ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুসলিম নারীদের মহিলাদের টার্গেট করে অশ্লীলবার্তা ও নারী বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে অ্যাপ তৈরি ও প্রচারে ক্ষুব্ধ দেশটির মুসলিম নারীরা। বিভিন্ন পেশায় থাকা মুসলিম নারীরাই তাদের প্রধান টার্গেট। ধর্মীয় বিদ্বেষ থেকেই এমন কাণ্ড ঘটছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুল্লি বাই কাণ্ডে শ্বেতা নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের মতে ওই অ্যপটি শ্বেতার নিজস্ব মস্তিষ্ক প্রসূত। যদিও এর আগেও মুসলিম নারীরা অনলাইন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন সুলি ডিল নামক অন্য একটি অ্যপের মাধ্যমে।
ভারতের মুম্বই পুলিশ এই মামলা নিয়ে তদন্তে নেমে ঘটনা খতিয়ে দেখে জানায়, ঘটনায় অভিযুক্ত ইচ্ছাকৃতভাবে শিখ ধর্মের ট্যাগ টুইটার হ্যান্ডেলে ব্যবহার করত বুল্লিবাই কাণ্ডের তিন অভিযুক্ত। প্রশ্ন উঠছে, এই শিখ ধর্মের পেজগুলির ট্যাগ টুইটারে কেন ব্যবহার করত বুল্লি বাই কাণ্ডে ধৃত এই অভিযুক্তরা?
পুলিশ বলছে, ধর্মীয় বিভেদের উদ্দেশ্যই এমন পদক্ষেপের নেপথ্যে থাকতে পারে। তবে বুল্লিবাই কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে, বুল্লি বাই কাণ্ডে,’কে এসএফ খালসা শিখ ফোর্স’ নামে একটি নতুন টুইটার হ্যান্ডেল তৈরি করা হয়। এই টুইটার হ্যান্ডেল তৈরির নেপথ্যে উত্তরাখণ্ড থেকে ধৃত ১৮ বছর বয়সী শ্বেতা সিং নামের এক তরুণীর নাম উঠে আসছে। ইতিমধ্যেই তাকে গ্রেফতার করেছে মুম্বই পুলিশ। শ্বেতার সূত্র ধরে উত্তরাখণ্ডের আরও এক তরুণের খোঁজ এই মামলায় পায় পুলিশ। ২০ বছরের মায়াঙ্ক রাওয়াত এই মামলার তৃতীয় অভিযুক্ত। উল্লেখ্য, ওপেন সোর্স হোস্ট প প্লাটফর্ম গিটহাবে তৈরি হয়েছে এই ‘বুল্লি বাই’। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই অ্যাপ তৈরি হতেই ১ জানুয়ারি তার প্রমোশন টুইটারে হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এই অ্যাপের টুইটার প্রমোশনে একাধিক শিখ সম্প্রদায়ের নামের উল্লেখ ছিল। মহিলাদের উদ্দেশ্য করে এমন বক্তব্যের নেপথ্যে ‘সাম্প্রদায়িক বিচ্ছেদই তৈরি করতে চাইছিল ‘ অভিযুক্তরা। মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে, ‘এদের সঠিক সময়ে গ্রেফতারির ফলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা গিয়েছে।’ উল্লেখ্য, এই মামলায় এপর্যন্ত তিন জন গ্রেফতার হয়েছে।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৫ এ, ১৫৩ এ, ১৫৩ বি-এর ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে এই মামলায় পর পর অভিযোগ আসতেই, বিশাল কুমার ঝাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুল্লি বাইয়ের টুইটার হ্যান্ডেলের ফলোয়ারদের মধ্যে থেকে তাকে বিভিন্ন সন্দেহের জেরে গ্রেফতার করতেই সামনে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধৃত বিশালের একটি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মুম্বই পুলিশের তরফে পুলিশ কমিশনার নাগরালে জানিয়েছেন, ‘আমরা তদন্তের মধ্যে দিয়ে জানার চেষ্টা করছি গোটা বিষয়টির সঙ্গে কোনও ষড়যন্ত্র জড়িয়ে রয়েছে কি না, মুম্বই পুলিশের সাইবার শাখা বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করছে।’
