স্কুলের সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক জয়নাল। নানা বাহানায় ছাত্রীদের গায়ে হাত দেওয়া, নোংরা কথা বলা ও বাজে প্রস্তাব দেওয়া তার নিত্যকার স্বভাব। লোকলজ্জার ভয়ে এতদিন মুখ খোলেনি কেউ। কেউ কেউ দিয়েছিলেন অভিযোগও।
স্থানীয় প্রভাবে বারবার পার পেয়েছে জয়নাল। ১ বছর আগে এক ছাত্রীর অভিভাবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাময়িক বরখাস্ত হলেও দমে যায়নি জয়নাল। ক্লাসে বাড়তি সময় পড়ানোর নাম করে ভিকটিম ছাত্রীর সাথে নোংরা আচরণ করে জয়নাল। এ ঘটনা বারংবার ঘটতে থাকায় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া কিশোরী। একসময় জানতে পারেন ভিকটিম ছাত্রীর অভিভাবকও। শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) ভিকটিম ছাত্রীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা হয় জয়নালকে।
ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের মহেশখালীতে। জয়নাল দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষকতার আড়ালে যাত্রীদের যৌন হয়রানি করে আসছিল। ভয় ও লজ্জায় অনেক ছাত্রী জানায়নি অভিভাবককেও। অভিযুক্ত জয়নাল আবেদীন খাঁন হোয়ানক ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আবদুল মাবুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক। তার নিজ বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার কৃষ্ণপুরের খুরুইল গ্রামে।
ভিকটিম ছাত্রীর মা বলেন, ‘জয়নাল ২০১৯ সনের ১৬ ও ১৭ অক্টোবর আমার সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া কিশোরী মেয়েকে স্কুলে বাড়তি সময় পড়ানোর কথা বলে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করে। আমার মেয়ে আমাকে বলার পর একই বছর ১৯ অক্টোবর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরাবর লিখিত অভিযোগ করি। ঐ সময় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষক জয়নালকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়ে। ওই সাময়িক বহিস্কার নামের হালকা শাস্তিতে তার বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এদিকে ঐ শিক্ষক স্কুল খোলার পর আবারও শ্রেণিকক্ষে পড়ান ওবর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ান। ওই ঘটনার পর থেকে আমার মেয়ে মানসিক ভাবে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
উইম্যানভয়েসবিডি প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষক জয়নাল কিশোরী মেয়েদের নানাভাবে যৌন হয়রানি করে। শিক্ষকতা পেশায় থাকায় তার এ কাজে বিশেষ সুবিধে হয়। এই অভিযুক্ত জয়নালের বিরুদ্ধে একবছর আগে অভিযোগ আসার পরও তার বিরুদ্ধে আইনি কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কারণ যৌন হয়রানি করা এই জয়নালের মাথার উপর আছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি গ্রুপের আশির্বাদ। তাই সে বারবার অপকর্ম করেও পার পেয়ে যায়। অনেক শিক্ষার্থী তার নোংরামোর শিকার হলেও কোন শিক্ষার্থী মুখ খুলতে সাহস পায়নি। আগেও কয়েকজন ছাত্রী এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল। কিন্তু ঐ প্রভাবশালী মহলটি চাপ প্রয়োগ করে তা ধামাচাপা দেয়। অতিষ্ঠ হয়ে অনেক ছাত্রী ছাড়পত্র নিয়ে স্কুল ত্যাগ করে অন্য স্কুলে চলে যায়। তবুও শেষ পর্যন্ত কোন বিচার হয়নি এই জয়নালের বিরুদ্ধে।
এদিকে ওই শিক্ষক গ্রেপ্তার হওয়ার পর স্কুলটির আরো ৩/৪ জন ছাত্রীর অভিভাবক অভিযোগ নিয়ে থানায় গিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল মাবুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক জয়নাল আবেদীন খাঁনের ব্যাপারে ছাত্রীর অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে পরবর্তী প্রক্রিয়া চলমান। ম্যানেজিং কমিটির প্রভাবশালী কিছু সদস্য জয়নালের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছে অন্যরা। ’
এ বিষয়ে মহেশখালী থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, ‘ভিকটিম ছাত্রীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ৩০ অক্টোবর সকাল ৮টায় উপজেলার হোয়ানক থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক জয়নাল আবেদীন খাঁনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়াও চলমান।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৮ মে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার পাশে একতলা ভবনের একটি কক্ষে ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন পরিমল। এ ঘটনায় একই বছরের ৫ জুলাই ওই ছাত্রীর বাবা বাড্ডা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলার পর প্রায় চার বছর ধরে বিচারকাজ চলার পর ২০১৫ সালে মামলার রায়ে যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল পরিমলের।
এসএমআর/মহেশখাালী