শারীরিক সম্পর্ক স্ত্রীর বা স্বামীর সাথে হলেও অনুমতি নিতে হবে। পৃথিবীর প্রায় ১৫৩টি দেশে অনুমতি ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক স্ত্রীর সাথে হলেও সেটি ধর্ষণ বলে গণ্য করা হয়। তবে বাংলাদেশের আইন অনুসারে এটি এখনও অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না। টাঙ্গাইলের স্বামীর উপর্যুপরি শারীরিক সম্পর্কের জেরে এক কিশোরীর মৃত্যুর পর বাংলাদেশে এটি আলোচিত ঘটনা। স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক কেন ধর্ষণ নয় তা জানতে চেয়ে চার সংস্থার দায়ের করা রিট শুনানিতে আজ মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেছেন।
নারী ও ১৩ বছরের ঊর্ধ্বে কিশোরীদের বৈবাহিক ধর্ষণ অনুমোদনকারী আইন কেন বহাল থাকবে ও সংশ্লিষ্ট দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা কেন সংশোধন করা হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আইন সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চারটি সংস্থার রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানিতে মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, জেনিফা জব্বার ও শারমিন আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
এর আগে গত ১ নভেম্বর বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ব্র্যাক, নারীপক্ষ এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এ চার সংগঠনের পক্ষে ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার রিট করেন। সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নারী ও ১৩ বছরের বেশি বয়সী কিশোরীদের বৈবাহিক ধর্ষণ অনুমোদনকারী আইন যা বৈষম্যমূলক এবং বিবাহিত নারী ও কিশোরীদের মৌলিক অধিকার সমতা, বৈষম্যহীনতা, আইনের সুরক্ষা, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকারের সুরক্ষা ক্ষুণ্ন করে, তা কেন বাতিল হবে না এবং এই আইনগুলো বাতিল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রিট আবেদন করা হয়।
দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কিত ব্যতিক্রম দফা এবং এ সংশ্লিষ্ট দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১) ধারা, যেগুলো বিবাহিত নারী ও কিশোরীদের (১৩ বছরের উর্ধ্বে) স্বামীর মাধ্যমে ধর্ষণের বিচার পাওয়ার অধিকার ক্ষুণ্ন করে। এসব ধারা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি দায়ের হয়। টাঙ্গাইলের ঘটনার বিবরণী উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৫ অক্টোবর টাঙ্গাইলের চৌদ্দ বছরের এক কিশোরী মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মারা যান। সংযুক্ত আরব আমিরাত ফেরত ৩৪/৩৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে গত ২০ সেপ্টেম্বর তার বিয়ে হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় বিয়ের প্রথম রাত থেকেই ওই কিশোরীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ধর্ষণ আইন সংস্কারের দারিতে রেইপ ল’ রিফর্ম কোয়ালিশনের ১০ দফা দাবির বিভিন্ন পর্যায়ে তুলে ধরা এবং জোরপূর্বক যৌনমিলনের ফলে অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে বিবাহিত কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনা এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কিত জাতীয় সমীক্ষায় (২০১৫) জানা গেছে যে, ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বিবাহিত নারী প্রতিনিয়ত তাদের স্বামীর মাধ্যমে যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, যার মধ্যে জোরপূর্বক যৌনমিলন অন্তর্ভুক্ত।
এমন পরিস্থিতিতে বিবাহিত নারী ও কিশোরীদের (১৩ বছরের ঊর্ধ্বে) সাংবিধানিক মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য চারটি মানবাধিকার সংস্থা ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন সংস্কার করে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার নির্দেশনা চেয়ে এ রিট করা হয়।