মুম্বাই পুলিশ কমিশনার হেমন্ত নাগরেল বলেছেন, জনপ্রিয় ১০০ মুসলিম নারীকে নিলামে উঠিয়ে বিক্রির অনলাইন অ্যাপ ‘বুল্লিবাই’-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তৃতীয় আরো একজনকে আটক করেছেন তাঁরা। ইন্ডিয়া টুডে জানাচ্ছে, ২১ বছর বয়সী অভিযুক্তের নাম মায়াঙ্ক রাওয়াল, তাঁকে উত্তরাখণ্ড থেকে আটক করা হয়।
একই অভিযোগে গতকাল মুম্বাই পুলিশ ২১ বছর বয়সী প্রকৌশলের ছাত্র বিশাল কুমার ঝা এবং ১৮ বছর বয়সী শ্বেতা সিংকে গ্রেপ্তার করে। ‘আটক তৃতীয়জন শ্বেতার বন্ধু। আমরা মনে করছি এ ঘটনায় আরো কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে’- বলেন হেমন্ত।
আটক বিশাল কুমারকে বান্দ্রা আদালত আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। নাগরেল বলেন, ‘এই কেসটি অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে। জোর তদন্ত চলছে। আমরা আপাতত এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’
উত্তরাখণ্ড পুলিশ জানায়, ধারণা করা হচ্ছে ‘বুল্লিবাই’ অ্যাপটি শ্বেতার ব্রেনচাইল্ড, মস্তিষ্কপ্রসূত। অ্যাপটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনটি অ্যাকাউন্ট চালাতেন তিনি। ‘আমাদের মনে হয় তিনি টাকার জন্য এসব করতেন’- বলেন উত্তরাখণ্ড পুলিশপ্রধান অশোক কুমার, এনডিটিভির বরাতে।
অ্যাপে ব্যবহৃত মুসলিম নারীদের ছবি তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে সংগ্রহ করা হতো, কোনো রকম অনুমতি ছাড়াই। এরপর অ্যাপে সেই ছবি সাঁটানো হতো ‘বিক্রি’ বা ‘বুল্লিবাই অব দ্য ডে’ ট্যাগ ব্যবহার করে। গত কয়েক মাসের মধ্যে এটি ছিল মুসলিম নারীদের হেনস্তা করা দ্বিতীয় অ্যাপ। এর আগে জুলাইয়ে ‘সুল্লি ডিলস’ নামে আরেকটি অ্যাপ তৈরি করা হয়, যাতে মুসলিম নারীদের ‘আজকের দিনের চুক্তি’ হিসেবে ট্যাগ করা হতো।
গিটহাব হল একটি ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম। সেখানে ‘বুল্লি বাই’ নামের একটি অ্যাপে অনেক মুসলিম নারীর ছবি আপলোড করা হয়েছে, যাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বুল্লি অ্যাপের ফাঁস হওয়া মহিলাদের ছবির তালিকায় একজন নারী সাংবাদিকও রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, ওই অ্যাপটি তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে মুসলিম মহিলাদের ছবি সংগ্রহ করবে এবং তাদের “নিলামে” অংশ নিতে লোকেদের উৎসাহিত করে।
কমিশন ২০২১ সালে এই ধরনেরই আরও একটি ঘটনার কথাও তুলে ধরেছে। যখন এই গিটহাবের ‘সুলি ডিলস’ নামে এক অ্যাপে অনেক মুসলিম মহিলা এবং মেয়েদের ছবি আপলোড করা হয়েছিল। দিল্লি মহিলা কমিশনের হস্তক্ষেপের পরে ২০২১ সালের জুলাইয়ে ওই ঘটনায় এফআইআরও দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।