একজন নারীর জীবন হবে তার নিজের ইচ্ছায়। লাভ জিহাদ বা ধর্মান্তর প্রতিরোধী আইনের বিষয়ে এক দম্পতিকে নিয়ে মামলায়ে এমন রায় দিয়েছেন আদালত। জানা গেছে সালমান নামের এক মুসলিম তরুণ বিয়ে করেন শিখা নামের এক হিন্দু তরুণীকে। এ ঘটনায় লাভ জিহাদ প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন কনের পরিবার। ওই মামলার রায়ে আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক তরুণী যার সাথে ইচ্ছে জীবনযাপন করতে পারে এক্ষেত্রে তৃতীয় কোন ব্যক্তির নাক গলানোর অধিকার নেই। ভারতে বিজেপি সরকার হিন্দু নারীদের ধর্মান্তর প্রতিরোধ করতে এমন আইন বানায় যা নিয়ে বারত জুড়ে সমালোচনা হচ্ছে।
ঘটনাটি ছিল ভারতের উত্তরপ্রদেশের। তখনও ধর্মান্তর প্রতিরোধী আইন কার্যকর হয়নি। উত্তর প্রদেশের ইটা এলাকায় সালমান নামের মুসলিম তরুণ বিয়ে করেন হন শিখা নামের হিন্দু তরুণীকে। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সালমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন শিখার পরিবার। তাদের অভিযোগ ছিল, মেয়েকে অপহরণ করেছেন সালমান। জোর করে শিখাকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে বাধ্য করেছেন তিনি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শিখাকে শিশু কল্যাণ কমিটির হেফাজতে পাঠিয়ে দেন জেলার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। সেখান থেকে বাবা-মায়ের হাতেই আসে শিখার হেফাজতের ভার।
জেলা আদালতের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সম্প্রতি এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সালমান। বেআইনিভাবে তার স্ত্রীকে আটকে রাখা হয়েছে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সোমবার ওই মামলার শুনানি চলাকালীন উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন এবং মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে সমালোচনা করেছেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি পঙ্কজ নকভি এবং বিবেক অগরওয়ালের ডিভিশন বেঞ্চ।
এলাহাবাদ হাইকোর্টর দুই বিচারপতি কথা বলেছিলেন শিখার সঙ্গে। আদালতে শিখা স্বাক্ষ্য দেন, সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় সালমানকে বিয়ে করেছেন তিনি। আদালতে শিখা জানান, ১৯৯৯ সালের ৪ অক্টোবর তার জন্ম। সে হিসেবে আইনত প্রাপ্তবয়স্ক তিনি। তার পরেও জোর করে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করা হচ্ছে তাকে। সালমানের সঙ্গে শিখা শ্বশুরবাড়ি না ফেরা পর্যন্ত ওই দম্পতিকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
উল্লেখ্য, মুসলিম ছেলের সঙ্গে হিন্দু মেয়ের বিয়েকে ‘লাভ জিহাদ’ আখ্যা দিয়েছে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, ধর্মান্তরের উদ্দেশ্য নিয়েই হিন্দু মেয়েদের ভালবাসার জালে ফাসায় মুসলিম যুবকরা। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন। শেষমেশ চলতি বছরের নভেম্বরে রাজ্যে বিতর্কিত বিয়ের নামে ধর্মান্তরণ আইন পাস করে তার সরকার। উত্তরপ্রদেশের দেখাদেখি, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং কর্নাটকও বিয়ের নামে ধর্মান্তর আইন কার্যকর করতে চায়। ঠিক এমন সময়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট প্রাপ্তবয়স্ত নারীর জীবনের সিদ্ধান্তে অন্যদের নাক না গলাতে বলে রায় দিয়েছেন।