পোল্যান্ডের আলোচিত একটি মামলায় গর্ভনাশে আগ্রহীদের গর্ভপাত পিল দিয়ে সাহায্য করার অপরাধে নারী অধিকারকর্মীকে দণ্ড দিল আদালত। সাজাপ্রাপ্ত অধিকারকর্মীর নাম জাস্টিনা ওয়াইড্রজিনস্কা। তিনি অ্যাবরশন ড্রিম টিম (এডিটি) এর সদস্য। এডিটি পোল্যান্ডে নারীর প্রজনন অধিকারের জন্য কাজ করে। অন্যদিকে পোল্যান্ডে গর্ভপাত বেআইনি কারণ পোল্যান্ডের আইন ক্যাথলিক ধর্মীয় বিশ্বাসে প্রভাবিত।
দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় জাস্টিনা ওয়াইড্রজিনস্কাকে পোল্যান্ডের আদালত আট মাসের কমিউনিটি সেবা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ, ২০২৩) আদালতের শুনানিতে জাস্টিনা ওয়াইড্রজিনস্কা বলেছেন, ‘আমি মনে করি না যে আমি একা আদালতের মুখোমুখি হচ্ছি। আমার পিছনে আমার সারথী এবং শত শত নারী রয়েছেন।’
এডিটির ফেসবুক পেজের ঘোষণা থেকে জানা যায়, জাস্টিনা আদালতে বলেন যে তিনি ঘরোয়া সহিংসতার শিকার নারীকে গর্ভপাতে পিল পাঠিয়েছিলেন। নারীটি তার গর্ভনাশ করতে সাহায্য চেয়ে ফোন করেছিলেন। ফোন পেয়ে অ্যাক্টিভিস্টরা উইড্রজিনস্কাকে জানালে তিনি তার বাড়িতে থাকা ওষুধ ওই নারীকে পাঠিয়েছিলেন।
জাস্টিনা বলেন, আমার ব্যক্তিগত ব্যবহার্য পিলগুলো আমি পাঠিয়েছিলাম যা এই মুহূর্তে পোল্যান্ডে গর্ভনাশ করার সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। আমি চাইনি যে ওই নারী বিপজ্জনক পদক্ষেপ নিয়ে তার জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলুক। নারীটি তখন পারিবারিক সহিংসতার শিকার ছিলেন। স্বামী তাকে গর্ভপাত করাতে জার্মানি যেতে বাধা দেয়। তাকে পিল পাঠালে সেটি ব্যবহারের পর ওই নারীর স্বামী আদালতে অভিযোগ করেন।
জাস্টিনা আরও বলেন, ‘আমরা শক্তিশালী। একসাথে আমরা আরও শক্তিশালী। আমরা কখনই এক অপরকে সাহায্য করা বন্ধ করব না। আমি কোন অপরাধ করিনি বরং এ ব্যপারে আমি দৃঢ় প্রত্যয়ী।
এ ঘটনায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মার্গোলিস বলেছেন, এমন আইন নারীর অধিকারের বিরুদ্ধে পোল্যান্ড সরকারের আক্রমণ। নারীর প্রজনন অধিকারের বিরুদ্ধে এমন রায় উদ্বেগজনক এবং আতঙ্কজনক। তিনি এ ব্যপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ দাবি করেন।
সেন্টার ফর রিপ্রোডাক্টিভ রাইটসের সিনিয়র আইন উপদেষ্টা কেইনা ইয়োশিদা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ প্রসিকিউশন পোল্যান্ডের মানবাধিকারকর্মীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করেছে। অধিকারকর্মীরা নারীর নারীর প্রজনন অধিকারকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাবেন। পোল্যান্ডের এমন নিষোধাজ্ঞাকে তারা চ্যালেন্জ করবেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, পোল্যান্ড প্রজনন অধিকারে নারীকে নিপীড়নের একটি হতাশাজনক অবস্থানে চলে গেছে। জাস্টিনাকে বিচার করা উচিত ছিল না কারণ তিনি যা করেছেন তা কখনই অপরাধ হওয়া উচিত নয়। জাস্টিনা সাহায্য চাওয়া নারীকে সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন। নিরাপদ গর্ভপাতের অধিকারের জন্য জাস্টিনা সাহস দেখিয়েছিলেন। এ রায় বাতিল করতে হবে।
উল্লেখ্য, মাল্টার মতো পোল্যান্ডের গর্ভপাত বিরোধী আইন ইউরোপের সবচেয়ে বিধিনিষেধে ঠাসা। এটি শুধুমাত্র বিবাহবহির্র্ভত সম্পর্ক, ধর্ষণ বা মায়ের স্বাস্থ্য ঝুঁকির ক্ষেত্রেই গর্ভনাশের অনুমতি দেয়। সেখানে একজন নারীকে গর্ভপাত করতে সাহায্য করাও বেআইনি। কমিউনিস্ট শাসনামলে পোল্যান্ডে গর্ভপাতের সুযোগ অবাধে পাওয়া গেলেও ১৯৯৩ থেকে সুবিধাটি সীমিত হয়। পরে আরও বিধিনিষেধ যুক্ত হয়। সবশেষ ২০২১ সালের জানুয়ারিতে চালু হওয়া নিয়মানুসারে প্রক্রিয়াটিকে শুধুমাত্র ধর্ষণ বা বিবাহবিহীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বা গর্ভধারণের ঝুঁকির ক্ষেত্রে আইনি উপায়ে গর্ভপাত করা যায়। এ আইন অনুসারে গর্ভপাতে সাহায্যকারীদেরও অপরাধী বলে সাব্যস্ত করে।
অন্যদিকে ২০২১ সালে নতুন বিধিনিষেধ প্রণয়নের পর ২০২২ সালে এডিটি পোল্যান্ডের ৯ হাজারেররও বেশি নারীকে গর্ভপাত করতে সহায়তা করেছে। তবে এডিটি কর্মীরা পোল্যান্ডের আইনের সীমার মধ্যেই কাজ করে। তারা নেদারল্যান্ডস থেকে কীভাবে গর্ভপাতের ট্যাবলেট অর্ডার করতে হয় সে বিষয়ে নারীদের পরামর্শ দেয়, কারণ সেখানে ওষুধগুলো আইনত কেনা যায়। তবে এডিটি অধিকারকর্মীরা নিজেরা চিকিৎসা সেবা দেন না।