৬৭ বছর পর প্রথম কোন নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এ নারীর নাম লিসা মন্টেগোমারি। ১৬ বছর আগে তিনি ২০০৪ সালে এক তরুণীকে হত্যা করেন। হত্যার সময় ওই তরুণী অন্তসত্ত্বা ছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নারী লিসা মন্টেগোমারির স্বীকারোক্তি ও ডিএনএ টেস্টসহ অন্যান্য প্রমাণ সাপেক্ষে তাকে খুনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় বিচারক। তবে লিসার আইনজীবীরা দরখাস্ত করেছেন তিনি করোনায় আক্রান্ত ও সুস্থ হওয়া পর্যন্ত তাকে সময় দেওয়া হোক।এ মাসের ১২ তারিখেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে।
কী করেছিলেন লিসা মন্টেগোমারি?
২০০৪ সালে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল যখন বোবি জো স্টিনেটকে। তার গর্ভে ছিল আট মাসের কন্যাসন্তান। লিসা ছিলেন কুকুরপ্রেমী অন্যদিকে বোবি জো স্টিনেট নামের খুন হওয়া সেই মার্কিন তরুণী ছিলেন কুকরের ব্রিডার। অনলাইনে পরিচয় হয়েছিল দুই নারীর। তিনি কুকুর সম্পর্কে তথ্য নিতে যান বোবি জো স্টিনেটের কাছে। সেদিন বাড়িতে স্টিনেটের স্বামী ছিল না। হত্যার পর পালিয়ে যান লিসা। ৩ বছর পর তাকে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
ববি জো স্টিনেট কে ছিলেন?
যুক্তরাষ্ট্রের স্কিডমোরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত মিসৌরি শহরে বাস করতেন স্টিনেট। ওই সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর। তিনি ছিলেন বিবাহিত। তিনি পোষা কুকুরের ব্রিডার ছিলেন। তাকে দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর রান্নাঘর থেকে ছুরি এনে তার গর্ভ থেকে কেটে বাচ্চাকে বের করা হয়েছিল। এটি ছিল নৃশংস একটি খুন। যদিও ওই গর্ভের শিশুটি অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়।
কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল?
সেদিন স্টিনেটের সারা ঘর জুড়ে ছিল রক্ত আর রক্ত। স্টিনেটের নিথর দেহটি মনে হচ্ছিল যেন রক্রে পুলে ভাসা একটি শরীর। খুনী মন্টগোমেরি স্টিনেটকে গলা টিপে হত্যা করার জন্য একটি দড়ি ব্যবহার করেছিলেন এবং তারপরে ছুরি দিয়ে গর্ভ থেকে সরিয়ে নেয় শিশুটিকে। স্টিনেটের কন্যা মৃত মায়ের পেট কেটে বের হলেও বেঁচে যায়। স্টিনেটের আইনজীবীরা জানিয়েছেন যে হত্যাকারী নারী শিশুটিকে তার সাথে নিয়ে গিয়েছিল এবং মেয়েটিকে তার নিজের মতো করে বড় করার চেষ্টা করেছিল।
লিসা মন্টগোমেরি আক্রমণের আগে অনলাইনে ঘরে শিশুর জন্ম এবং কীভাবে বাসায় সিজারিয়ান করতে পারেন সেগুলি নিয়ে গবেষণা করেছিলেন।
বাচ্চাটির কী হয়েছিল?
তদন্তকারীরা যখন কানসাসের মন্টেগোমেরির ফার্মহাউসে পৌঁছেন তখন তারা দেখেন তার ঘরে একটি নবজাতক রয়েছে। ডিএনএ টেস্টিং শিশুর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর এবং পুলিশ মন্টগোমেরিকে খুনের জন্য চার্জ করে। অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া ওই শিশু এখন ১৬ বছরের কিশোরী ভিক্টোরিয়া।
লিসা মন্টগোমেরি কি মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন?
মন্টগোমেরির আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে তাদের ক্লায়েন্ট গুরুতর মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন। লিসা তার প্রথম দিকের শৈশবকালীন যে ভয়াবহতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি সৎপিতার মাধ্যমে দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। তার নিজের মা তাকে পুরুষদের কাছে বিক্রি করত। তিনি অনেকবার গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।
লিসার আইনজীবী স্যান্ড্রা বাবকক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কেউ লিসাকে সাহায্য করেনি। ভালোবাসেনি। যদিও আশপাশের অনেকেই জানত যে তার সাথে কী হচ্ছে। অন্য কোনও নারীকে একই ধরনের অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি কারণ বেশিরভাগ প্রসিকিউটররা স্বীকার করেছেন যে এটি অনিবার্যভাবে ট্রমা এবং মানসিক অসুস্থতার ফসল। লিসা মন্টগোমেরিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে আরেকটি অন্যায়।
লিসা মন্টেগোমেরি মৃত্যুদণ্ড কখন কার্যকর করা হবে?
তার মৃত্যুদণ্ডের তারিখটি প্রথমে ৮ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল, তবে তার আইনজীবীরা তার করোনভাইরাস হয়েছে এমন আবেদন করার পরে সেটির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ জানুয়ারিতে মন্টেগোমেরি এখন ৫২ বছর বয়সী।