নিজের শরীর সম্পর্কে জানেননা দেশের অর্ধেকের বেশি সংখ্যক নারী। জরায়ুর অবস্থান, যোনি, ঋতুস্রাব কেন হয়, মেনোপজ কী এসব প্রশ্ন নিয়ে ভারতে চালানো এক সমীক্ষা এমনই তথ্য দিচ্ছে। সমীক্ষায় দেখা গেল পঞ্চাশ শতাংশ নারীরা জানেন না তাদের জরায়ু বা ইউটেরাস কোথায়? মাসিক কেন হয়, মেনোপজই বা কী— যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে কেবল ১০ শতাংশ নারী প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে সঠিক ডায়াগ্রাম বা সঠিক চিত্র চিহ্নিত করতে পেরেছন।

ভারতে চালানো প্রজনন ও যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন এ জরিপে ২০০০ নারীকে নিজের শরীরে থাকা প্রজনন ব্যবস্থা সম্পর্কে তারা কি জানেন তা ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। দেখা যায় অনেক নারীই নিজের শরীর সম্পর্কে যা কিছুই জানেন না অথবা তাদের জানাতে রয়েছে বিরাট ভুলের খাঁদ। এ সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন নারী যোনিকে ভুলভাবে চেনেন এবং ৪৬ শতাংশ নারী জরায়ুকে শনাক্তই করতে পারেননি। ওই সমীক্ষার অর্ধেকেরও বেশি (৫৯ শতাংশ) নারী আবার জরায়ুকে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন ও আলাদা অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ভারতের ইনটিমিনা এবং ওয়ানপল পরিচালিত ওই সমীক্ষাটিতে অংশগ্রহণকারী নারীদের মাসিক-চক্র নিয়ে নিজেদের মত করে বক্তব্য দিতে বলা হয়।
তাদের মধ্য থেকে একজন অংশগ্রহণকারী নারী মাসিক চক্রকে ব্যাখ্যা করেছেন একটি রোগ হিসেবে। তার কথায় মাসিক চক্র হল ‘ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্তির জন্য শরীরের ধারাবাহিক কাজ’। অন্য এক নারী বললেন ‘আমার মনে হয় পিরিয়ড প্রস্রাব করার মতই কিছু একটা।’ একজন বললেন ‘পিরিয়ড শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেওয়ার একটা মাধ্যম’।
অংশগ্রহণকারীরা যখন মাসিক-চক্রের বিভিন্ন সম্ভাব্য সংজ্ঞা উপস্থাপন করছিলেন তখন প্রায় এক চতুর্থাংশের বেশি নারীরা মাসিক রক্তক্ষরণের বিষয়ে ভুল প্রক্রিয়া বেছে নিয়েছিলেন। তবে আশার কথা হল— ৬৩ শতাংশ নারী সম্ভাব্য গর্ভাবস্থার প্রস্তুতি হিসেবে নারী শরীরের মধ্যে ‘মাসিক চক্র’ ঘটে। ৬৩% অংশগ্রহণকারী এটা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন।
