। ঘরে উপস্থিত বাদবাকিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথোপকথন করে যাওয়ায় তিনি আমাকে বারবার টেক্সট করতে থাকেন।
আমি বিরক্ত হয়ে লিখি ,”আমি আমার সঙ্গী ছাড়া কোথাও একা যাই না। তিনি লেখার উত্তরে বলেন, “তাহলে আপনি আসবেন না, আপনার নিজের উপরে কনফিডেন্স নেই”, এবং আরো লেখেন,” যে তুই আর আমি অসুবিধাটা কোথায়? আমি তো অসুর বা বৃদ্ধ নই” ।
ভিকটিম নারী কল্পনা বলেন, আমি মেসেজের রিপ্লাই না দিয়ে ডিরেক্টলি সামনাসামনি মুখে বলি যে – উনি আমার বাবার মতন বয়সি। তিনি রেগে গিয়ে তৎক্ষণাৎ মেসেজে লিখেন যে আমি তার মেয়ে নই এবং মুখে বলেন যে “তুই আমার মেয়ে নোস। আমার বয়স ৩৯। তোর কত? ” তারপরেও তিনি থামেন না লেখেন, “এত মিষ্টি তুই , ও ঘরে চল একটু হামি খাই”।
আমি অসম্মতি জানালে তিনি মেসেজগুলো আনসেন্ট করতে থাকেন।
ওইদিন তিনি আমাকে ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে বলেন, ” পরে যদি সুযোগ না পাই, তাই এখনই তোকে জড়িয়ে ধরতে চাই”,। আমি খুব ভয়ে ভীষণভাবে ওখানে পুরো শীতল হয়ে গেছিলাম আমার চারপাশটা মনে হচ্ছে যেন অন্ধকারে ছেয়ে গেছে, আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছিলো এবং খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। আমি এরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম যেটা আমি কল্পনাও করিনি কখনো। উনি দুবার জোর করে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন। আমি চিৎকার করে উঠে ছিলাম রুদ্রর নাম নিয়ে কিন্তু ওরা শুনতে পাচ্ছিল না আমার চিৎকার। ওই লোকটা দুহাত দিয়ে আমার গাল চেপে ধরে। ঠিক তারপরে ওরা যেই চলে আসছে দেখে , দৌঁড়ে সরে যাই । এই ঘটনাগুলির মাঝেও বারবার লোকটি আমার গায়ে হাত দেয়।
আমি সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির সাথে যোগাযোগ করি আর ওই সংগঠনের সদস্যদের সাথে নিয়ে আমার ছাত্র সংগঠনের সাথীরা একসাথে মিলে শামিমের বাড়ি যাই সকালেই ওনার আচরণের জন্য প্রশ্ন করতে।
সেই সময় তিনি আমার সাথে করা শারীরিক হেনস্থার কথা অস্বীকার করেন এবং আমি প্রমাণ দিলে তিনি ধরা পড়ে যান সকলের সামনেই।
ভিকটিম নারী বলেন, আমি শেষপর্যন্ত আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত লেখক শামীম আহমেদের সাথে যোগোযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডিতে যোগোযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি প্রতিবেদকের আইডি ব্লক করে দেন।