নোবেল বিজয়ী পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই আফগান মেয়েদের স্কুল যাওয়া এবং তাদের শিক্ষকদের কাজ করার অনুমতি দেওয়ার জন্য বিশ্বকে এক স্বরে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন।
আফগানিস্তানে শাসকদের পরিবর্তন কীভাবে দেশের নারী ও মেয়েদের প্রভাবিত করতে পারে তা এক বিবৃতিতে গত বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর ২০২১) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জানান সর্বকনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী মালালা।
মালালা বলেন, ‘আমার গল্প আফগান মেয়েদের অনুপ্রাণিত করতে পারে। সেদিনও সোয়াতের রাস্তায় বন্দুকযুদ্ধ ও বিস্ফোরণ থেকে দৌড়ে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম। গত ১৫ বছর আগেও পাকিস্তানে আমার শৈশব ছিল প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত, মেয়েদের জন্য স্কুলগুলো তাদের দরজা বন্ধ করে দেয়, শপিং মলে ব্যানার দিয়ে মহিলাদের প্রবেশ করতে নিষেধ করে।’
বিবৃতিতে মালালা বলেন, ‘আমার গল্প এমন একটি গল্প যা আমরা একসাথে কাজ না করলে আফগান মেয়েরা শেয়ার করতে পারে তাদের সাথে। প্রত্যেক মেয়ের স্কুলে যাওয়ার অধিকারের জন্য আমি আমার আওয়াজ তুলেছিলাম। আমি দেখলাম একজন বন্দুকধারী আমার স্কুল বাস থামিয়েছে, আমার নাম ধরে ডাকছে এবং আমার দিকে গুলি ছুড়েছে। আমার বয়স তখন ১৫ বছর। আমি দেখেছি আমার বাড়িটা মাত্র তিন বছরে শান্তির জায়গা থেকে ভয়ের জায়গায় বদলে গেছে।
মালালা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে শান্তি ও নিরাপত্তা গড়ে তোলার জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ‘মেয়েদের শিক্ষা’ এবং আফগান নারী ও মেয়েদের সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আফগান নারীরা তাদের নিজস্ব ভবিষ্যৎ বেছে নেওয়ার অধিকার দাবি করছে। কাবুলে, তাদের বিক্ষোভ টিয়ার গ্যাস, রাইফেল বাট দিয়ে প্রতিহত করার চেস্টা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মালালা এখনই কাজ করতে স্মরণ করিয়ে দেন।
মালালা জানান, তিনি অনেক আফগান নারী শিক্ষাবিদ এবং অ্যাডভোকেটদের সাথে কাজ করেছেন যারা গত দুই দশক ধরে শিক্ষাব্যবস্থা পুন:নির্মাণে কাটিয়েছেন। তাদের প্রচেষ্টার কারণে, গত বছর আফগানিস্তানের স্কুলে ৩৯ শতাংশ শিশু ছিল মেয়ে। এখন সেই অগ্রগতি এবং সেই মেয়েদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে।
মালালা জানালেন অনেক আফগানদের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন কিছু জায়গায় মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ করা হচ্ছে এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকতে বলা হচ্ছে। অনেক মহিলা শিক্ষকদের বলা হয়েছে তাদের আর চাকরি নেই।
তালেবানরা ২০ বছর গত মাসে কাবুলে ফিরে এসে আবার মেয়েদের শিক্ষার প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করছে এবং তাদের বাড়িতে থাকতে বাধ্য করছে।
মালালা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, নারী ও মেয়েদের অধিকার সমুন্নত রাখা হবে তাদের সঙ্গে যে কোনো কাজের সম্পর্কের পূর্বশর্ত। তালেবানদের কাছে একটি স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন বার্তা পাঠানোর জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান নোবেল বিজয়ী মালালা।