ওই সমীক্ষায় মাসিকচক্র ছাড়াও মেনোপজ নিয়ে প্রশ্ন করলেও নারীরা এর বিভ্রান্তিকর উত্তর দেন। প্রতি দশজন নারীর মধ্যে একজন নারী মনে করেন, মেনোপজ হলো ৪০ বছর বয়সে প্রবেশ করা। ১৩% নারী এমনভাবেও ভেবেছেন যে মেনোপজ হলো পিরিয়ড আর না হওয়া। ওই জরিপে ৫৭% নারী স্বীকার করেন তারা তাদের নিজেদের শরীর বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না। ৪২% নারী ভাবেন প্রজননের বিভিন্ন অঙ্গগুলো কি কাজ করে তা সম্পর্কে তাদের ভাল ধারণা আছে।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া এক তৃতীয়াংশের বেশি (৩৫ শতাংশ) নারী জানতে চান প্রজননের জন্য কোন সময়টা উপযুক্ত? ১০ জনের মধ্যে তিনজন নারী (২৯%) গর্ভাবস্থার বিভিন্ন সময় সম্পর্কে জানতে চান। নিজেদের শরীর সম্পর্কে নিজেদেরই কেন ধারণা নেই এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া নারীদের মধ্যে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন (৩৬ শতাংশ) নারী তাদের অজ্ঞতার জন্য শিক্ষাকে দায়ী করেছেন। এরমধ্যে কিছু অংশ (২৭%) নারী তাদের মা-বাবা, পরিবারকে দায়ী করেন। আবার কিছু নারী (২৪ শতাংশ) দায়ী করেছেন ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে।
শরীরবৃত্তীয় বিষয়ের অজ্ঞানতার জন্য নারীরা দায়ী করেন যাদের
শিক্ষক ৩%
পিতা-মাতা ২৮%
সরকারি শিক্ষার মান ২%
ধর্মীয় সংগঠন ২৪%
ভাইবোন ১%
বাল্যকালের শিক্ষা ১১%
তারা স্বীকার করেছেন জ্ঞানের এই অভাবগুলো বাস্তব জীবনেও প্রভাব ফেলে। অর্ধেকেরও বেশি অংশগ্রহণকারী নারী মনে করেন তাদের এই জ্ঞানের অভাবই নিজেদের চিকিৎসকের কাছে যেতেও বাধা দেয়।জরিপে আরও দেখা যায় (৫৪ শতাংশ) নারীরা প্যাড বা ট্যাম্পুন ছাড়া পিরিয়ডে আর কোন স্বাস্থ্যকর পণ্য ব্যাবহার করা যায় বলে তারা মনে করেন না।
নারীরা যেসব বিষয় সম্পর্কে আরও জানতে চান
প্রজননের বিভিন্ন অঙ্গগুলোর কাজ কী ৪২ শতাংশ
মেনোপজ এবং পেরিমেনোপজ ৩৮ শতাংশ
প্রজননের জন্য কোন সময়টা অধিক উপযুক্ত ৩৫ শতাংশ
প্রজনন তন্ত্র কীভাবে কাজ করে ৩১ শতাংশ
গর্ভাবস্থার পর্যায় -২৯ শতাংশ
মাসিক-চক্র ১৮ শতাংশ
বয়ঃসন্ধি- ৪ শতাংশ
ইনটিমিনার গ্লোবাল ব্রান্ড ম্যানেজার ড্যানেলা জাগার মন্তব্য করেছেন, ‘সমীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রতি চারজনের মধ্যে একজন নারী (৪৬ শতাংশ) তাদের যোনি ঠিক কোথায় ডায়াগ্রামে তা চিহ্নিত করতে পারেন নি। অনেকে আবার যোনিকে ভুলভাবে চিহ্নিত করেন।
এদিকে সমীক্ষার আয়োজনকারীরা বলেছেন, প্রজনন ব্যবস্থা, মাসিক-চক্র এবং হরমোনজনিত পরিবর্তনগুলো মেয়েদের জীবনে কী প্রভাব ফেলতে পারে সে সম্পর্কে জনগণকে আমাদের শিক্ষিত করতে হবে।
নারী তার শরীরের প্রজনন অঙ্গগুলো কীভাবে কাজ করে তা বোঝে শুধুমাত্র সম্ভাব্য স্বাস্থ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে।
২০২০ সালে এসেও মেয়েরা তাদের যৌন অঙ্গ ঠিকভাবে চেনেনা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পিরিয়ড ও নিজেদের শরীর সম্পর্কে ঠিক যতটা জানা দরকার ততটা জানে না। তাই মেয়েরা নিজের যত্নও নিতে পারে না।
মেট্রো পত্রিকাতে প্রকাশিত লেখাটির ভাবানুবাদ করেছেন ফাতিমা অ্যানি