আপ্পি ১
হাই আপ্পি। আস সালামু আলাইকুম। আপনার বাগানের ছবি দেখে পাগল হয়ে যাচ্ছি আপ্পি। কী সুন্দর শসা, লাউ, করলা! টমেটোর ছবি দেখে তো আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ। মাশাল্লাহ আপ্পি।
কিন্তু…. ইয়ে…. বলছিলাম কি, আপনি না একজন ডাক্তার?
দিন নেই, রাত নেই ক্লাস, লাইব্রেরি, বোরিং টেক্সট বই, হাসপাতাল সব মিলিয়ে কতো কষ্টই না করেছেন সাতটি বছর। এখন মনে হচ্ছে করলা চাষেই জীবন সঁপে দিয়েছেন!
আপ্পি ২
আপ্পি। আপনি একটা নাকী জাদুকর! রান্নার জাদুকর। আপনার রান্নার ছবি দেখলে আমার মাথা নষ্ট হয়ে যায়! বাবারে বাবা….! দেশি-বিদেশি, নতুন-পুরনো কোন রান্নাটা আপনি করেন না বলেন তো? অসাধারণ, দুর্দান্ত। কী বলব আপ্পি, ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
কিন্তু বলছিলাম কি আপনি তো আইন বিভাগের দুর্দান্ত ছাত্রী ও ছিলেন?
পেশাজীবনের প্রথম কয়েকবছরে খুব ভালো কাজও করেছিলেন। তারপর কী হয়ে গেলো আপনার? আইনের বই অবশ্য মালাইকারির রেসিপির মতো মুখরোচক নয়, তাই বলে নিজের এত বছরের ডেডিকেশন সব এরকম চুলায় বিসর্জন দিলেন?
আপ্পি ৩, অথবা ভাব্বি…
ওহ ভাবি, আপনার বাচ্চাগুলো কি মানুষ? আমার তো মনে হয় ওরা উন্নত প্রযুক্তির রোবট! এতো গুণী বাচ্চা কী করে হয় ভেবে পাই না। তাও আবার সবকটা বাচ্চা এমন মেধাবী! নান্টুর গান, মন্টুর কবিতা, ঝন্টুর নাচ- কী বলবো ভাবি, ফেসবুকে প্রতিদিন ওদের তিনটা ভিডিও না দেখলে মনেহয় দিনটা মাঠেই মারা গেলো!
তবে ভাবি, বলছিলাম কী, আপনিও একদিন গান গাইতেন, কবিতা আবৃত্তি করতেন। সেসব এখন কোথায় গেলো?
বছরের পর বছর ধরে গলা সেধে এখন তিনবছরের বাচ্চাকে দিয়ে বেমানান কঠিন গান একটা গাওয়ানোতেই আপনার শিল্পীমন খুশি হয়?
১,২ ও ৩ আপ্পি ও ভাবিরা
জানি, জানি, আপনারা রেগে গেছেন। এইতো তেড়ে আসবেন গালি দিতে। মহা আধুনিক সেজে আমাকে নসিহত করবেন আপনাদের চয়েস, আমার কি!
তাতে আমার কী জানতে চান?
আমি কন্যা সন্তানের মা। আমি আমার কন্যাদের বড় বড় স্বপ্নের কথা যখন বলি তখন ওরা আপনাদের বাগানের করলা, টেবিলের মালাইকারি, আর নান্টুর ছড়াগান দেখে ভাবে কী দরকার ডাক্তার, লইয়ার হয়ে।
রান্না, বাগান, বাচ্চা পালা ছাড়া আপনার একটা পরিচয় ছিল, প্লিজ ভুলে যাবেন না!
প্রসংগ, উচ্চশিক্ষা ও পেশায় এগিয়ে যাওয়ার পরও অধধিকাংশ নারী নিজের পছন্দে তার পেশা ছেড়ে দিয়ে সংসার গোছাতে চান পরিপাটি গৃহিণী হতে চান। নারী নিজের পছন্দে এমন অদ্ভূত জীবন বেছে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিদ্রুপাত্মক রম্য রচনা করেছেন লেখক নাহিদ খান।