ঘি-বাটার-মিষ্টান্নের ওয়ান উইম্যান আর্মি আইনজীবী নুরজাহান মুন্না
দুধ জ্বাল করে ঘি বাটার তৈরি এছাড়াও নানা মিষ্টান্ন একা হাতে তৈরি করে ফেসবুকের মাধ্যমে বিক্রি করেন চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী নুরজাহান মুন্না ইসলাম। ঘরে বসেই মিষ্টান্ন তৈরি থেকে বিক্রির প্রক্রিয়ার সব কাজ একা হাতেই করেন তিনি। কাঁচাগোল্লা, মালাইচপ, নলেনগুড়ের সন্দেশ, গোলাপ জাম, কালো জাম, রসগোল্লা পুরো এক মিষ্টান্ন ভান্ডারের কাজ করেন একা হাতে। ওয়ান ম্যান আর্মি সিনেমায় হয় কিন্তু এটি এক সত্যিকারের ওয়ান উইম্যান আর্মি।
লকডাউনে টানা ৬ মাস আদালত বন্ধ ছিল। কী করবেন ভাবছিলেন চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী নুরজাহান মুন্না ইসলাম। মায়ের কাছ থেকে শিখেছিলেন কীভারে দুধ থেকে ঘি তৈরি করতে হয়। জানতেন নানা মিষ্টান্ন তৈরির রেসিপিও। সেই ভাবনা থেকেই ফেসবুকে তিতাসকন্যা নামে একটি পেজ খুলেন। সেই থেকে তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি একবারও।
কাঁচাগোল্লা, মালাইচপ, নলেনগুড়ের সন্দেশ, গোলাপ জাম, কালো জাম, রসগোল্লা, স্পঞ্জ মিষ্টি, সন্দেশ, আপেলসন্দেশ সরের ঘি, আনসল্টেড বাটার, মোজারেলা চিজসহ বিভিন্ন মিষ্টি নিজ হাতে তৈরি করে বিক্রি করেন তিনি। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকার মিষ্টান্ন পণ্য বিক্রি করেছেন। কেবল বাটার বিক্রি করেছেন প্রায় ৮০ কেজির মত।
উইম্যান ভয়েস প্রতিবেদকের আলাপচারিতায় এসব তথ্য জানিয়েছেন আইনজীবী ও নারী উদ্যোক্তা নুরজাহান মুন্না ইসলাম।
ঘি-বাটার-মিষ্টান্ন ব্যবসা কীভাবে শুরু?
এ প্রশ্নের উত্তরে অ্যাডভোকেট নুরজাহান মুন্না ইসলাম বলেন, ‘মায়ের কাছে শিখেছিলাম কীভাবে সর থেকে ঘি তৈরি করতে হয়। মিষ্টি তৈরির নানা কৌশল শিখেছিলাম মায়ের কাছেই। নিজের ও পরিবারের জন্য তৈরি করলেও ব্যবসায়িক চিন্তাটি ছিল না। লকডাউনে আদালত একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভাবছিলাম কী করা যায়? তখনি ভাবনাটা আসে। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে তিতাস কন্যা নামের পেজটি খুলি।
শুরুতেই কী ভালো সাড়া পেয়েছিলেন?
অ্যাডভোকেট নুরজাহান মুন্না: অনেকটাই তেমন। আমি যতটা ভাবিনি ততটাই অর্ডার ছিল মিষ্টান্নের। ঘরে তৈরি খাবারের প্রতি মানুষের আস্থা বেশি সেটা বুঝতে পেরেছিলাম তখনই। এখন প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছি মানুষের আস্থাটাই আমাকে আরও উদ্বুদ্ধ করেছে।
সব কাজ কী নিজের হাতেই করেন?
হ্যা বেশিরভাগ কাজই নিজের হাতে করতে হয়। যেমন ধরুন বাটার তৈরির কাজটা কৌশলের, ঘি তৈরির সময় প্রতিনিয়ত চামচ ঘুরাতে হয় ও তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এসব কাজ সাহায্যকারীর হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না।
আইন পেশা ও মিষ্টান্ন তৈরি ব্যালেন্স কীভাবে করেন?
আমি কাজ করি প্রি-অর্ডারের ভিত্তিতে। তাৎক্ষণিক কোন অর্ডার নিই না। রাতে কোন ডেলিভারি দিইনা। এটা আমার ব্যালেন্স করার প্রথম পদক্ষেপ। আদালত থেকে বাসায় ফিরি ৫টার দিকে। অর্ডার থাকলে ওই সময় থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করি। সাধারণত আমি অর্ডার পাওয়ার ২-৩ দিন পর ডেলিভারি করি।
এ পর্যন্ত কত টাকার মিষ্টান্ন বিক্রি করেছেন?
এক বছরে আমি শুধু বাটার বিক্রি করেছি ৮০ কেজির মত। লাভের অংক আমি হিসেব করিনি। তবে বিক্রি প্রায় ১০ লাখ টাকা। প্রথমে ইনভেস্ট করার পর আমাকে আর নতুন করে ইনভেস্ট করতে হয়নি। লাভের টাকা দিয়ে আমার ইনভেস্ট করি। মাসে কম বেশি ৫০ থেকে ১ লাখ টাকার বিক্রি হয়।
নতুন নারী উদ্যেক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
এ বিষয়ে প্রথমে বলতে চাই হুজুগে সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবসা করা উচিত নয়। যে কোন পণ্য নিয়ে কাজ করলে সে পণ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়ে কাজে নামা উচিত। যেমন পণ্যটির বাজারে চাহিদা ও লোকাল মার্কেটের সাথে প্রতিযোগিতার ব্যপার থাকে। সফলতার কোন সরাসরি গেটওয়ে নাই। পরিশ্রম করতে হয়।