স্থানীয় প্রেস ক্লাবে সদস্য অন্তর্ভুক্তি ও নতুন প্রেস ক্লাব গঠন নিয়ে দীর্ঘ অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে সাইবার বুলিয়িংয়ের শিকার হয়েছেন ইমতিয়াজ কামাল নামের রাঙামাটির এক তরুণ সংবাদকর্মী। এ ঘটনায় তিনি স্থানীয় অপর দুই সংবাদকর্মী জাহেদা বেগম ও আলমগীর মানিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে গত ৩০ জুলাই রাঙামাটির কতোয়ালী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। জাহেদা বেগম স্বামীর সূত্রে বিটিভির জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন অপরজন আলমগীর মানিক এশিয়ান টিভির জেলা সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত। অভিযুক্ত অপর দুজন হলেন মাসুদ পারভেজ নির্জন ও শহীদুল ইসলাম হৃদয়।
ইমতিয়াজ কামাল তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, ফেসবুকে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে জাহেদা ও আলমগীর মানিক তার বিষয়ে নোংরা ও অরুচিকর মন্তব্যসহ তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। প্রেস ক্লাব বিষয়ক একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে মন্তব্য করার কারণেই তারা এমন আচরণ করছে বলে অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন।
উইম্যান ভয়েস প্রতিবেদককে তিনি বলেন, রাঙামাটির স্থানীয় প্রেস ক্লাব নিয়ে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এখানে একটি অংশ জামায়াত শিবির সমর্থক ও তাদের কার্যকলাপও স্বাধীনতা বিরোধী। সংঘবদ্ধ এ দলের ইন্ধনের কারণেই এলাকার সাংবাদিকদের মধ্যকার সম্পর্ক অস্থিতিশীল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরেই আমি তাদের টার্গেট। ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসে মন্তব্যের পরেই আমার জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে তারা। ফেসবুকে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য ও আমাকে বিভিন্ন আইডি থেকে একের পর মেসেজ করে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে তারা। এক পর্যায়ে তারা আমাকে পাহাড়ি সন্ত্রাসী দলের হাতে তুলে দেবে বলে হুমকি দেয়। উপর্যপরি সাইবার বুলিয়িংয়ের শিকার হয়ে এতটাই সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছি যে আমি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলাম।
এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন জাহেদা ও ইমতিয়াজ কামালের মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও সম্পত্তির বিরোধের কথা উল্লেখ করলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাঙামাটির একাধিক স্থানীয় সাংবাদিকরা বলেন, বিষয়টি প্রেসক্লাবের দ্বন্দ্ব বিষয়ক। তারা বলেন, ‘স্থানীয় প্রেসক্লাবে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে কোন নতুন সদস্য নেওয়া হয়নি। সাংবাদিকতার কোনরকম পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই কেবল মৃত স্বামীর পরিচয়ে তিনি রাতারাতি প্রেস ক্লাবের সদস্য বনে যান। এ ঘটনায় একটি বিরোধ সৃষ্টি হলেও সেটি অদৃশ্য থেকে যায়। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে তারা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য ও মন্তব্য করে।’
তারা আরও বলেন, প্রেস ক্লাবে এখনও একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধী দলের সমর্থকদের দখল রয়েছে। তারাই এখানকার পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল রাখতে চায়।
মো. সাজ্জাদ হোসেন নামের এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, ‘জাহেদা এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক অপকর্মের সাথে জড়িত। আমি তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছি। শীঘ্রই আইনি ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে অভিযুক্ত স্থানীয় সংবাদকর্মী জাহেদা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার বিষয়ে দায়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে। অজানা ব্যক্তিরা ফেক আইডি ব্যবহার করে আমার চরিত্র হনন করে অশালীন মন্তব্য করায় আমিও রাঙামাটি জেলার সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’
অভিযোগের বিষয়ে অপর অভিযুক্ত স্থানীয় সংবাদকর্মী আলমগীর মানিক বলেন, ‘আমি কারও বিরুদ্ধে কোন রকম অশালীন মন্তব্য করিনি। এ অভিযোগের বিষয়েও আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটির কতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, ‘উভয় পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’