করোনাকালে অনেকেই ঘরে বসে কাজ করতে পারছেন ইন্টারনেট আছে বলে। তিন ডব্লিউর এই ওয়েব আছে বলে তথ্য এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। অপরদিকে ইন্টারনেটের বদৌলতে আমরা প্রভা মিথিলার ন্যুড দেখতে পাই। নারীদের ইনবক্সের আদারবক্সে গালিগালাজ দেখি। তাহলে নারীর জন্য ইন্টারনেট কী?— সাইবার বুলিয়িং, হুমকি, ন্যুড ছবি প্রকাশ, ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে হয়রানি করার একটি সচল মাধ্যম।
‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব নারীর জন্য নয়। অনলাইন কেবল নারীদের হয়রানি এনেছে। এটি জেন্ডার সমতার জন্য প্রত্যক্ষ একটি বাধা। বিশ্বব্যাপী নারীর অগ্রগতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে অনলাইন হয়রানি।’— কথাগুলো বললেন ১৯৮৯ সালে ওয়াল্র্ড ওয়াইড ওয়েবের আবিষ্কারক প্রফেসর টিম বার্নার্স-লি। ইন্টারনেটের এ অপব্যবহার নিয়ে তার উৎকণ্ঠার কথা জানিয়েছেন খোলা চিঠিতে।
বার্নার্স-লির প্রতিষ্ঠান ওয়েব ফাউন্ডেশনের সমীক্ষায় দেখা গেছে, পৃথিবীর অর্ধেক নারী অনলাইনে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছে যৌন হয়রানি, হুমকি বার্তা এবং ব্যক্তিগত ছবি সম্মতি ছাড়া ছড়িয়ে দেওয়া। ৮৪ শতাংশ নারী বিশ্বাস করেন সমস্যাটি আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে।
২০১৭ সালে করা অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১১-১৮ বছর বয়সী প্রায় অর্ধেক নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ইউগভে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, যুক্তরাজ্যে প্রতি চারজনে একজন নারী অনলাইন বুলিয়িং এর শিকার হয়েছেন।
বার্নার্স-লি বলেন ‘আমি গুরুতরভাবে উদ্বিগ্ন যে ওয়েব আসলে কতটা বীভৎসরূপে নারীদের ঠিক মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। এটি আমাদের সবার জন্য দুশ্চিন্তার হওয়া উচিত। এ সময়ে, যখন করোনাভাইরাস অফিস এবং স্কুল বন্ধ করে দিচ্ছে তখন ওয়েব আমাদের একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়াল যে আমরা কাজ চালিয়ে যেতে পারি। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে স্বাস্থ্যকর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সমস্যা কেবল ডিজিটালাইজেশনের নয়। মানুষ ডিজিটাল হয়েছে কিন্তু মানুষ হয়নি। অনলাইন হয়রানি, যৌন নির্যাতন এবং হুমকির কারণে নারীরা অনেকেই বাধ্য হয়েছে স্কুল-কলেজ ছাড়তে, কাজ ছাড়তে এমনকী সামাজিক সম্পর্র্ক থেকেও সরে যেতে হয়েছে তাদের।’
তিনি বলেন, ‘ওয়েব আসলে নারীর জন্য কাজ করেনি। এসব সমস্যা দেখতে সরকার ও সাহায্যকারী সংস্থাকে আহ্বান করেছেন তিনি। না হলে এটি জেন্ডার সমতার স্বপ্ন বুমেরাং হবে। এমন একটি পৃথিবী আমরা চাই না যেখানে নারীরা তার ন্যুনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। ’
প্রসংগত, টিমোথি জন বার্নার্স-লি। জন্ম নিয়েছেন ১৯৫৫ সালের ৪ জুনে। তিনি একজন ইংরেজ প্রকৌশলী এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তিনিই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের আবিষ্কারক। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ফেলো। বার্নার্স-লি ১৯৮৯ এর ১২ মার্চ একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্য পরিচালনার ব্যবস্থার কথা প্রস্তাব করেছিলেন। এরপর ওই বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকলের (এইচটিটিপি) মাধ্যমে প্রথম সফল যোগাযোগকে সম্ভব করেছিলেন।
এসএস