ঋতুস্রাবে ‘বিরতি’ নিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খান অনেক নারী অ্যাথেলেটরা। স্পোর্টস এমডি ওয়েবসাইটের মতে, গর্ভনিরোধক নারীর শরীরের হরমোনকে প্রভাবিত করে এবং এটি নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে কিছু নারী অ্যথলেটস নিজেদের শরীর চক্রের সবচেয়ে ভাল সময়টিতে প্রশিক্ষণ নেন। এবং সেটি নিশ্চিত করতে পিরিয়ডকে মনিটরিং করেন।
২০২১ এ টোকিও অলিম্পিকে নারীর অংশগ্রহণ প্রথমবারের মতো লিঙ্গ সমতায় পৌঁছেছিল। প্রায় এগারো হাজার প্রতিযোগীর মধ্যে ৪৯ শতাংশ নারী অংশ নিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির মতে, প্যারালিম্পিকে অন্তত ৪০.০৫ শতাংশ অ্যাথলেট, নারী। ২০১৬ সালের রিও ডি জেনিরোর তুলনায় একশোর বেশি নারী অ্যথলেট ছিলেন সেখানে। কিন্তু অলিম্পিকের বিশ্ব মঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নারী অ্যাথলেটসের জন্য তুলনামূলক কঠিন কারণ ট্রেনিং থেকে শুরু করে ইন্জুরি, তাদের লড়াই করতে হয় ঋতুস্রাবের সাথে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে নারী অ্যাথলেটসদের আঘাতের ঝুঁকি তাদের মাসিক চক্রের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে বেড়ে যায়। ২০২১ সালে নারী ফুটবলারদের উপর পরিচালিত এক গবেষণা দেখিয়েছে, পিরিয়ড চলাকালীন ক্রীড়া ও শরীর চর্চা এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মতো প্রজনন হরমোনের ওঠানামা বাড়ায়। পেশী, টেন্ডন এবং লিগামেন্টের মতো নির্দিষ্ট টিস্যুকে প্রভাবিত করে। মাসিক চক্রের শেষের ফলিকুলার পর্যায়ে, পেশী এবং টেন্ডনের আঘাতের হার 88 শতাংশ বেশি দেখা যায়, যখন নারীর শরীরে ডিম্বাশয় ডিম্বাণু ছাড়ার প্রস্তুতি নেয়।
ব্রিটিশ অলিম্পিক অ্যাথলেট ইলিশ ম্যাককলগান বিবিসি স্পোর্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ১ বছর আগে যখন তার মাসিক হয়, তার কিছুক্ষণ পরেই তার হ্যামস্ট্রিং টানতে হয়েছিল। তার এক বছর আগে পিরিয়ডের কারণে রোমে অনুষ্ঠিত একটি রেস থেকে সরে আসতে হয় তাকে। তিনি বলেছিলেন, আমার মনে কোন সন্দেহ নেই যে পুরো ব্যপারটি পরস্পর সংযুক্ত। যে রেডিওলজিস্ট আমার পেশী স্ক্যান করেছিলেন পরে তিনিও বলেছিলেন,’ এর আগে কখনও পেশীতে এত প্রদাহ তিনি দেখেননি। অর্থাৎ মাসিকের শারীরিক ক্লান্তি একজন খেলোয়াড়ের কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে, চীনা সাঁতারু ফু ইউয়ানহুইকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে ৪০০ মিটার রিলেরেসের পরে তিনি তার পেটে হাত দিয়েছিলেন কেন? তিনি বলেছিলেন: ‘আমার মনে হয় আমি আজ ভাল সাঁতার কাটতে পারিনি। গত রাতে মাসিক শুরু হয় এবং সত্যিই আমি ক্লান্ত।’
উইমেন হেলথ, লায়নেস এবং চেলসিএফসি ফুটবল প্লেয়ার ফ্রাঁ কিরবি একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন যে তার দল তাদের মাসিক চক্র ট্র্যাক করে এবং এটিকে অনুসরণ করেই প্রশিক্ষণের জন্য “ফিট ফর উইমেন” নামে একটি মনিটরিং অ্যাপ ব্যবহার করে।
অলিম্পিক হকি স্বর্ণপদক জয়ী স্যাম কুইক বিবিসি স্পোর্টসকে বলেছিলেন, তিনি ফোনে একটি অ্যাপ ব্যবহার করেন যা তার হৃদস্পন্দন, তার প্রস্রাবের রঙ, তিনি কত ঘণ্টা ঘুমিয়েছিলেন, তার পেশীতে ব্যথা ছিল কিনা এবং এটি তার মাসিকের প্রথম দিন কিনা তার রেকর্ড রাখবে।
ইংলিশ ইনস্টিটিউট অফ স্পোর্ট ম্যানচেস্টার সিটি, নারী অ্যাথলেটসদের নিয়ে একটি গবেষণা করছে। এতে হরমোনিক্স নামের প্রযুক্তি ব্যবহার করে খেলোয়াড়দের হরমোনের মাত্রার তথ্য সংগ্রহ করে। গবেষণাটি নারী অ্যথলেটসদের মাসিক চক্র কীভাবে তাদের স্বাস্থ্য এবং কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে সে সম্পর্কে অনুসন্ধান করছে।
ফুটবলার স্টিফ হাউটন বলেছেন, এই গবেষণায় অংশ হয়ে আমি আনন্দিত। মাসিক সবসময়ই একটি নিষিদ্ধ বিষয়। কিন্তু এটা হওয়া উচিত নয় কারণ এটা নারীদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বিশেষ করে যারা পেশাজীবী।